কোটার জমি তাঁরও, তাই ‘নৈতিক’ অসম্মতি
হিডকো-তদন্তের ভার নেবেন না প্রাক্তন বিচারপতি
তিনি নিজেই হিডকো-র ‘সৌজন্যে’ চেয়ারম্যানের বিশেষ কোটায় জমি নিয়েছিলেন। তাই ‘নৈতিক’ কারণে হিডকো-র জমি কেনাবেচা নিয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রণজিৎ মিত্র। সোমবার তিনি এই বক্তব্য চিঠি লিখে সরকারকে জানিয়েও দিয়েছেন!
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, বাম জমানায় নিউ টাউনের জমি কেনাবেচা ও বিলি-বণ্টন নিয়ে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, এবং তাঁর দল ক্ষমতায় এলে সে সব তদন্ত করে দেখা হবে। সেই মতো গত ১৩ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাঁর সরকার জানিয়ে দেয়, নিউটাউনে হিডকো-র জমি বণ্টন খতিয়ে দেখতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গড়া হল, যার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রাক্তন বিচারপতি রণজিৎ মিত্রকে।
তদন্তের কাজ শেষ করতে কমিশনকে তিন মাসের সময়সীমাও বেঁধে দেয় সরকার। আনুষ্ঠানিক ভাবে কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মুখ্যসচিব সমর ঘোষের দেওয়া চিঠি গত সপ্তাহের শেষাশেষি রণজিৎবাবুর বাড়িতে পৌঁছে যায় বলে মহাকরণের খবর। তাতে কমিশনের বিচার্য বিষয়গুলিরও উল্লেখ করা হয়। সরকারের প্রত্যাশা ছিল, অন্যান্য বিচারবিভাগীয় কমিশনের মতো এ ক্ষেত্রেও সম্মতি জানিয়ে চিঠির উত্তর দেবেন ওই প্রাক্তন বিচারপতি। কিন্তু মুখ্যসচিবের চিঠির উত্তরে রণজিৎবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, নৈতিক কারণেই তাঁর পক্ষে এই দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়।
সূত্রের খবর: হিডকো-র চেয়ারম্যান হিসেবে পূর্বতন সরকারের আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবের ‘বিশেষ কোটা’ নিউটাউনে চালু ছিল। রণজিৎবাবু যে সেই ‘কোটা’তেই জমি পেয়েছেন, তা সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসে। নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়ায় বসতবাড়ির জন্য চিহ্নিত জমিটির আয়তন প্রায় সাড়ে চার কাঠা। এ প্রসঙ্গে রণজিৎবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মঙ্গলবার তিনি শুধু বলেন, “মুখ্যসচিবকে গত কালই উত্তর লিখে পাঠিয়েছি। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।” উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে হিডকো-য় চেয়ারম্যানের কোটা-ই তুলে দিয়েছেন।
নিউ টাউনে ওই বিশেষ কোটায় কারা জমি ও ফ্ল্যাট পেয়েছেন, তা নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। যার ‘অবসান’ ঘটাতে গত বছর কোটার জমি-প্রাপকদের তালিকা সাংবাদিকদের দেন গৌতমবাবু। তাতে পরিষ্কার, রণজিৎবাবুর মতো চেয়ারম্যানের কোটার ‘সৌজন্যে’ নিউ টাউনে জমি পেয়েছেন ‘বিশিষ্ট’ নাগরিকদের অনেকেই। তালিকায় প্রাক্তন-বর্তমান মিলিয়ে আরও প্রায় ২০ জন বিচারপতির নাম রয়েছে। রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের প্রধান তিন স্তম্ভ আইএএস, আইপিএস, ডব্লিউবিসিএস-দের নামও কম নয়। দেখা যাচ্ছে, বিশেষ কোটার সুযোগ পেয়েছেন ৪৪ জন আইএএস, ৩২ জন আইপিএস, ১২ জন বিসিএস। ২২ জন ডাক্তার, ৯ জন ইঞ্জিনিয়ার, ৫ জন আইনজীবী এবং প্রায় ২০ জন ‘সমাজকর্মী’ও রয়েছেন গৌতমবাবুর তালিকায় পাশাপাশি রাজ্যের বর্তমান ও পূর্বতন মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যের নামও দেখা গিয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, কংগ্রেস-তৃণমূল-বামফ্রন্টের বিভিন্ন শরিকদলের নেতা-নেত্রী ও তাঁদের পরিবার-পরিজনেরা নিউটাউনে চেয়ারম্যানের কোটায় জমি পেয়েছেন। জমি পেয়েছেন সব পক্ষেরই বেশ কিছু সাংসদ, বিধায়ক। আবার সঙ্গীত ও ক্রীড়াজগতের বিশিষ্ট লোকজন যেমন বাদ যাননি, তেমন প্রাক্তন সেনা, ব্যাঙ্ক, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি অফিসারেরাও তালিকায় আছেন। অধিগ্রহণের ফলে বাস্তুচ্যুত কিছু পরিবারকেও বিশেষ কোটায় জমি দেওয়া হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতেই গৌতমবাবুর দাবি ছিল, নিউটাউনে নিয়ম মেনেই হিডকো-র জমি ও ফ্ল্যাট বিলি করা হয়েছে। অন্য দিকে মমতার বক্তব্য, এই পদ্ধতিতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সেই বিতর্কের অবসান ঘটাতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের যে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল, রণজিৎবাবুর ‘অসম্মতি’র জেরে তার গোড়াতেই হোঁচট খেল রাজ্য। সরকারের এক মুখপাত্র রসিকতাচ্ছলে বলেন, “আমাদের এমন বিচারপতি খুঁজতে হবে, যিনি প্রাক্তন এবং যাঁর নিউটাউনে বিশেষ কোটায় জমি নেই!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.