|
|
|
|
কলকাতার কলজে কাঁপিয়ে হাওড়ায় শৈত্যপ্রবাহ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দক্ষিণবঙ্গের চার জেলা বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও নদিয়া শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছিল শনিবারেই। তিন দিন যেতে না-যেতেই ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। এ বার পাঁচ জেলায়। বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়ার পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহ চলছে কলকাতার লাগোয়া দুই জেলা হাওড়া ও হুগলিতে। শৈত্যপ্রবাহ না-হোক, পারদ নামার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই কলকাতাও। বুধবার মহানগরীতে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। চলতি সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার থেকে যা তিন ডিগ্রি কম।
কাশ্মীরে যে-ভাবে বরফ পড়ছিল, উত্তর ভারতে যে-ভাবে পারদ নামছিল, তাতে এ রাজ্যেও ফের তাপমাত্রা নামার ইঙ্গিত একটা ছিলই। কিন্তু উত্তর ভারতের শীত-পরিস্থিতির প্রভাব যে এত তাড়াতাড়ি পশ্চিমবঙ্গে এসে পড়বে, সেটা আগে তেমন বোঝা যায়নি। সোম ও মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। শনিবারের শৈত্যপ্রবাহের ধকল কাটিয়ে উঠেছিল বিহার ও ঝাড়খণ্ডের লাগোয়া জেলাগুলি। কিন্তু উত্তর ভারতের তীব্র হাওয়া বিহার-ঝাড়খণ্ড হয়ে বুধবার ভোরে ঢুকে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। তাই এ দিন সকাল থেকে কনকনে ঠান্ডা এবং তার সঙ্গে তীব্র উত্তুরে হাওয়া হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল। বড়দিন পর্যন্ত এই ঠান্ডাটা রাজ্যে থাকবে বলে আশা করছেন আবহবিদেরা।
আসতে দেরি করছিল শীত। কিন্তু এল হুড়মুড়িয়ে। কী ভাবে বাড়ল শীতের দাপট? শীত দেরিতে এলেও উত্তুরে হাওয়া প্রথম থেকে যে-ভাবে দাপট দেখাচ্ছে, তাতে আবহবিজ্ঞানীরাও বিস্মিত। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “উত্তর ভারতের তীব্র হাওয়া এই মুহূর্তে বিহার ও ঝাড়খণ্ড দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিহারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির বেশি উঠতে পারছে না। ঝাড়খণ্ড জুড়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। তারই প্রত্যক্ষ প্রভাব এসে পড়েছে বাংলায়।” কোনও নির্দিষ্ট দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যদি সে-দিনের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে যায়, আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় সেই অবস্থাকে বলে শৈত্যপ্রবাহ। সেই হিসেবে বুধবার বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান শিল্পাঞ্চল, হাওড়া ও হুগলিতে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গিয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
ঝাড়খণ্ড ও বিহারের কনকনে হাওয়া ভোরের কুয়াশাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে যে-ভাবে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়ছে, তাতে এ বারের শীত নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে আবহবিজ্ঞানীদের মধ্যে। অনেক বছর পরে গত মরসুমে শীত লম্বা ইনিংস খেলেছিল এ রাজ্যে। এ বারেও উত্তুরে হাওয়ার ‘ব্যাটিং ফর্ম’ দেখে আবহবিদেরা চমৎকৃত।
আবহবিজ্ঞানীদের বিস্ময়ের আরও অন্তত তিনটি কারণ আছে। প্রথমত, রবিবার উত্তুরে হাওয়ার দাপটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি নেমে গিয়েছিল। এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে অন্তত সচরাচর ঘটে না। দ্বিতীয়ত, কনকনে উত্তুরে হাওয়ায় বিহারে টানা সাত দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এটাও কিছুটা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। তৃতীয়ত, দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে বরাবরই শীতের কামড়ে জোর থাকে বেশি। অথচ এ বার উত্তরবঙ্গের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখনও সে-ভাবে কমছেই না। এটাও অবাক করে দিচ্ছে আবহবিদদের।
উত্তরবঙ্গে শীত কবে স্বমহিমায় ফিরবে, সেটা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তবে কাশ্মীর এবং হিমাচলপ্রদেশের পাহাড়ে ফের বরফ পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। সেই ঠান্ডা নামবে এ রাজ্যেও। তাই শীতে আরও ভেল্কি দেখার জন্য প্রস্তুত আবহবিদেরা।
|
পারদ পতন |
জায়গা |
সর্বনিম্ন* |
কত কম • |
পানাগড় |
৫.৫ |
-৬ |
শ্রীনিকেতন |
৭.১ |
-৬ |
মগরা (হুগলি) |
৭.২ |
-৬ |
উলুবেড়িয়া |
৭.২ |
-৬ |
বাঁকুড়া |
৮.০ |
-৫ |
* ডিগ্রি সেলসিয়াস |
• এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে |
|
|
|
|
|
|