টিভিতে ‘ক্রাইম সিরিয়াল’ দেখতে ভালবাসত কিশোরী গুড্ডি। ফাঁক পেলেই ছোট ভাইয়ের সঙ্গে গোয়েন্দা-অপরাধী খেলাও খেলত। সোমবার সেই খেলার মাঝখানেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় বছর বারোর অর্ণালি ঠাকুরতা ওরফে গুড্ডির। গলায় ওড়নার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঠাকুরপুকুরের পল্লিমঙ্গল কলোনিতে নিজেদের ফ্ল্যাটেই মেয়েটির ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। টিভিতে অনবরত খুনজখমের দৃশ্য দেখার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে বাড়ির লোকেদের ধারণা।
তবে এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, যাচাই করছে পুলিশ। ডিসি (এসডব্লিউডি) সুব্রত মিত্র মঙ্গলবার বলেন, “তদন্ত চলছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।” এ দিনই ময়না-তদন্ত হয়ে গিয়েছে। ঠাকুরপুকুর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ‘কেস’ হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, প্রথমেই এ ঘটনাকে খেলার ছলে দুর্ঘটনা বা টিভি সিরিয়ালের প্রভাব বলে মনে করা ঠিক নয়। অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে। |
দুপুরে ওই কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো পাড়ায় শোকের ছাপ। যে-ফ্ল্যাটে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি বন্ধ করে রেখেছেন গুড্ডির আত্মীয়েরা। পাশেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে ওই কিশোরীর মা সোনালীদেবী। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। গুড্ডির মাসিমা বললেন, “ও সাজগোজ করতে খুব ভালবাসত। ঘরের মধ্যেই শাড়ি পরে নিজেকে দেখত। ভাইকে দেখাত। সোমবারেও ওড়না নিয়ে খেলছিল। আমার বোন সোনালী তখন কাপড় কাচছিল। সেই সময়েই ঘটনাটি ঘটে যায়।” তিনি জানান, ভাইকে দুধ খাওয়ানোর জন্য গুড্ডিকে ডাকাডাকি করেন ওর মা। মেয়ের সাড়া না-পেয়ে তিনি ছেলেকে ডাকেন। ছেলে মাকে বলে, ‘দিদি বাঁধা আছে।’ ছেলের কথা শুনেই ওই ঘরে ছুটে যান সোনালীদেবী। গুড্ডি তখন গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ফ্যান থেকে ঝুলছে।
পল্লিমঙ্গল কলোনির ওই ফ্ল্যাটের তেতলায় থাকেন সোনালীদেবীরা। দোতলার বাসিন্দা সোমনাথ কর্মকার বলেন, “আমরা ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। গিয়ে দেখি, ওই ঘটনা।” তিনি জানান, গুড্ডি ওর ভাইকে খুব ভালবাসত। বেশি ভাগ সময়ই ভাইকে নিয়ে কাটাত। বাইরে বেশি বেরোত না।” অন্য এক প্রতিবেশী বলেন, “গুড্ডি খুব ভাল মেয়ে। আমার মেয়ের সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব ছিল। হঠাৎ করে কী যে সব ঘটে গেল!” এলাকারই এক বাসিন্দা জানান, বছর বারো বয়েস হলেও একটু বড়সড় দেখতে ছিল গুড্ডি। খেলার ছলে ওড়না জড়িয়ে ফ্যানে ঝুলতে কেন গেল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। |