বিচারক তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। পুলিশি হাজতে রাখার মেয়াদ বাড়ানোর আর্জিও মানেননি। তিনি কার হেফাজতে থাকবেন, সেই নির্দেশও দেয়নি আদালত।
এই অবস্থায় আমরি-কাণ্ডে ধৃত, হাসপাতালের অন্যতম ডিরেক্টর রাধেশ্যাম অগ্রবাল কার হেফাজতে রয়েছেন, তা নিয়ে আইনজীবী এবং পুলিশকর্তারা
ধন্দে পড়ে গিয়েছেন। এরই মধ্যে ঢাকুরিয়া আমরির ধৃত ছয় ডিরেক্টরকে বুধবার সন্ধ্যায় দগ্ধ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তদন্ত চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। ভিডিওয় তুলে রাখা হয় সেই তদন্ত পর্ব। পরে তাঁদের মধ্যে তিন জনকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের এক অংশীদারের বাইপাসের অফিসে। সেখান থেকে কিছু নথিপত্র আটক করা হয়েছে।
সরকারি আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য বুধবার জানান, রাধেশ্যামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই হাসপাতালে থাকলেও সেই সময়টি তিনি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন বলেই ধরে নেওয়া হবে। তাঁরা এ দিন ওই আমরি-কর্তাকে পুলিশি হাজতে রাখারই আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। তাই রাধেশ্যাম এই মুহূর্তে পুলিশের হেফাজতে নেই। শক্তিবাবু বলেন, “রাধেশ্যাম কার হেফাজতে রয়েছেন, বিচারক তা জানাননি। এই নিয়ে আমরা রীতিমতো ধন্দে রয়েছি।
অভিযুক্তের তরফে এক আইনজীবী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে পুলিশি এবং বিচার বিভাগীয় হেফাজতের বাইরে অন্য কোনও হেফাজত নেই। বিচারক জামিনের আর্জি ও পুলিশি হেফাজতে রাখার আর্জি দু’টোই খারিজ করে দেওয়ায় তাঁরা বুঝতে পারছেন না, আসলে কোন হেফাজতে রয়েছেন রাধেশ্যাম।
বিভ্রান্ত পুলিশও। আদালতের নির্দেশে সোমবারেই ওই অভিযুক্তকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেই থেকেই তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। বুধবার সন্ধ্যা থেকে তিনি যে আর পুলিশি হেফাজতে নেই, তা জানিয়ে দেন তদন্তকারীরা। ওই অফিসারেরা জানান, তাঁরা জেরা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। সোমবারেই আদালত মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে রাধেশ্যামের শারীরিক অবস্থা কী, তা জানাতে বলেছিল এসএসকেএম-কে। পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর শারীরিক অবস্থা যাচাই করে। মঙ্গলবারেই আদালতে রিপোর্ট দেয় এসএসকেএম। কিন্তু সেই রিপোর্টে সন্তুষ্ট হতে পারেননি আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক চৌধুরী হেফাজত করিম। কাল, শুক্রবার চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে বলে মেডিক্যাল বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ দিন সন্ধ্যার মুখে এসএসকেএম থেকে একটি মুখবন্ধ খামে আরও একটি রিপোর্ট আদালতে পৌঁছয়। তত ক্ষণে আদালতের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
অভিযুক্তের আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্য এ দিন আদালতে বলেন, রাধেশ্যামের অবস্থা যে খুবই সঙ্কটজনক, মঙ্গলবার জমা পড়া মেডিক্যাল রিপোর্টে তা জানানো হয়েছে। তাই তাঁর মক্কেলকে সাধারণ বিভাগ থেকে আইসিসিইউ-এ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। তাঁর খাওয়াদাওয়ায় বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই তাঁকে বাড়ি থেকে খাবার সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হোক। রাধেশ্যাম আগে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাই সেখানকার কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে এসএসকেএমে গিয়ে চিকিৎসা করার সুযোগ দেওয়া হোক।
এই আবেদনের বিরোধিতা করে সরকারি আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য বলেন, “হাসপাতালে বাড়ির খাবার দেওয়ার নিয়ম নেই। বাইরের খাবার খেয়ে কোনও ঘটনা ঘটলে কে দায়ী হবেন?” বিচারক জানান, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন মেডিক্যাল বোর্ড এবং হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্তের অন্য আইনজীবী সেলিম রহমান তাঁর মক্কেলের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে জামিনের আর্জি জানান। সরকার পক্ষের আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় সেই আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, এখনও রাধেশ্যামের শারীরিক পরীক্ষার সাতটি রিপোর্ট মেলেনি। সেই রিপোর্ট পেতে দিন দুয়েক সময় লাগবে। এই অবস্থায় জামিন দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না। চূড়ান্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এ ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে বলে জানান বিচারক।
আমরি-কাণ্ডের অন্য তিন অভিযুক্ত রাহুল তোদি, প্রীতি সুরেখা এবং আদিত্যবর্ধন অগ্রবালের বিরুদ্ধে ‘লুক-আউট নোটিস’ জারি করতে চলেছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই নোটিস জারি করতে বিদেশ মন্ত্রকের সহায়তা লাগে। সেই সাহায্য মিলেছে। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন জানান, আজ, বৃহস্পতিবার ওই নোটিস জারি করা হতে পারে। |