নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ। গভীর নিম্নচাপ থেকে অতি গভীর নিম্নচাপ। বঙ্গোপসাগরের সেই অতি গভীর নিম্নচাপটিও আবার শক্তি বাড়িয়ে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। ‘থানে’ নামের ওই ঘূর্ণিঝড় মঙ্গলবার রাতে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। তার প্রভাবেই আন্দামানের আবহাওয়া গত তিন দিন ধরে ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। আন্দামান প্রশাসন সূত্রের খবর, খারাপ আবহাওয়ার জন্য হ্যাভলক এবং নীল দ্বীপে যথাক্রমে ৬০০ এবং ১৫০ জন পর্যটক আটকে পড়েছেন। ঝোড়ো হাওয়ায় কোনও জলযান চালানো যাচ্ছে না বলে ওই সব দ্বীপ থেকে তাঁদের ফিরিয়ে আনা যায়নি। পর্যটকদের বেশির ভাগই পশ্চিমবঙ্গের। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব ইন্দিবর পাণ্ডে এ দিন মহাকরণে বলেন, “আন্দামানের মুখ্যসচিব শক্তি সিংহের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, পর্যটকেরা সবাই নিরাপদে আছেন। বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া রয়েছে, তবে আতঙ্কের কারণ নেই।” কী ভাবে আটকে পড়া
পর্যটকদের পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “আন্দামানের ঘূর্ণিঝড়ের প্রত্যক্ষ কোনও প্রভাব আপাতত পশ্চিমবঙ্গে পড়ছে না। শুধু আকাশ মেঘলা থাকবে। আর শীত যাবে কমে।” আবহবিদদের মতে, ওই ঘূর্ণিঝড় আরও শক্তি বাড়িয়ে আগামী শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকতে পারে। তবে ২৪ ঘণ্টায় ওই ঘূর্ণিঝড় যে-ভাবে শক্তি বাড়িয়েছে, তাতে শেষ মুহূর্তে তার গতিপথ পরিবর্তনও হতে পারে বলে আবহবিদদের ধারণা।
আন্দামানের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন দিন ধরেই সেখানকার আবহাওয়া খারাপ হয়ে রয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া তো বইছেই। মাঝেমধ্যে হচ্ছে ভারী বর্ষণও। সমুদ্রও বেশ উত্তাল। সোমবার দুপুরের পরে অল্প সময়ের জন্য রোদের দেখা মিলেছিল। কিন্তু আকাশ আবার ঢেকে গিয়েছে মেঘে।
হ্যাভলক দ্বীপ পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে হ্যাভলক ও ক্যাম্বেল বে-র দিকে রোজই ছোট জাহাজ চলে। এ ছাড়াও রয়েছে নীল, রস আইল্যান্ডের মতো অনেক দ্বীপ। পর্যটকেরা ওই দ্বীপগুলিতেই যান। হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা সৌমি ভট্টাচার্য আটকে আছেন হ্যাভলক দ্বীপে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “২৩ ডিসেম্বর থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বর থেকে আবহাওয়া বেশি খারাপ হয়ে পড়ায় জলযান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” চার দিন ধরে জলযান না-চলায় পোর্ট ব্লেয়ার থেকে কোনও খাদ্যসামগ্রীও যাচ্ছে না বিভিন্ন দ্বীপে। তাই ওই সব দ্বীপে খাবারের দাম বেড়ে গিয়েছে। পানীয় জলেরও অভাব রয়েছে বলে জানান সৌমিদেবী। কবে মোটরবোট এসে তাঁদের উদ্ধার করবে, সেই দিকে তাকিয়ে আছেন সৌমিদেবীর মতো কয়েকশো পর্যটক। হেলিকপ্টারে তাঁদের পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দরবারও করেন পর্যটকেরা। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত সেই ব্যবস্থা হয়নি। এ দিন তিনটি ছোট জাহাজ নিয়ে বিভিন্ন দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারের চেষ্টা হয়েছিল বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ে সেই সব জাহাজ মাঝপথ থেকেই ফিরে এসেছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নৌবাহিনী পর্যটকদের উদ্ধারের কাজে এগিয়ে এসেছে। আটক পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার জন্য আজ, বুধবার ফের চেষ্টা চালানো হবে। দুর্যোগ চলছে পোর্ট ব্লেয়ারেও। তবে তুলনায় কম। মঙ্গলবার সেখান থেকে উড়ান চালিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া এবং জেট বিমান সংস্থা। বুধবারেও যথারীতি উড়ান যাতায়াত করবে বলে দুই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে। |