প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, আজকের ‘লোকপাল-নাটকের’ প্রধান সূত্রধর ছিলেন তিনিই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রসঙ্গ উঠতেই আজ হাতজোড় করে তিনি বলে উঠলেন, “সবাইকে ছেড়ে আমায় কেন!” তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
লোকপাল বিল নিয়ে সবার বলার শেষে জবাবি বক্তৃতা দিতে উঠেছিলেন প্রণববাবু। কিন্তু বাধা এল মাঝ পথে। বিজেপি সাংসদ যশবন্ত সিন্হার টিপ্পনি, “আমরা তো ভাবছিলাম প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিদায়ী ভাষণ দিলেন।” তৎক্ষণাৎ প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেন অর্থমন্ত্রী। বললেন, “প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিদায়ী ভাষণ দেননি। আমাদের আরও আড়াই বছর রয়েছে। বরং বিজেপির-ই একটু বেশি তাড়া আছে।” |
এর পরই নিঃশব্দ সংসদ কক্ষে রীতিমতো বোমা ফাটালেন যশবন্ত। জানালেন, সেন্ট্রাল হলে শোনা একটি ‘গুজবের’ কথা। সেটি হল, এ বার মনমোহন সিংহের পরিবর্তে নাকি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন প্রণববাবুই। স্বভাবসিদ্ধ ঢংয়ে হাতজোড় করলেন তিনি। মুখে স্মিত হাসি। বললেন, “অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু সবাইকে ছেড়ে আমায় কেন!”
আজ সকাল থেকেই তাঁকে সামনে রেখে বিরোধীদের আক্রমণ সামলেছে কংগ্রেস। কখনও সনিয়া গাঁধী কখনও খোদ মনমোহন সিংহ টেবিল চাপড়ে আগাগোড়া উৎসাহিত করে গিয়েছেন প্রণববাবুকে। বিরোধীরা যখন কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন, তখন প্রণববাবুর বক্তব্যকে সমর্থনে মুখ খুলেছেন সনিয়াও। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, সমস্ত কাজের অনুমোদনের জন্য ঘনঘনই তাকে কলকাতায় যেতে হয়। প্রণববাবু এর মোকাবিলা করেছেন কৌশলের সঙ্গে। পাল্টা মনে করিয়ে দিয়েছেন, “এনডিএ-র সময় আপনাদেরও তো চেন্নাই আর হায়দরাবাদ ছুটতে হত।” পাশ থেকে সনিয়ার ধরতাই, “নাগপুরেও যেতে হত!” সঙ্ঘের সদর দফতর নাগপুরে।
আজ বিজেপি তথা বিরোধী দলগুলি বারবার অভিযোগ করেছে যে, অহেতুক তাড়াহুড়ো করে এই বিল আনা হয়েছে। সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে প্রণববাবু জানিয়েছেন, নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়েছে তাঁর। সব জায়গা থেকেই তাঁর সরকার মতামত গ্রহণ করেছে। তাঁর কথায়, “অনেকেই চেয়েছিলেন নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা হোক। আবার অনেকে সেটা চাননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্থির করেন যে, নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। তিনি পাঁচ জন মন্ত্রীকে বেছে নেন। যার মধ্যে আমিও ছিলাম।” অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রথম থেকে শেষ--- এই লোকপাল কাণ্ডে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রণব মুখোপাধ্যায়ই হয়ে উঠেছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। |