গোলাবাড়ি পল্লিমঙ্গল হাইস্কুলের শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ালেন অভিভাবক ও স্থানীয় মানুষ। তাঁদের ‘ভরসা’য় বুধবার বারাসতের ওই স্কুলে ক্লাস না হলেও চলল উচ্চ মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণের কাজ। তবে যে তৃণমূল নেতার ‘হুমকি’র জেরে মঙ্গলবার ওই স্কুলটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে এ দিন পর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। আর ওই নেতাকে স্রেফ সতর্ক করে ছেড়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
গত নভেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষায় টোকাটুকি করার অভিযোগে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর খাতা বাতিল করেন ওই স্কুলের এক শিক্ষক। ওই ছাত্রীর বাবা স্থানীয় তৃণমূল নেতা রফিকুর রহমান স্কুল পরিচালন কমিটিরও সহ-সভাপতি। মেয়েকে পাশ করানো হবে না বুঝেই রফিকুর দফায় দফায় এলাকার সমাজবিরোধীদের নিয়ে স্কুলে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে শিক্ষকদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। রফিকুর অভিযোগ মানেননি। কিন্তু মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে স্কুলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। স্কুল বন্ধ হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ প্রক্রিয়াও থমকে যায়।
এ দিন ওই স্কুলে কিছু অভিভাবক ও স্থানীয় মানুষ জড়ো হন। তাঁরাই স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং পরিচালন সমিতিকে ‘অভয়’ দেন, স্কুল খুলে ফর্ম পূরণের কাজ চলুক। তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রয়েছেন। অভিভাবকদের কথায়, “কে কী করবে জানি না। এখানে আমাদের বাচ্চারা পড়ে। তাই আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়িয়েছি।”
তৃণমূল প্রভাবিত স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, “অভিভাবক ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় আমরা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের যোগাযোগ করে স্কুলে আসার ব্যবস্থা করি। তবে অনেকেই এখনও ভয়ে রয়েছেন।” প্রধান শিক্ষক সফি আলম বলেন, “এ দিন ফর্ম পূরণের কাজও হয়েছে।” কিন্তু রফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হল না কেন? স্কুল কর্তৃপক্ষের জবাব, “স্কুলে তো আসতে হবে!”
বহু চেষ্টা করেও এ দিন রফিকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “ওই ব্যক্তিকে দল সতর্ক করেছে। স্কুলে গিয়ে ফের অন্যায় করলে ওঁকে পরিচালন সমিতি থেকে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে বলা হয়েছে, তেমন কিছু হলে ওঁকে দল থেকেও সরিয়ে দিতে।”
তবে তৃণমূল নেতৃত্বের এই ‘ভূমিকা’য় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, “পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি নিয়ে গোলমালের জেরে শনিবার যাদবপুর বিদ্যাপীঠে শিক্ষকদের মারধর করা হয়। পর দিনই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব তেমন সক্রিয় হলেন না কেন?” |