দেবোত্তর সম্পত্তি একটি পুকুরের অংশের দখলি সত্ত্ব টাকার বিনিময়ে দিয়ে দিয়েছে পরিবার। দুর্গাপুরের গোপীনাথপুর মৌজায় নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে এই কাজ করার অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। মহকুমাশাসকের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। ওই পরিবারের অবশ্য দাবি, পুকুরটি থেকে বর্তমানে কোনও আয় হয় না। দেবীর পুজো চালাতে শরিকেরা সমস্যায় পড়েন। সে জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষা রানি এ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সগড়ভাঙা সংলগ্ন গোপীনাথপুর মৌজার ওই পুকুরটির আয়তন প্রায় ৪২৪ বিঘা। চার দিকে কয়েকশো বিঘা জমি আছে। এলাকায় পুকুরটি ‘বাঁধ’ নামে পরিচিত। আগে বৃষ্টি হলে নালা দিয়ে জল এসে জমা হতো পুকুরে। তখন মাছচাষ হতো। সংলগ্ন এলাকার জমিতে সেচও দেওয়া হত ওই পুকুরের জলে। এ ছাড়া দৈনন্দিন প্রয়োজনে বাসিন্দারা পুকুর ব্যবহার করতেন। পরে নালার অভিমুখ বদলে যাওয়ায় পুকুরটি শুকিয়ে যায়। দেবোত্তর সম্পত্তি ওই পুকুরের মালিক এলাকার চট্টোপাধ্যায় পরিবার। বর্তমানে ওই পুকুরের শরিক পরিবারের সদস্য প্রায় ১৪৭ জন। প্রবীণেরা জানান, জল না থাকায় পুকুরের একাংশে চাষ শুরু করেন এলাকার অনেকে। শরিকদের একাংশের অভিযোগ, তার আয় তাঁরা পান না। শরিকদের পক্ষে সত্যব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ চাষিদের বারণ করলেও তাঁরা শোনেন না। অনেকে আবার জায়গা দখল করে ঘর গড়তে শুরু করেছে।” |
ওই পরিবার সূত্রে জানা যায়ছ, সমস্যা মেটাতে অর্থের বিনিময়ে দখলি সত্ত্ব ওই চাষিদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই খবর জানাজানি হতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। তাঁদে অভিযোগ, দেবোত্তর সম্পত্তির দখলি সত্ত্ব এ ভাবে দেওয়া হতে পারে না। তাতে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে। স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ মুদি, সোমনাথ দাসেরা বলেন, “পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়। তাই অর্থের বিনিময়ে দখলি সত্ত্ব দেওয়ার নিয়ম খাটে না। কেউ এক বার জমি দখল করলে তাঁকে আর তোলা যাবে না।” চট্টোপাধ্যায় পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শরিকও বলেন, “এর আগে পুকুরের প্রায় ৭২ বিঘা জমি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা সেটা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা নিয়ে অন্যকে দখলি সত্ত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য নয়।”
সম্প্রতি এলাকার বাসিন্দারা মহকুমাশাসকের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। মহকুমাশাসক আয়েষা রানি এ জানান, এই ধরনের অভিযোগ পেলে তা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তা করা হবে। |