অণ্ণা হজারেদের সন্তুষ্ট করে বিজেপি যখন সংসদের ভিতরে এবং বাইরে লোকপাল বিলের খুঁটিনাটি নিয়ে বিরোধিতা করছে, একেবারে ভিন্ন অবস্থান নিলেন দলের সাংসদ যশোবন্ত সিংহ। তাঁর মতে, অণ্ণাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লোকপাল বিল আনার কোনও যৌক্তিকতাই নেই।
লোকপাল বিল নিয়ে দলের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে আজ সকালে সংসদ শুরুর আগে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির একমাত্র সাংসদ যশোবন্ত সিংহ লোকপাল বিল আনার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। দলের এক নেতার কথায়, বৈঠকে যশোবন্ত বলেন গোড়া থেকেই তিনি এই বিলের বিরোধিতা করে আসছেন। অণ্ণা এই বিল নিয়ে আন্দোলন করছেন বলেই বিজেপিকে সেই স্রোতে গা ভাসাতে হবে, তার কোনও অর্থ নেই। এই বক্তব্যের পরেও বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য দলীয় অবস্থান বদলানোর সিদ্ধান্ত নেননি। লোকপাল বিল নিয়ে সংসদে যশোবন্তকে বলতেও দেওয়া হয়নি। কিন্তু দলের সমর্থন না পেলেও বিজেপির সব থেকে পুরনো শরিক শিবসেনা কিন্তু যশোবন্তের মতেরই শরিক। লোকসভায় লোকপাল বিল নিয়ে বিতর্কের সময়ই শিবসেনা নেতা অনন্ত গীতে লোকপাল বিল আনার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “যিনি লোকপাল হবেন, তাঁর সততা নিয়ে কে নিশ্চয়তা দেবেন? এত দিন ধরে এ দেশে যে চারটি স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলির কি এতটাই অবক্ষয় ঘটেছে যে পঞ্চম স্তম্ভ আনতে হবে? অণ্ণা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেই পারেন। কিন্তু আন্দোলনের নামে গণতন্ত্রকে নষ্ট করার অর্থ হয় না।”
বিজেপি সূত্রের মতে, যশোবন্ত সিংহ যা বলেছেন, দলের মধ্যে অনেকেই সেই মত পোষণ করেন। কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব যা অবস্থান নিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে এখন আর মুখ খোলার অবকাশ নেই। বিশ্বের অনেক দেশেই লোকপালের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেগুলি ঠিকমতো কাজ করেনি। স্পেন, পর্তুগাল এমনকী প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানেও এ ধরনের একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। নরওয়ে, সুইডেনের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয় কয়েকটি দেশেও এমন ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেগুলো প্রধানত বিভিন্ন দফতরের উপর নজরদারি করে। সামগ্রিক ভাবে লোকপালের মতো ক্ষমতা সেই সংস্থার নেই।
বিজেপির ওই সূত্রের মতে, সরকার যে লোকপাল বিল এনেছে, সেটিও নখদন্তহীন। ফলে লোকপাল আনলেই যে দেশ থেকে সব দুর্নীতি দূর হয়ে যাবে, সেই ভাবনা একেবারেই অবাস্তব। তবে এ-ও ঠিক, এনডিএ আমলে লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী নিজে লোকপালের আওতায় আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ফলে এখন অণ্ণার আন্দোলনের পর এই বিষয়টি যে ভাবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে, তারপরে লোকপাল বিলটি পুরোপুরি বাতিল করার দাবি রাজনৈতিক কারণেই তুলতে পারে না বিজেপি। বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে অণ্ণার সুরে সুর মিলিয়ে বিলের বিরোধিতায় সরব হওয়ার কৌশল নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
বিজেপির এই নীতি নিয়েই আজ সংসদে প্রশ্ন তোলেন কপিল সিব্বল। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি আসলে বিল পাশ করাতে চায় না। সে কারণেই সুষমা স্বরাজ বিলটিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর কথা বলছেন। তারপর বিজেপি রাজ্যে-রাজ্যে গিয়ে প্রচার করবে, সরকার লোকপাল বিল পাশ করাল না। কপিল সিব্বলের এই কটাক্ষ এই মুহূর্তে হজম করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বিজেপির কাছে। দলের এক নেতা কবুল করেন, “এই মুহূর্তে যে লড়াইটা অণ্ণা বনাম কংগ্রেস হচ্ছে, তা অণ্ণা বনাম বিজেপি হোক, নিশ্চয়ই আমরা চাইব না। বরং অণ্ণার আন্দোলনে উৎসাহ দিয়ে মনমোহন সরকার এবং কংগ্রেসকে কোণঠাসা করাই বিজেপির কাছে শ্রেষ্ঠ পথ। এই অবস্থান নিতে গিয়ে দলের মধ্যে কিছু মতান্তর হলেও সেগুলো বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে।” |