চিঠি দিলেন পাঁচ কাউন্সিলর
পুরপ্রধান-সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
ন্নয়নের কাজের বরাত ‘পাইয়ে দিতে’ এক ঠিকাদারের কাছে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত পুরুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ উঠেছে পুরসভার আরও দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
তবে এই অভিযোগ পুরসভায় বিরোধী আসনে থাকা কংগ্রেস তোলেনি। বরং পুরপ্রধান ও ‘তাঁর কিছু সহযোগী কাউন্সিলর’-এর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জানিয়ে দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে চিঠি লিখেছেন পুরুলিয়া পুরসভারই পাঁচ তৃণমূল কাউন্সিলর (সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে আসা)। ওই ‘চরমপত্রে’ তাঁরা আগামী ৪ জানুয়ারির মধ্যে পুরপ্রধানের অপসারণ দাবি করেছেন। চিঠিতে ওই পাঁচ জনের বক্তব্য, “আমরা চাই সাংগঠনিক ভাবে আপনি এই বিষয়ের নিষ্পত্তি করুন। নচেৎ আমরা চরম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হব।’ শান্তিরামবাবুর মন্তব্য, “চিঠি পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
এই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি এবং স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক কে পি সিংহদেওকে।
পুরসভার সামনে বিক্ষোভে। ছবি: সুজিত মাহাতো।
জেলা প্রশাসন তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। যদিও পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্য দুই অভিযুক্ত কাউন্সিলর বৈদ্যনাথ মণ্ডল ও শামিমদাদ খানও এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন।
রাজ্য ও কেন্দ্রে তাদের জোটসঙ্গী হলেও পুরুলিয়া শহরে দু’দলের সম্পর্ক বড় একটা ‘মধুর’ নয়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমন ‘অস্ত্র’ পেয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই ময়দানে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। ঘুষ চাওয়ার অভিযোগকে সামনে রেখে পুরপ্রধানের অপসারণ দাবি করে বুধবার পুরসভার সামনে বিক্ষোভও দেখান কংগ্রেস কর্মীরা। ঘটনাচক্রে অভিযোগকারী পাঁচ জনও সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেসের দাবি, তারা পুরপ্রধান ও তৃণমূল পরিচালিত বর্তমান পুরবোর্ডের ‘দুর্নীতি’ সম্পর্কে নির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য জেলাশাসকের কাছে জমা দিয়েছে। অভিযোগের তদন্তের দাবিতে পুরুলিয়া শহর বন্ধ ডাকার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কংগ্রেস।
এ দিন পুরসভা ভবনেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে পুরপ্রধান-সহ তিন তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস। শহর কংগ্রেস নেতারাও সেখানে ছিলেন। বিভাসবাবুর দাবি, “বর্তমান পুরপ্রধান পুর-এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কলকাতার জনৈক ঠিকাদারের কাছে ঘুষ চেয়েছেন। পুরপ্রধানের ঘনিষ্ঠ আরও দুই তৃণমূল নেতাও ওই ঠিকাদারের কাছে ঘুষ চেয়েছেন। ঘুষের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে পুরপ্রধান ও এক তৃণমূল কাউন্সিলরের মোবাইলে কথোপকথনের রেকর্ডিং তদন্তের স্বার্থে জেলাশাসকের হাতে তুলে দিয়েছি।” মোবাইলের ওই ‘রেকর্ডিং’ তাঁরা সাংবাদিক বৈঠকেও শোনান। পাশাপাশি পুরসভার আরও কিছু প্রকল্পে দুর্নীতির কথাও তাঁরা জেলাশাসককে জানিয়েছেন বলে বিভাসবাবুর দাবি।
গোটা ঘটনার তদন্তের দাবিতে এ দিন বিকেলে শহরে মিছিল করেছে সিপিএম-ও। দলের পুরুলিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক কৌশিক মজুমদার বলেন, “আমরা এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছি। পুরপ্রধান ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। আমরা চাই, অভিযোগের উপযুক্ত তদন্ত হোক।”
যে পাঁচ জন কাউন্সিলর এই গুরুতর অভিযোগ করেছেন, তাঁরা হলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান সৈয়দ সাকিল আহমেদ, আনন্দ চৌধুরী, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলা সাউ ও সাজেজা পারভিন। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমান পুরপ্রধানের নেতৃত্বে কিছু কাউন্সিলর ‘দুর্নীতিতে নিমজ্জিত’। পুরসভার জনৈক ঠিকাদারের নিকট থেকে পুরপ্রধান ও তাঁর সহযোগী দুই কাউন্সিলর ঘুষ চেয়েছেন। শান্তিরামবাবুকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যা আইনত দণ্ডনীয় এবং সে কথোপকথন ‘ভয়েস রেকর্ড’ করে আপনার সমীপে তুলে ধরা হয়। কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত আপনি কোনওরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত। তাই আমাদের এই চরমপত্র’।
পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “এ সবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওই রেকর্ডিংয়ে কী প্রমাণ হয়? সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ। বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা না করে কাজ করা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উঠছে, তাও ঠিক নয়।” চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (বিদ্যুৎ ও জল) বৈদ্যনাথ মণ্ডলের দাবি, “পুরপ্রধান ও আমাদের অপদস্থ করার জন্যই এ সব করা হচ্ছে। ওই পাঁচ জন কিছু দিন আগেই কংগ্রেস ছেড়ে আমাদের দলে এসেছেন। আসলে ওঁরা ক্ষমতালোভী। আমরাই দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করছি। ক্ষমতা না পেয়ে এখন আমাদের বিরুদ্ধে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ ও চক্রান্ত করছেন।” প্রবীণ কাউন্সিলর শামিমদাদ খান বলেন, “এলাকার মানুষ আমাকে চেনেন। ’৮১ সাল থেকে আমাকে তাঁরা জিতিয়েছেন। মানুষই এই কুৎসার জবাব দেবেন।”
জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেছেন, “আমি এই মর্মে অভিযোগ পেয়েছি। কথোপকথনের একটি রেকর্ডিংও পেয়েছি। তদন্ত হবে। তদন্তে যা উঠে আসবে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।” পুরুলিয়ার বিধায়ক কে পি সিংহদেও বলেন, “দলের জেলা সভাপতিকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.