হিমঘরে আলু ধরে রেখে ‘আত্মঘাতী’ কৃষক
বেশি লাভের আশায় হিমঘরে মজুত রাখা আলু শেষমেশ বিক্রি করতে না-পারায় আত্মঘাতী হলেন ঋণভারে জর্জরিত এক চাষি।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম রবিন বর্মন (৫৫)। বাড়ি ধূপগুড়ির মাগুরমারি-১ পঞ্চায়েতের পশ্চিম মাগুরমারি গ্রামে।
রবিন বর্মন
বুধবার সকালে বাড়ি থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে আলু খেতের পাশেই আমগাছ থেকে দড়ি ফাঁসে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ মেলে। মানসিক অবসাদের জেরেই তিনি আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন বলে পুলিশের অনুমান।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শীতে আলু ওঠার পরে মোটামুটি দাম পাওয়া গেলেও বেশি লাভের আশায় হিমঘরে ৮০ কুইন্ট্যাল আলু রেখেছিলেন রবিনবাবু। ইতিমধ্যে ফের নতুন আলু উঠতে শুরু করায় তার দাম তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু এ দিন জলপাইগুড়িতে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে এসে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে রাজ্যে সাত কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। নতুন সরকার আসার পাঁচ মাসের মধ্যেই। আজ ফের ধুপগুড়ির ঘটনা ঘটল।” পূর্ব মাগুরমারি গ্রামে ৫ কাঠা জমিতে দরমার বেড়া ও টিনের চাল দেওয়া চারখানা ঘর রবিনবাবুদের। বাড়তি জমি নেই। বাড়িতে আছেন স্ত্রী, দুই ছেলে রামপ্রসাদ ও রামচন্দ্র এবং মা একাদশী দেবী। তাঁরা জানান, গত ১২ বছর ধরে লিজে জমি নিয়ে আলু চাষ করে আসছিলেন রবিনবাবু। ২০০৯ সালে ৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ভাল লাভও করেন। তাতেই উৎসাহিত হয়ে গত বছর নভেম্বরে নিজের জমানো টাকার পাশাপাশি দু’লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেন। ফলন ভাল হয়েছিল। গোড়ায় বাজারদরও মন্দ ছিল না। ৫০ হাজার টাকায় ১০ কুইন্টাল আলু বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু বেশি লাভের আশায় রবিনবাবুর মতো কিছু চাষি হিমঘরে আলু রাখেন। ধূপগুড়ি ও ফালাকাটা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে আলু রফতানি হয়। তার জেরে গত বছর ১০ কুইন্ট্যাল আলুর দাম ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ১ লক্ষ ২০ হাজারে পৌঁছেছিল। কিন্তু এ বার আর তা হয়নি। উত্তর-পূর্বে তেমন চাহিদা না থাকায় বরং কিছু দিন পরেই আলুর দাম পড়তে শুরু করে।
হিমঘরও আর পুরনো আলু রাখতে চাইছিল না।
রবিনবাবুর বাড়ির লোকজন জানান, অক্টোবরের শেষে হিমঘরই তাঁদের ৩০ কুইন্টাল আলু বিক্রি করে দেয়। পাওনাদাররা নিয়মিত বাড়িতে এসে তাগাদা দিচ্ছিল।
দেনা মেটাতে একটি হিমঘর থেকে ফের ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন রবিনবাবু।
‘আত্মঘাতী’ আলুচাষির শোকার্ত পরিবার। ছবি: রাজকুমার মোদক

তাঁর ভাই, দিনহাটার বাসিন্দা গোবিন্দ বর্মন বলেন, “দাদা কয়েক বার ফোন করে টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি নিজেই পাটের দাম পাইনি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় দাদা আত্মহত্যা করলেন।”
মৃতের স্ত্রী আরতি দেবী বলেন, “হিমঘর থেকে আলু বের করার খরচটুকুও উঠবে না বুঝে মানুষটা কেমন হয়ে গিয়েছিলেন।”
একই অবস্থা আরও কিছু চাষির। জলপাইগুড়ির কৃষি বিপণন আধিকারিক গোষ্ঠ দাস বলেন, “বর্তমানে জেলার হিমঘরগুলির ৪ শতাংশে আলু রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা রাখা যাবে।”
মাগুরমারির চাষি জগদীশ রায় বলেন, “আমারও ৩৫ কুইন্টাল আলু হিমঘরে রয়েছে। নতুন আলু উঠে যাওয়ায় তা ৪০ পয়সা কিলোয় কেনারও লোক নেই।”
ধূপগুড়ির সিপিএম বিধায়ক মমতা রায়ের দাবি, “হিমঘরে মজুত আলু সরকারকে উপযুক্ত দামে কিনতে হবে। রবিনবাবুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “বিডিও-কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে বলেছি। আপাতত মৃতের পরিবারকে কিছু অনুদান দেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.