ভুল বুঝেছেন, দাবি হাসপাতালের
চিকিৎসা-বিলে অনিয়মের নালিশ বিদেশি রোগীর
লকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা-পরিকাঠামো নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে আমরি-কাণ্ড। এ বার একই শহরের আর এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা-বিল নিয়ে ‘অনিয়ম’-এর অভিযোগ উঠল। এবং তা তুললেন বাইরের দেশ থেকে আসা এক রোগীর পরিজন।
চিকিৎসকমহলের একাংশের মতে, পরের পর এমন সব ঘটনায় এ রাজ্যের হাসপাতালগুলোর নির্ভরযোগ্যতা নিয়েই কিছুটা সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজমের’ প্রসারে সরকারে উদ্যোগ এতে ধাক্কা খেতে পারে বলে স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা। যদিও এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি অস্বীকার করে দাবি করেছেন, রোগীরই ‘বুঝতে ভুল’ হয়েছে।
বাংলাদেশের কুমিল্লার বাসিন্দা হানিফ ভুঁইয়া নিজের চিকিৎসা করাতে ডিসেম্বরের গোড়ায় কলকাতায় এসেছিলেন বন্ধু আলহাজ মহবুব আলমের সঙ্গে। বাইপাসে কাদাপাড়ার কাছে বেসরকারি হাসপাতালটিতে টিএমটি এবং ইকো করার পরে অ্যাঞ্জিওগ্রামের জন্য ২০ হাজার টাকায় দু’দিনের ‘প্যাকেজে’ ভর্তি হন হানিফ। অ্যাঞ্জিওগ্রামের পরে চিকিৎসক জানান, তাঁর দু’টো মূল ধমনীতে ব্লক রয়েছে, অবিলম্বে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে হবে। মহবুবের দাবি, অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টির খরচ জানতে চাওয়া হলে ডাক্তারেরা বলেছিলেন, চার দিনের প্যাকেজে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা লাগবে, বড় জোর পাঁচ হাজার টাকা বেশি।
মহবুব জানান, তখন তাঁদের কাছে অত টাকা ছিল না। হাসপাতাল ওঁদের বলে, ডিসচার্জের সময়ে টাকা মেটালেই চলবে। তাঁর অভিযোগ, বিল মেটানোর সময়ে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করলে তাঁকে ২ লক্ষ ২৫ হাজারের বিল ধরানো হয়। মহবুবের অভিযোগ, “আমি বার বার ওঁদের বলি, রোগী ১ লাখ ৮০ হাজারের প্যাকেজে ভর্তি হয়েছে। কেউ শোনেনি। উপরন্তু বলে, টাকা না-মেটালে রোগীকে ছাড়া হবে না!”
এর পরেই ফুলবাগান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মহবুব। তাঁর কথায়, “আমরা থানায় গিয়েছি শুনে হাসপাতাল রোগীর উপরে নানান মানসিক চাপ তৈরি করতে থাকে। এমনকী, খাবার-ওষুধও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে আমরা ওদের দাবিমতো পুরো টাকা মিটিয়ে দিই। তখন আবার দু’হাজার টাকা কম নেয়।” হাসপাতালের কী বক্তব্য?
হাসপাতালের যুক্তি: রোগী ডর্মেটরিতে থাকবেন ভেবে প্রথমে ওই খরচের উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু রোগী পরে টুইন শেয়ারিং কেবিনে ছিলেন, তাই খরচ বেশি হয়েছে। হাসপাতালটির জেনারেল ম্যানেজার রানা দাশগুপ্তের কথায়, “আমরা রোগীকে আগাম খরচের হিসেব (এস্টিমেট) দিই। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক হানিফ ভুঁইয়াকেও তা দিয়েছিলেন। ওঁর বাড়ির লোককেও বুঝিয়ে বলা হয়েছিল। তার পরেও এই অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক।” মহবুবের অবশ্য পাল্টা যুক্তি, “অ্যাঞ্জিওগ্রামের সময়ে রোগী টুইন শেয়ারিং ঘরে ছিলেন। অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টির পরেও তা-ই। অতএব কোনও পক্ষেই বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।” এই জাতীয় অভিযোগ সম্পর্কে সরকার কী ভাবছে? স্বাস্থ্য দফতরের প্রশাসনিক বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর হিমাদ্রি সান্যাল বলেন, “নানা অনিয়মের খবর আসছে। দেখা হচ্ছে, কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। মুশকিল হল, প্যাকেজের ব্যাপারটা প্রায় সর্বত্রই মুখে-মুখে হয়। পরে রোগীর তরফে কিছুই করার থাকে না।”
হানিফকে ১১ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও মহবুব কলকাতাতেই রয়ে গিয়েছেন। ২০০৮-এর ‘সেরা করদাতা’র সরকারি শংসাপত্রটি দেখিয়ে ওই ব্যবসায়ীর দাবি, “ওই বাড়তি টাকাটা দেওয়া কোনও সমস্যা নয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন, এ ভাবে ঠকানো হবে কেন?” বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে আসা আরও বেশ কিছু রোগীও মহবুবের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যাঁরা জানাচ্ছেন, কলকাতায় উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার আশায় বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন পড়শি রাষ্ট্রের বহু মানুষ এ শহরে আসেন। এমন ঘটনা তাঁদের মনে অবিশ্বাসের ছায়া ফেলতেই পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.