চারটে বছর বড় লম্বা সময়। ক্লান্তির, অস্বস্তিরও। দেশ-বিদেশে ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তোলা রুপোলি পর্দার মহাতারকার কাছে তো আরও। বিশেষত যদি এই চার বছরের মধ্যে তাঁর ‘ব্লকবাস্টার’ হিটের সংখ্যা হয় শূন্য!
চার বছর। আরও মেপে বলতে গেলে ঠিক ৪৯ মাস আগে মুক্তি পেয়েছিল ‘ওম শান্তি ওম’। আর সেটাই শাহরুখ খানের ‘সর্বশেষ’ দাদাগিরি।
‘ওম শান্তি ওম’-এর পর খুচরো কয়েকটা ছবিতে ‘বিশেষ উপস্থিতি’ ছাড়া এই চার বছরে চারটে ফিল্ম করেছেন শাহরুখ। দু’টোর প্রযোজক তিনি নিজে ‘বিল্লু’ আর ‘রা ওয়ান’। অন্য দু’টো হল, আদিত্য চোপড়ার ‘রব নে বনা দি জোড়ি’ এবং কর্ণ জোহরের ‘মাই নেম ইজ খান’। মোটামুটি ব্যবসা করেছে ছবিগুলো। কিন্তু এই ফিল্মগুলোর পাশে শুধুমাত্র সাফল্যের নিরিখেও ‘থ্রি ইডিয়টস’ বা ‘দাবাং’কে রাখলে যা দাঁড়াচ্ছে, সেটা শাহরুখ-ভক্তদের কাছে মোটেও সুখকর নয়।
আজ, শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ‘ডন-২’। ছবির স্লোগান ‘দ্য কিং ইজ ব্যাক!’ অথচ বাস্তব পরিস্থিতি বহু বিশেষজ্ঞকেই বলতে বাধ্য করছে ‘কিং’-এর রাজ্যপাটটাই টলোমলো নয়তো!
স্রেফ ব্যবসার দিকটা দেখা যাক। আমিরের ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর আয় ২০২ কোটি, ‘গজনি’র ১৩০ কোটি। সলমনের ‘দাবাং’, ‘বডিগার্ড, ‘রেডি’ তিনটে ছবিরই ব্যবসা একশো কোটি ছাড়িয়েছে। ‘বডিগার্ড’ এক দিনে ২১ কোটি পর্যন্ত তুলেছে। এমনকী অজয় দেবগণের ‘সিংহম’-এর লাভের খাতাতেও ১২৫ কোটি। সেখানে ২২ কোটি বাজেটের ‘রব নে..’ ব্যবসা করেছে ৫০ কোটি। ১১০ কোটি বাজেটের ‘মাই নেম ইজ খান’-ভারতীয় বাজারে ৬০ কোটিও তুলতে পারেনি। ‘রা ওয়ান’-এ ১৬০ কোটি খরচ করে শাহরুখ সুপারহিরো সাজলেন। ভেতরের খবর বলছে, ‘রা ওয়ান’ তৈরির খরচটুকুও ওঠেনি। |
কোথায় গেল শাহরুখ-জাদু? তিনি যা ছুঁয়েছেন, তা-ই তো সোনা হয়ে এসেছে এত দিন। তা হলে এখন সমস্যাটা হচ্ছে কোথায়? শাহরুখের ঘনিষ্ঠ মহল আর বেশ কয়েক জন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, প্রধানত দু’টো জায়গায় বড্ড ভুল করে বসে রয়েছেন শাহরুখ।
প্রথমটা হল, তরুণ, প্রতিশ্রুতিমান পরিচালকদের দিকে ফিরেও না তাকানো। সেই দলে মুন্নাভাই সিরিজ আর ‘থ্রি ইডিয়টস’-খ্যাত রাজকুমার হিরানি তো আছেনই, তা ছাড়াও আছেন ইমতিয়াজ আলি, দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়, মিলন লুথরিয়া, অভিনব কাশ্যপ, অভিনয় দেও, নীরজ পাণ্ডেরা। ‘জব উই মেট’, ‘লাভ সেক্স অওর ধোঁকা, ‘ডার্টি পিকচার’, ‘দাবাং’, ‘দিল্লি বেলি’ বা ‘আ ওয়েডনেসডে’র মতো ছবি বানিয়ে এঁরা বলিউডি ছবির সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিচ্ছেন। এই নবাগতদের সঙ্গে আমির-সলমন এমনকী রণবীর কপূরও পরের পর কাজ করে চলেছেন। কিন্তু শাহরুখ তাঁদের দিকে ফিরে তাকাননি। এক পরিচালক বলছিলেন, “শাহরুখ আসলে আমির-সলমনের মতো ঝুঁকিই নিচ্ছেন না। আমির ‘দিল্লি বেলি’ বা ‘ধোবি ঘাট’-এর মতো ছবি করছেন। সলমনও নতুনদের সঙ্গে কাজ করছেন। কিন্তু শাহরুখ সেই এক পরিচালকদের নিয়েই পড়ে থাকায় তাঁর গোটা ব্যাপারটাই কেমন বাসি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” ‘সেই এক পরিচালক’। অর্থাৎ কর্ণ জোহর, আদিত্য চোপড়ারা। মজার ব্যাপার, তাঁরাও এখন শাহরুখকে ছেড়ে আমির, সলমন, রণবীর, ইমরান খানদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আদিত্য চোপড়াদের প্রযোজনা ‘ধুম থ্রি’তে রয়েছেন আমির, ‘এক থা টাইগার’-এ সলমন। শাহরুখ নেই!
কেন? উঠে আসছে শাহরুখের বিরুদ্ধে এক গুরুতর অভিযোগ। তাঁর দু’নম্বর ভুল পরিচালকের উপরে ক্রমাগত খবরদারি। এক বিশেষজ্ঞের মতে, ঠিক এই জায়গাতেই আমিরের সঙ্গে শাহরুখের তফাত। কোনও ছবি সই করার পর থেকেই আমির তাঁর পরিচালকের একান্ত অনুগত। কিন্তু শাহরুখের সঙ্গে কাজ করার সময়ে পরিচালকের স্বাধীনতাই থাকে না। বিশাল ভরদ্বাজ চেয়েছিলেন শাহরুখকে নিয়ে কাজ করতে। কিন্তু শাহরুখ নাকি এত বার চিত্রনাট্য বদলেছেন যে বিশাল ভাবছেন, আদৌ ছবিটা করবেন কি না।
এই পরিস্থিতিতে ৮০ কোটির বাজেটের ফিল্মে আজ ডনের ‘পুনরাবির্ভাব’। নবীন প্রজন্মের পরিচালক ফারহান আখতারের কাঁধে চেপেই। বিশ্বের প্রায় তিন হাজার সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘ডনে’র সাধারণ এবং ‘থ্রি-ডি’ সংস্করণ। পশ্চিমবঙ্গের ২৪৬টা হলের মধ্যে ২১টায় দেখা যাবে ‘থ্রি-ডি’ ডনকে। দেশজুড়ে অগ্রিম বুকিং ভালই হয়েছে। যদিও তার জন্য বড়দিনের ছুটিটাকেই বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য-বিশেষজ্ঞরা। এই শুক্রবার হয়তো উত্তর দেবে অনেক প্রশ্নের। ‘ডন-২’-তেই কি ফিরে আসবে শাহরুখের সোনালি জাদু? নাকি মেরেকেটে পাশ নম্বরটুকু উঠলেও টলোমলোই রয়ে যাবে শাহরুখ-সাম্রাজ্য?
৪৯ মাস তো সত্যিই অনেকটা সময়। ‘কিং’ তাঁর রাজ্যপাট ফিরে পাবেন তো? |