ডিআরএস না মেনে ধোনিরা ক্রিকেটবিশ্বের কাঠগড়ায়
দু’টো দুই ভিন্ন জগতের ব্যাপার হয়েও লোকপাল বিল এবং ডিআরএস পদ্ধতির মধ্যে মিল কী?
উত্তর খুব সহজ। একটা ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের কাঁটা। অন্যটা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। লোকপাল বিলের অনুমোদন নিয়ে যেমন অণ্ণা হজারেরা সরাসরি সরকারের মনোভাবের অস্বচ্ছতা এবং অনিচ্ছার কথা রাষ্ট্র করছে, তেমনই ডিআরএস পদ্ধতিতে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের খেলতে রাজি না হওয়া নিয়েও প্ররোচনামূলক নানা মন্তব্য এবং নির্দিষ্ট প্রচার বাকি ক্রিকেটবিশ্বের থেকে আসছে। মঙ্গলবার যেমন সচিন-দ্রাবিড়ের এমন রোম্যান্টিক পার্টনারশিপের মধ্যেও এমসিজি-তে ডিআরএস নিয়ে ভারতকে খোঁচা অব্যাহত থেকে গেল। টিভিতে সিডলের নো বল দেখে বোল্ড হওয়া দ্রাবিড়কে ফেরানো নিয়ে টনি গ্রেগ রীতিমত উষ্মা প্রকাশ করলেন।
“যারা টিভি আম্পায়ার চায়নি। হটস্পট নেয়নি। সিরিজে এগুলো কিছুই নিতে দেয়নি, তারা কেন টিভি থেকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সুযোগ পাবে?”
গ্রেগরা ভারতের প্রতি রাগে আপাতত এতই অন্ধ যে মনে করতে পারছেন না আজ সকালে ব্র্যাড হাডিন আউট হওয়ার পরেও একই ভাবে টিভিতে জাহিরের ফলো থ্রু পরীক্ষা করা হয়। আম্পায়াররা হাডিনকে বলেন, চলে না যেতে। পরে যখন দেখা যায় জাহিরের ডেলিভারি আইনসঙ্গত, আবার হাডিনকে আউট ঘোষণা করা হয়।
হাসি এবং কাওয়ান প্রথম দিনের দু’টো আউটের জের এমন ভাবে অস্ট্রেলীয় মিডিয়ায় চলছে যে মনে হতে পারে, কেবল ওই দু’টো ত্রুটিই প্রতিযোগিতা থেকে মাইকেল ক্লার্কদের পিছিয়ে দিচ্ছে। চ্যানেল নাইন হঠাৎ এ দিন এখানে খেলা হওয়া বিতর্কিত সব সিদ্ধান্তের ছবি সবিস্তার বারবার দেখাতে শুরু করল। সবচেয়ে বেশি দেখানো হল ১৯৮১-তে এই মাঠেই লিলির বলে এলবিডব্লিউ ঘোষিত সুনীল গাওস্কর যে চেতন চৌহানকে নিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে আসছেন। মার্ক নিকোলাসমার্ক টেলররা যা দেখে বারবার বললেন, “ডিআরএস তখন থাকলে এই সব অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হত না। ভারত বোঝো।” গাওস্করের সেই তিরিশ বছর আগের সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা আর কৌতুক। সৌরভ সামনের টিভিটার দিকে চোখ পড়ায় অস্ফুটে বলেই ফেললেন, “বাহ্ লোকটা এখানে আসেনি বলে যা খুশি বলে যাচ্ছে?”
সৌরভ নিজে ডিআরএসের তীব্র বিরোধী এবং ভারতীয় বোর্ডের পক্ষে। চার বছর আগে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে তিনি অবশ্য মেন্ডিসের বলে এমন আউট ঘোষিত হন যা তাঁর মতে ডিআরএস ভুল দিয়েছিল। সৌরভদের বক্তব্য হল, হটস্পট ব্যাপারটা মোটেই ত্রুটিমুক্ত নয়। এ দিন ভারতীয় শিবির থেকে এমনও বলা হল, হটস্পট এত অপদার্থ প্রযুক্তি যে, গৌতম গম্ভীরের এ দিনের আউটে পরিষ্কার ব্যাটে বল লাগল সেটাও দেখাতে পারেনি।
ঘটনাচক্রে ভারতের সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বিরোধিতা উঠছে চ্যানেল নাইন বক্স থেকে। ভারতীয় শিবিরের বক্তব্য অনুযায়ী, এতে বাণিজ্যিক অভিসন্ধি মজুত আছে। প্যাকাররা চ্যানেল নাইন বিক্রি করে দেওয়ার পর সংস্থাকে এখন মিলিত ভাবে চালায় কয়েকটি ব্যাঙ্ক মিলে এক কনসর্টিয়াম। তারা খেলা দেখানোর ক্যামেরা এবং প্রোডাকশনজনিত নতুন যন্ত্রপাতি কেনায় প্রচুর টাকা লগ্নি করেছে। এ বার এই টাকা তুলতে চায়। সে জন্যই ভারতীয় বোর্ডের রাজি না হওয়াতে চ্যানেলের এত উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া। তাদের যে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।
চ্যানেল নাইন দাবি করছে, বাইশ গজে বল ট্র্যাকিংয়ের একশো তিরিশটা ফ্রেম এখন তারা দেখাতে পারে। প্রযুক্তিকে এমন আধুনিক জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছে। টনি গ্রেগ নাটকীয় ভাবে বললেন, “এত ঝকঝকে ক্যামেরার কাজ। এত নিখুঁত। তবু ভারত তুমি সুযোগ নেবে না? কেন নেবে না এ বার বলো।” আইপিএল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সুন্দর রামন আবার চ্যানেল নাইনের দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর কথা হল, “একশো তিরিশ ফ্রেম দিয়ে আমি কী করব? আমার একটাই মোক্ষম ফ্রেম চাই। বলটা ব্যাটে লাগল কি না পরিষ্কার সেই ফ্রেমটা। সেটা আমাদের বোর্ডের প্রোডাকশনে সবচেয়ে ভাল আসে।” এ দিন আম্পায়ার ডারেল হার্পার খেলা দেখতে এসেছিলেন। তিনিও ডিআরএসের বিরুদ্ধে জোর সওয়াল করে গেলেন।
ভারতীয় শিবির কি ডিআরএস বিতর্ক এই পর্যায়ে চলে যাওয়ায় নতুন করে ভাবছে? ইংল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়া, সবাই যে ভাবে এই ইস্যুতে অণ্ণা হজারের দলের মতো চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে বিশ্বক্রিকেটের শাসকদের ওপর তাতে নতুন পর্যালোচনা হবে? মঙ্গলবার ইন্ডোরের প্র্যাক্টিস সেরে বার হওয়ার সময় মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বলে গেলেন, “শ্রীলঙ্কায় এর জন্য ভুগেছি। একবার ইংল্যান্ডে ভুগেছি। রাহুল দ্রাবিড়কে কী খারাপ আউটটাই না দিয়েছিল।” কিন্তু এই যে অস্ট্রেলিয়া চিৎকার করছে আপনার নেওয়া দু’টো ক্যাচই আউট নয়। স্রেফ ফন্দিফিকিরে উইকেট নেওয়া? যা ডিআরএস থাকলে হত না। প্রশ্ন শোনামাত্র ধোনির মুখটা কঠিন হয়ে গেল। বললেন, “ওরা যে এত চিল্লাচ্ছে অতীতটা একটু হাতড়ে দেখবে কী?” ঢুকে গেলেন ড্রেসিংরুমে। পরে শুনলাম ওখানে এক সতীর্থকে বলেছেন, “হাসি আউট ছিল না ঠিক কথা। এক-আধটা ভুল হতেই পারে। হয়। কিন্তু বাঁ হাতিটা (কাওয়ান) পরিষ্কার আউট। এরা এত কথা বলছে কেন?” খুব স্বচ্ছলোকপাল বিলের মতোই স্পর্শকাতর, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সম-উত্তেজক হয়ে থাকল ডিআরএস।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.