রাতে অসুস্থ অণ্ণা
দিল্লির মুগ্ধতা নেই, অণ্ণার ডাকে মাঠ ভরেনি মুম্বইয়ে
দিল্লির গণ-উন্মাদনাকে ছুঁতে পারল না মুম্বই। যে জনজোয়ার দেখার আশায় ছিল অণ্ণা শিবির, আজ দিনভর তাতে ভাটার টান।
অথচ মাস কয়েক আগে অণ্ণার এক ডাকে রামলীলা ময়দান এবং যন্তরমন্তর ভরিয়ে তুলেছিলেন সাধারণ মানুষ। স্কুল-কলেজ বা অফিস ফেলে আম-আদমি ছুটে এসেছিল অণ্ণার পাশে দাঁড়ানোর জন্য। স্বতঃস্ফূর্ত সেই সমর্থনের পরিচিত ছবি আজ সারা দিন খুঁজেও পাওয়া গেল না সাগর পারের শহরে। মানুষ এসেছেন। কিছু ক্ষণ বসেছেন। অণ্ণাকে দেখে চলে গিয়েছেন নিজের কাজে। আদতে ডানকুনির বাসিন্দা অরুণ দেবালি এখন আন্ধেরিতে থাকেন। স্ত্রী এবং দুই মেয়ে আস্থা, অনন্যাকে নিয়ে এসেছিলেন। বললেন, “অণ্ণার অনেক নাম শুনেছি। আজ ছুটি পেয়েছি। তাই সকলে মিলে একটু ঘুরে গেলাম।”
গোটা দিনে হাজার দুয়েকের বেশি সমর্থক না থাকায়, বিশাল মাঠের এক-তৃতীয়াংশও ভরেনি। অনেকটাই মেলার পরিবেশ। কড়া রোদে ছায়া খুঁজতেই বেশি আগ্রহ সকলের। সেখান থেকেই বিভিন্ন দেশাত্মবোধক স্লোগানে গলা মেলানো। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মাথায় টুপি পরে ছবি তোলা। পরে অবশ্য রোদ কমলে সন্ধ্যার দিকে জমায়েতটা বেড়ে চার-পাঁচ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। দুপুর হোক বা রাত, দিল্লিতে অণ্ণার সমাবেশে গড়ে উপস্থিতি ছিল দশ থেকে পনেরো হাজার। নিজের রাজ্যেই অণ্ণা-ম্যাজিক কাজ না করায়, স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, অনশন দেখতে দেখতে কি ক্লান্ত আমজনতা?
চেনা সেই ভিড় উধাও। অনশনের প্রথম দিনে অনেকটাই ফাঁকা ময়দান। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। ছবি: এ এফ পি।
অথচ সংসদ বনাম সড়কের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি তুঙ্গে ছিল ‘ইন্ডিয়া এগেনস্ট করাপশন’ (আইএসি)-এর সদস্যদের। সমর্থনকারীদের জন্য বিনামূল্যে খাবার, জল কোনও কিছুরই অভাব ছিল না। সদস্যেরা ঘুরেছেন অণ্ণা-ব্যাজ নিয়ে। হাসিমুখে লাগিয়ে দিয়েছেন। পালা করে বিতরণ করেছেন জলের পাউচ। কিন্তু সেই ভিড় কোথায়? এরই মধ্যে অনশন মঞ্চে অণ্ণার ফের জ্বর আসে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কিরণ বেদীরা তাই বিকেলেই অণ্ণাকে অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তিনি অবশ্য সেই দাবি খারিজ করে দেন। বলেন, “জ্বর সত্ত্বেও তিন দিন অনশন করতে আমি বদ্ধপরিকর।” রাতে জ্বর আরও বাড়ে। নাড়ির গতি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। রক্তচাপ বাড়ে। মাঠে নিয়ে আসা হয় একটি অ্যাম্বুল্যান্সও। তবে অণ্ণা এখনও অনশনে অনড়।
শরীর খারাপ থাকলেও সময়সূচি মেনেই সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ মহারাষ্ট্র সরকারের অতিথিশালা থেকে বেরিয়েছিলেন অণ্ণা। পথে কিছু লোক তাঁকে কালো পতাকা দেখালেও অণ্ণা ছিলেন অবিচল। জুহুতে গাঁধীমূর্তির সামনে থেকে হুড খোলা গাড়িতে যাত্রা করেন বিকেসি মাঠের দিকে। গাড়ি নিয়ে তাতে প্রথমে যোগ দিয়েছিলেন বহু লোকই। কিন্তু সান্তাক্রুজ, খার, বান্দ্রা হয়ে যখন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ যখন অণ্ণার কনভয় মাঠে পৌঁছয়, তত ক্ষণে রাস্তার ভিড় রাস্তাতেই মিলিয়ে গিয়েছে। উপস্থিত মেরেকেটে হাজার খানেক লোক। যার মধ্যে কয়েকশোই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি। যা দেখে আইএসি-এর কর্মকর্তা অঞ্জলি ডালমিয়ার স্বগতোক্তি, “লক্ষণ ভাল নয়।” ভিড় টানতে গত কালই বারবার আবেদন করেছিলেন কিরণ বেদী। কিন্তু তাতে যে খুব একটা সফল হননি তা আজকের উপস্থিতি থেকেই পরিষ্কার। তাই আজ কিরণ বেদী শোনাতে শুরু করেন, অণ্ণার আন্দোলনে তিনি কী ভাবে সামিল হলেন। প্রথম অংশটি জানিয়ে বলেন, “বাকিটা কাল বলব। আপনারা শুনতে আসবেন তো?” জনতা যে ভাবে তাঁকে জবাব দিল, তাতে কিরণ নিজেও আগামী কালের ভিড় সম্পর্কে খুব একটা আশাবাদী হলেন বলে মনে হল না।
কিন্তু মহারাষ্ট্রেরই এক বাসিন্দার আন্দোলনে যেখানে প্রায় চার দশক পরে লোকপাল বিল তড়িঘড়ি আনতে বাধ্য হল কেন্দ্র, তাঁর জন্য কেন এগিয়ে এলেন না এ শহরের মানুষ? তবে কি সরকারের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই মুম্বইতে? নেই দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ? রাজনৈতিক শিবিরের মতে, মানুষের মধ্যে যদি অসন্তোষ থাকে, তা হলে যে কোনও অবস্থাতেই তাঁরা প্রতিবাদে মুখর হন। যেমনটি হচ্ছে রাশিয়াতে। তীব্র ঠান্ডা সত্ত্বেও মস্কো-সহ গোটা রাশিয়াতেই পুতিন-বিরোধী বিক্ষোভ ক্রমশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তা হলে এখানে কেন ভিড় হল না? লোকে কি এ ভাবে আন্দোলন চাইছে না? মেধা পাটকরের যুক্তি, “এটা তো সংখ্যার খেলা নয়। আজ মুম্বইতে কাজের দিন। মানুষকে কাজে যেতে হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।” অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দিল্লিতে কিন্তু কাজের দিনের তোয়াক্কা করেনি সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ বলছে, মুম্বইতে ভিড় না হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত জনমানসে আগ্রহের অভাব। গত দু’দিনে মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, অণ্ণা নিয়ে আপাত কোনও কৌতূহল নেই আম-মুম্বইকরদের। যতটা ছিল দিল্লিতে। কারণ, মহারাষ্ট্রে অণ্ণা পরিচিত মুখ হলেও রাজধানীর মানুষের কাছে তাঁর উপস্থিতি ছিল এক ঝলক টাটকা বাতাস। নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের জায়গা।
তা ছাড়া, অনেকেরই অভিযোগ, সংসদকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করছে অণ্ণা শিবির। আজ অণ্ণার সমর্থনে মাঠে এলেও, শিক্ষক বসন্তরাও বললেন, “নেতাদের উপর সত্যিই কোনও ভরসা নেই। কিন্তু সংসদকে যদি না মানি, তা হলে গণতন্ত্র থাকবে কী করে। অণ্ণা বোধহয় এ বার একটু তাড়াহুড়োই করে ফেললেন। লোকপাল বিল পাশ হওয়ার পরে তাতে কী ত্রুটি রয়েছে, তা নিয়ে তিনি সরব হতে পারতেন।” শুধু তা-ই নয়, অণ্ণা শিবিরের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগও একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কিরণ বেদী, প্রশান্তভূষণ-সহ অণ্ণা শিবিরের সব শীর্ষ ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। শিবিরে অন্তর্কলহও কিছু কম নয়। আজ অণ্ণা শিবির তথা আইএসি-এর মুম্বই শাখার শীর্ষ ব্যক্তি ময়াঙ্ক গাঁধীই স্বীকার করলেন, “আমার সঙ্গে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতপার্থক্য রয়েছে।”
পাশাপাশি দিল্লিতে অণ্ণার অনশনকে ঘিরে যে গণ উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল, তার পিছনে ছাত্র-ছাত্রীদের বড় ভূমিকা ছিল। দিল্লি ও সংলগ্ন নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুড়গাঁও-তে অসংখ্য ছোট-বড় কলেজ রয়েছে। সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়ম করে আসতেন অণ্ণা ধর্নাস্থলে। কিন্তু আজ বিকেসি মাঠে দিনভর কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী এসেছেন কি না, সন্দেহ। এখানেই শেষ নয়। রাজনৈতিক শিবির বলছে, দিল্লিতে অণ্ণার জমায়েতের পিছনে সঙ্ঘ পরিবারের একটি অদৃশ্য চালিকাশক্তি কাজ করত। কিন্তু গত কাল অরবিন্দ কেজরিওয়াল স্থানীয় মুসলিম উলেমা ও সংখ্যালঘু সমাজের সঙ্গে বৈঠক করায় অসন্তুষ্ট সঙ্ঘ পরিবার। সে কারণেই আজ হয়তো সংগঠিত সমর্থনের একটা অভাব যেন দেখা গিয়েছে।
এ সব দেখেশুনে বিলক্ষণ খুশি শরদ পওয়ারের এনসিপি। তাঁদের নেতা চড় খাওয়ার পরে অণ্ণার কটাক্ষ যে আজও টাটকা। দলের মুখপাত্র প্রকাশ ভিনসানে তাই কটাক্ষ করলেন, “শোলে কি আর দু’বার হয়? দ্বিতীয় বার তা শুধু ‘রিমেক’ই হয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.