দাবি মানা হল কি না, বিল দেখে সিদ্ধান্ত মমতার
লোকপাল বিলে রাজ্যের দাবি কতটা মানা হয়েছে, তা নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আগে দেখে নিতে চান, লোকায়ুক্ত সত্যিকারের স্বায়ত্তশাসন পাচ্ছে কি না। তাই লোকসভার অধিবেশনের পরে তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা বিষয়টিকে ‘জয়’ বলে দাবি করলেও মমতা আগে বিলটি দেখে নিতে চান। সব দিক দেখেশুনে তবেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, আগামিকাল রাজ্যসভায় বিলটি পাশের সময় তাঁর দল সরকারকে সমর্থন করবে কি না।
সম্প্রতি রাজধানীতে এসে মমতা বলে গিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার টালমাটাল হয়ে যাক, এমনটা তিনি চান না। কিন্তু মঙ্গলবার লোকপাল বিল পাশ পর্বের পরে তিনি নিঃসংশয় নন, তাঁদের দাবি মেনে বিলটিতে সংশোধনী আনা হয়েছে কি না। তৃণমূল চেয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা মাথায় রেখে লোকায়ুক্ত গঠনের ব্যাপারে রাজ্যকে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হোক। আর সেই লোকায়ুক্ত কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বশাসিত হোক। লোকসভা অধিবেশনের পরে সুদীপবাবু সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তাই তাঁরা বিল পাশের সময় সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন (পরে অবশ্য বিলটিকে তিনি ‘নখদাঁতহীন বাঘ’ বলে উল্লেখ করেন)।
কিন্তু মমতা এখনই এতটা স্পষ্ট ভাবে ‘দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে’ বলতে নারাজ। বরং তিনি আগে দেখে নিতে চান, তাঁদের দাবি মানা হলেও সেটা কতটা মানা হয়েছে। তার পর তৃণমূল নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন, কাল রাজ্যসভায় বিলটিকে সমর্থন জানানো হবে কি না।
এ দিন লোকসভায় বিতর্ক চলার সময় বিজু জনতা দলের ভর্তৃহরি মহাতাব প্রশ্ন তোলেন, রাজ্যের হাতে লোকায়ুক্ত গঠনের বিষয়টি ছাড়া হলেও এটিকে কেন্দ্রীয় লোকায়ুক্ত বলা হচ্ছে কেন? তা হলে কি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ থেকেই যাচ্ছে? একই সঙ্গে তিনি তৃণমূল ও ডিএমকে-কে অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন বিলটির পক্ষে ভোট না দেন। মমতার বক্তব্য, এই অবস্থায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেই সময় লোকসভায় হাজির তৃণমূল সদস্যদের বক্তব্য, সর্বদলীয় বৈঠকে গিয়ে দীনেশ ত্রিবেদী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে এসেছিলেন, তাঁরা পক্ষেই ভোট দেবেন। সেই কথাই তাঁরা মেনে চলেছেন।
বস্তুত, লোকপাল গঠন নিয়েই আপত্তি ছিল মমতার। গত রবিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন, তখন লোকপাল নিয়েও কথা হয়েছিল। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রণববাবুকে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরকার যদি লোকপাল বিল আদৌ না আনে তা হলে তিনি সব চেয়ে খুশি হবেন। অণ্ণা হজারের চাপে সরকার এই বিল আনছে এই বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় তৃণমূল নেত্রীর পক্ষে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সংসদ রয়েছে, রাজ্য সরকারগুলি রয়েছে, দুর্নীতি বিরোধী আইনও রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজের নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। মঞ্চে ধর্না দিয়ে আর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে কেউ দুর্নীতি-বিরোধী ‘মসিহা’ হয়ে উঠতে পারেন না। প্রণববাবু তখন তাঁকে বলেন যে, সংসদের প্রতি সরকারের একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই আইন আনার চেষ্টা চলছে। তাঁরা সেটিকে ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করছেন মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণব আশ্বাস দেন যে, মমতা যদি কোনও সংশোধনী দেন তা হলে অবশ্যই কেন্দ্র তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি থেকে পেনশন বিল প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে সরকার মমতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ করছে, সেটিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রণব।
আজ লোকসভায় বিতর্ক চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী লোকপাল এবং লোকায়ুক্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। তাঁর বক্তব্যের নির্যাস, কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্যের হাতে পরিষেবা ক্ষেত্র বেশি। ফলে দুর্নীতির সম্ভাবনাও বেশি। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দোহাই দিয়ে লোকায়ুক্ত আনার ক্ষেত্রে যেন বাধার সৃষ্টি না-করা হয়। এর পরেই বলতে ওঠেন লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজ্যের আইনি ব্যবস্থা এবং মন্ত্রীদের অবজ্ঞা করে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোনও আইন চাপিয়ে দেওয়ার পরিণাম অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। তাঁর কথায়, “লোকপালকে বরং একটি মডেল আইনে পরিণত করা হোক। এর পর তা প্রয়োগ করা হবে কি হবে না, সেটা রাজ্যের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক।” সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি তৃণমূলের পরামর্শ, লোকপালের মতো একটি ‘সুপার ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি’ তৈরি না করে জেলায় জেলায়, ব্লক স্তরে দুর্নীতিদমন আইনকে বরং আরও জোরদার করা হোক। কল্যাণবাবু এত বিষয়ে সংশোধনী আনার কথা বলেন তাতে মনে হতে বাধ্য, তিনি কার্যত লোকপালের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। কিন্তু দিনের শেষে লোকপাল বিলকে কিন্তু তৃণমূল সমর্থন জানিয়েছে। এর আগে মমতার নির্দেশ মাফিক অণ্ণা হজারেকেও নাম না করে এক হাত নিয়েছেন কল্যাণ। বলেছেন, “অনেকে এমন ভাবে ধর্নায় বসছেন যেন তাঁরা একাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছেন। আমরাও সৎ আর সেই কারণেই মানুষ আমাদের জিতিয়ে এনেছেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.