রাজ্য এড্স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (স্যাক্স)-র বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির অনেকেই কাজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। উল্টে বরাদ্দ সব টাকাই তারা খরচ করে ফেলেছে বলে প্রমাণ পেল সরকার। শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্য দফতরের তদন্ত বলছে, ওই সব কাজের জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে যে ভাবে বাছাই করা হয়েছে, তার প্রক্রিয়াতেও গলদ যথেষ্ট।
স্যাক্সের বিভিন্ন প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচন থেকে শুরু করে খরচে-বরাদ্দের হিসেব সব কিছুতেই নানা গোলমাল রয়েছে বলে বেশ ক’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অভিযোগ জানিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরে। যার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়া অধিকাংশ অভিযোগেরই সারবত্তা রয়েছে। কী রকম?
রিপোর্ট বলছে, ২০০৭ থেকে ২০১১-র মধ্যে এইচআইভি-আক্রান্তদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প এবং প্রচার-কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবী বাছাইয়ে স্বজনপোষণ হয়েছে। উপরন্তু ‘বাছাই’ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দেওয়া টাকা কী ভাবে খরচ হল, তার ঠিকঠাক হিসেব মিলছে না। রিপোর্টের ভাষায়, “স্যাক্সের বরাদ্দ অর্থের ৬০% বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু খরচের হিসেব দাখিলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ম-কানুনের ধার ধারেনি।” তদন্ত কমিটির প্রধান, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাছাইয়ে এবং টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ হয়েছে। প্রচুর ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক প্রকল্পের দায়িত্ব অর্পণের সময়ে দরপত্র খতিয়ে দেখা হয়নি। তদন্ত চলাকালীনও বহু অভিযোগ পেয়েছি। তাই চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশের সময়সীমা আরও এক মাস বাড়াতে হয়েছে।” |
‘কাজে গাফিলতির’ জন্য যাদের দিকে প্রাথমিক ভাবে কমিটির আঙুল উঠেছে, তার মধ্যে রয়েছে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের স্ত্রী উষা মিশ্র পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। পশ্চিম মেদিনীপুরে কাঁকুড়দহের ওই সংস্থার সচিব ঊষাদেবী। পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা-শঙ্করপুর অঞ্চলে ভ্রাম্যমান যৌনকর্মীদের মধ্যে কাজ করার জন্য সংস্থাটিকে ২৮ লক্ষ টাকার এক প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, ২০০৮-এ। তদন্ত কমিটি-সূত্রের খবর: কথা ছিল, প্রকল্পটিতে ‘অফিসকর্মী’দের ৯৮% হবেন যৌনকর্মী। কিন্তু দেখা গিয়েছে, তা আদৌ ছিল না।
উষাদেবী অবশ্য বলছেন, “সূর্যকান্তবাবুকে অপদস্থ করতেই আমার সংস্থা নিয়ে ওরা বিনা প্রমাণে কুৎসা রটাচ্ছে।” আর সূর্যকান্তবাবুর মন্তব্য, “ওদের যত ইচ্ছে, তদন্ত করুক! দেখা যাক, দুর্নীতির কী প্রমাণ পায়।”
প্রাথমিক তদন্ত-রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘বুলাদি’ প্রচার-প্রকল্পে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারফত ১৬ কোটি টাকা খরচের হিসেব মেলেনি। রাজ্যে কত লোক ইঞ্জেকশনে মাদক নিচ্ছে, তার গণনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটি সংস্থাকে। প্রথমে তারা দেখায়, সংখ্যাটা ১৮ হাজার। পরে দেখা যায়, তা আসলে ৩ হাজার। এবং এর পরেও ওদের আরও টাকা দেওয়া হয়েছে। দু’টি সংগঠনের তৈরি এইচআইভি-প্রবণতার মানচিত্র নিম্নমানের বলে স্যাক্স রায় দেওয়া সত্ত্বেও তারা ফের টাকা পেয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এর পরে স্বাস্থ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মী-অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। |