ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার (এফসিআই) বিরুদ্ধে নিম্মমানের গম দেওয়ার অভিযোগ তুলে বাঁকুড়া জেলায় এক মাস ধরে রেশনে গম ও আটা বিলি বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন রেশনের সব শ্রেণির উপভোক্তারা।
খাদ্য দফতরের অভিযোগ, ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’র গুদাম থেকে নিম্মমানের গম দেওয়া হচ্ছে। রেশনের উপভোক্তারা সেই গম নিতে চাইছেন না। তাই এপিএল ও অন্ত্যোদয় প্রকল্পে গম দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বিপিএল উপভোক্তাদেরও আটা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। একই অভিযোগ তুলেছে রেশন ব্যবস্থার ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটরিং কমিটি। তবে এফসিআই নিম্মমানের গম দেওয়ার অভিযোগ মানতে চায়নি।
জেলা খাদ্য নিয়ামক শঙ্করনারায়ণ বাঁকুড়ার অভিযোগ, “এফসিআই ভিজে ও পোকা ধরা গম দিচ্ছে। সেই গম বা আটা উপভোক্তাদের দেওয়া যাবে না। তাই উপভোক্তাদের আপাতত রেশনে গম ও আটা বিলি বন্ধ রাখা হয়েছে। ভাল মানের গম পাওয়ার পরে পুনরায় বিলি করা হবে।” তিনি জানান, এপিএল উপভোক্তাদের পাঁচ সপ্তাহ এবং বিপিএল ও অন্ত্যোদয় উপভোক্তাদের তিন সপ্তাহ ধরে গম-আটা বিলি বন্ধ রয়েছে। তাঁকে সমর্থন করেছেন ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটরিং কমিটি’র চেয়ারম্যান তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদার। তাঁরও অভিযোগ, “নিম্মমানের গম-আটা লোকে খাবেন কী করে? আমরা ওই গম বিলি করতে পারবো না। এফসিআই-কে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ভাল মানের গম পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।” এফসিআই-এর বাঁকুড়ার এরিয়া ম্যানেজার বি ও মহেশ্বরাপ্পা অবশ্য নিম্মমানের গম সরবরাহ করার অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “ভাল মানের গম এসেছে। ওদের অভিযোগ ঠিক নয়।”
শীতে অনেকে ভাতের বদলে রুটি পছন্দ করেন। ফলে এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ওই তিন শ্রেণির উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় ৩৫ লক্ষ। এপিএল উপভোক্তারা কিলো প্রতি ৬.৭৫ টাকায় ও অন্ত্যোদয় প্রকল্পের উপভোক্তারা ২ টাকা কিলো দরে রেশন দোকান থেকে গম পান। বিপিএল কার্ড প্রাপকেরা ৫ টাকায় ৭৫০ গ্রাম আটা পান। যা খোলা বাজারের থেকে বেশ কম দাম। তাই হঠাৎ করে রেশনে গম ও আটা দেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। বাঁকুড়া শহরের বড়কালীতলার স্বপন নাগ, রথতলার অভিজিৎ দাস, পুরনো রথতলার কার্তিক দাসরা বলেন, ‘রেশন গম-আটা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য দিকে খোলা বাজারে শীত পড়তেই আটার দাম চড়ে গিয়েছে। খাব কী?” অন্য দিকে, উপভোক্তাদের ক্ষোভের আঁচ পৌঁছে গিয়েছে রেশন দোকানেও। কয়েক বছর আগে গমের জোগান কম হওয়ার কারণে এই জেলাতেই প্রথম রেশন অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। পরে তা রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই রেশনে গম-আটা বিলি বন্ধ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রেশন ডিলাররা। ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক তরুনকান্তি দাশ বলেন, “গম-আটা না পেয়ে গ্রাহকরা নানা প্রশ্ন তুলছেন। অনেকে নানা রকম অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের সামাল দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” তাঁদের দাবি, দ্রুত সমস্যা কাটিয়ে রেশনে ভাল মানের গম ও আটা বিলি করার ব্যবস্থা করা হোক।
এফসিআই-এর আদ্রার গুদামে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন গম রয়েছে। বাঁকুড়া জেলা খাদ্য দফতর সেখান থেকে গম নেওয়া শুরু করেছে। এফসিআই-এর এরিয়া ম্যানেজার বলেন, “খাদ্য দফতরকে বলেছি এই গমের মানও ভাল। ওরা সেই গম তোলা শুরু করেছে।” জেলা খাদ্য নিয়মক বলেন, “ওই গমের পরিমাণ কম। তাই তা প্রথমে অন্ত্যোদয় উপভোক্তাদের বিলি করা হবে। তবে এই গম নিয়েও ফের অভিযোগ উঠলে তা আর বিলি করা হবে না।” তবে বাকি উপভোক্তারা কবে থেকে রেশনে গম পাবেন তা জানাতে পারেনি খাদ্য সরবরাহ দফতর। |