মাত্র পাঁচ বছরেই এলাকার অধিকাংশ জমিতে গড়ে উঠেছে একের পর এক বহুতল। কর্মী-সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড় লক্ষ। দিনের ব্যস্ত সময়ে গাড়ি চলে ২০ থেকে ২৫ হাজার। যত্রতত্র পার্কিং। অথচ, রাস্তার সংখ্যা এবং পরিসর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দিনের ব্যস্ত সময়ে তাই যানজটে জেরবার কর্মীরা।
বিধাননগরের পাঁচ নম্বর সেক্টরের ছবিটা এখন এমনই। শিল্পমহলের আশঙ্কা, এই শিল্পতালুক আর কয়েক দিনের মধ্যেই গাড়ির চাপে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যাবে। শিল্পতালুক-কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করে সমস্যার সমাধান করবেন। শিল্পমহলের অবশ্য অনুমান, সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে। তাঁদের বক্তব্য, শিল্পতালুকের জন্য বিল্ডিং প্ল্যানে বিশেষ ছাড় দিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু রাস্তার কথা বিবেচনায় রাখা হয়নি। ফলে, মাত্র ৪৩২ একরের পাঁচ নম্বর সেক্টরে অসংখ্য বহুতল গড়ে উঠেছে। রাস্তা মাত্র ১৭ কিলোমিটার। চওড়ায় ন্যূনতম ৮-১৬ ফুট। অথচ শিল্পতালুকে কর্মসংস্থান বাড়াতে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর)-র ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। গাড়ি বাড়লেও পর্যাপ্ত পার্কিং প্লট নেই। যানজটে নাকাল শিল্পতালুকের কর্মী ও পথচলতি মানুষ। নবদিগন্ত ও পুলিশ সূত্রে খবর, লক্ষাধিক গাড়ি রোজ চলে এই এলাকায়।
কেন এফএআর-এর ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়? নগরোন্নয়ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, বঙ্গীয় পুর-আইন মোতাবেক বিধাননগরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থলে যে মাত্রায় এফএআর করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে রাস্তাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ নম্বর সেক্টরে জমি কম থাকায় ঠিক হয়, একই জায়গায় অনেক সংস্থাকে সুযোগ দেওয়া হবে। অর্থাৎ, উপরের দিকে তলের সংখ্যা বাড়বে। এখানেই শেষ নয়। বাসস্ট্যান্ড, অনুমোদিত পাঁচটি পার্কিং লট, অনুমোদন ছাড়া বহু রাস্তায় গাড়ি রাখা, বড় বড় বাসের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো সব মিলিয়ে শিল্পতালুক এখনই গাড়িতে কার্যত অবরুদ্ধ। এমনকী, রাস্তা সম্প্রসারণের জমিও নেই বলে দাবি নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষের।
ন্যাসকম-এর পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা সুপর্ণ মৈত্র বলেন, “আই টি বিল্ডিং-এর নাম করে রিয়্যাল এস্টেটের ব্যবসা হল। বহুতল তৈরি হল, অথচ রাস্তা তুলনায় অনেক কম। নিয়ম মেনে বহুতলে পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ গাড়ি রাস্তাতেই থাকে।” গাড়িচালকদের দাবি, অফিসের পার্কিং লটের ভাড়া রাস্তার তুলনায় বেশি। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তাতেই গাড়ি রাখতে হয়। তাই তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও’ নিয়ে রাজ্য ভাবনাচিন্তা করুক। না-হলে বিকল্প ব্যবস্থাতেও সমস্যার সমাধান হবে না।
নবদিগন্তের চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যার সমাধানে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে উন্নত করার পাশাপাশি বহুতল পার্কিং ব্যবস্থার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। তা গড়ে তুলতে জমির খোঁজ চলছে। পরিবহণ দফতরের কাছেও আবেদন করা হয়েছে।” এফএআর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এফএআর একটি বহু আলোচিত বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ক্ষেত্রে এফএআর কত হবে, তা ঠিক করতে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।” |