মা তুখোড় বক্তা। ঘোর বিরোধীরাও তাঁর বাগ্মিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অথচ সংসদে হাজির থেকে সরাসরি মায়ের বক্তব্য শোনার সুযোগ তেমন হয়নি। বহু দিনের সেই ইচ্ছা পূরণ হল এ দিন। মঙ্গলবার লোকপাল বিল নিয়ে লোকসভায় বক্তৃতা শুরুই করার কথা ছিল সুষমা স্বরাজের। তাঁর বক্তৃতা শুনতে সংসদে চলে আসেন তাঁর মেয়ে বাঁশরী। বিদেশ থেকে আইন পড়ে এসে এ দেশে আইনি পেশায় হাত পাকাচ্ছেন তিনি। স্পিকার গ্যালারিতে তাঁর বসার আয়োজন ছিল। কিন্তু সেখানে বসলে মাকে সামনে থেকে দেখা যাবে না। তাই লোকসভা সচিবালয়কে অনুরোধ করে বাঁশরী বসলেন সাধারণ দর্শকদের সঙ্গেই।
|
অণ্ণা হজারেকে আর যে-ই সমর্থন করুন, লালুপ্রসাদ নৈব নৈব চ! অণ্ণার বিরোধিতায় তিনিই সব সাংসদের ‘মসিহা’। অনেকে যা মুখে বলতে পারেন না, লালু যেন সকলের হয়ে সেই কথাটা বলে দেন। দলমত নির্বিশেষে হাততালি ও সাধুবাদও জোটে। আরও অক্সিজেন পান লালু। সুর চড়িয়ে এ দিন বলেছেন, “আমি কাউকেই ভয় পাই না। অণ্ণাকেও এত ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমি লালুপ্রসাদ যাদব। আমার জন্ম হয়েছিল কোন সালে? ১৯৪৮-এ। ভুলে যাবেন না, আমার জন্মের ঠিক এক বছর আগে ব্রিটিশরা ভয়ে দেশ ছেড়ে গিয়েছে। যখন ব্রিটিশরা আমার ভয়ে পালায়, তখন বাকিরা কোন ছার!”
|
লোকপাল বিল নিয়ে যার যা মত থাক, সব দলকেই দেখাতে হচ্ছে, দুর্নীতি রোধের দৌড়ে তারাই সবথেকে এগিয়ে। বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ দারা সিংহ চৌহান। কী বলতে হবে, নেত্রী মায়াবতী অক্ষরে অক্ষরে তা লিখে দিয়েছেন। পাছে লেখা থেকে সামান্য বিচ্যুতি ঘটে, নজর রাখার জন্য মায়ার ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভা সাংসদ সতীশ মিশ্রও বসে আছেন গ্যালারিতে। দারা সিংহ বললেন, “বহেনজির ইচ্ছা, দুর্নীতি রুখতে একটি শক্তিশালী বিল হোক।” যেই না বলা, হাসির রোল উঠল সংসদে। পিছন থেকে এক জন কটাক্ষ করলেন, “বহেনজি (মায়াবতী) আর দুর্নীতি রোখা? এক সারিতে দু’টি বসে কী করে?”
|
বিতর্ক যখন চলছিল, আগাগোড়া বিলটিতে মগ্ন ছিলেন তিনি। বলতে উঠে ছত্রে ছত্রে কার্যত সরকারের সমালোচনাই করলেন লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দৃঢ় ভাবে জানালেন, “আমরা সৎ এবং সেই জন্যই সাধারণ মানুষ আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন। সকাল-সন্ধ্যা বৈদ্যুতিন চ্যানেলের সামনে ধর্না দিলেই কেউ সৎ প্রমাণিত হয় না।” বক্তৃতার শেষে লালু-মুলায়ম সকলে অভিনন্দন জানালেন কল্যাণবাবুকে। সেরা উপহারটি এল স্পিকারের কাছ থেকে। কল্যাণকে চিরকুট পাঠিয়েছেন মীরা কুমার। যাতে লেখা, ‘দুরন্ত যুক্তি অত্যন্ত সবল ভাবে পেশ করা হয়েছে!’
|
আইনের জ্ঞান নিয়ে কথাবার্তা। লোকসভার প্রধান বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ আর কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিব্বল? বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন দু’জন। সরকার যে বিলটি পেশ করেছে, তার আইনি দিকগুলিতে যথেষ্ট ফাঁকফোঁকর রয়েছে এই ছিল সুষমার সওয়াল। তাঁর বক্তব্য, “কপিল সিব্বলজির আইনজ্ঞান প্রখর বলেই আমরা জানি। আর আমার তো একটু-আধটু জ্ঞান! তাতেই আমি বুঝতে পারছি, ত্রুটিগুলো কোথায়। উনি বা চিদম্বরম বা প্রণববাবুরা কেন সেটা বুঝছেন না?” সুষমার কথার উত্তর দিতে গিয়ে কপিলের পাল্টা ব্যঙ্গোক্তি, “সাংসদেরা যখন উকিল হয়ে যান, তখনই হয় বিপদ!”
|
লোকসভায় বলতে উঠেছিলেন কপিল সিব্বল। হঠাৎ তাঁর মাইক্রোফোন বন্ধ হয়ে গেল। পিছনের দিকের দু’টি আলাদা সারিতে বসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দুই কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সি। চালু হয়ে গেল তাঁদের সামনের মাইক্রোফোন। সিব্বলের কথা কেউ শুনতে পাচ্ছেন না। এ দিকে পিছনের সারিতে সাংসদরা নিজেদের মধ্যে কী বলছেন, তা সকলে শুনতে পাচ্ছে। অধীর চেষ্টা করলেন মাইক্রোফোন বন্ধ করার। লাভ না হওয়ায় একটু পিছিয়ে বসলেন। দীপা গোটা মাইক্রোফোনটাই তাঁর টেবিল থেকে খুলে ফেললেন। এর মধ্যে সিব্বলের মাইক্রোফোন ফের চালু হয়ে যাওয়ায় অস্বস্তি থেকে রক্ষা পেলেন দু’জনে।
|
কপিল সিব্বল লোকসভায় প্রশ্ন তুললেন, বামেরা এখানে দাবি তুলছে, সমস্ত সরকারি পদ ও প্রতিষ্ঠানকে লোকপালের আওতায় রাখা হোক। অথচ পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরা-কেরলে যে লোকায়ুক্ত তৈরি হয়েছে, তার আওতায় সেটা করা হয়নি। সিব্বলের এই বক্তব্যের পরেই মধ্যহ্নভোজনের বিরতি। তার মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন করে পাল্টা আক্রমণ শানালেন সীতারাম ইয়েচুরি। “ঠিকই তো বলছেন সিব্বল। কারণ রাজ্যের সামনে মডেল হিসেবে কোনও কেন্দ্রীয় আইন ছিল না। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরা-কেরলে বামফ্রন্ট সরকার লোকায়ুক্ত গঠন করেছে। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে তো সেটাও করা হয়নি।”
|