|
|
|
|
মায়ের জামিনের টাকা জোগাড়ে অপহরণের চেষ্টা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
মা হাজতে। জামিনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে তাই ব্যবসায়ী-অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার রাস্তাই বেছে নিয়েছিল সে। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে তুলেও নিয়ে যাওয়া-- এই পর্যন্ত সবই ‘ঠিকঠাক’ ছিল। কিন্তু বাধ সাধলেন পাড়ার লোকজন। তার ‘গোপন আস্তানা’ ঘিরে হাতেনাতে ধরেও ফেললেন অপহরণকারী ওই যুবককে। তারপর উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেলেটিকে তুলে দিলেন পুলিশের হাতে।
গুরুতর জখম সেই পরিচিত সমাজবিরোধী যুবক আপাতত কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। তার মা-ও অবশ্য কম যান না! পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলাও মাদক পাচারকারী হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। হেরোইন বিক্রেতা হিসেবে তাকেও কিছু দিন ধরেই খুঁজছিল পুলিশ।
নদিয়ার জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্র বলেন, ‘‘নতুন কালীপুর গ্রামের সঞ্জু ঘোষ নামে ওই যুবকটি বিশেষ সুবিধার নয়। পুলিশের খাতায় তার নাম রয়েছে। তার মা-ও সম্প্রতি হেরোইন বিক্রির অভিযোগে জেল হাজতে। তবে জেরায় সঞ্জু জানিয়েছে মা’কে জামিনে ছাড়ানোর জন্যই সে ব্যবসায়ী অপহরণের চেষ্টা করেছিল। ছেলেটির কাছ থেকে একটি নাইন এম এম পিস্তল পাওয়া গিয়েছে।”
বুধবার সন্ধ্যায় জনা চারেক সঙ্গী নিয়ে কৃষ্ণনগরের অঞ্জনাপাড়ায় সমীর চক্রবর্তী নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চড়াও হয় সে। সমীরবাবুর জমি বেচাকেনার কারবার। কাপড়ের ফলাও ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। এ দিন সন্ধে নাগাদ পাড়ায় ঢুকে সঞ্জুরা দেখে বাড়ির কাছেই একটি ছোট মুদির দোকানের সামনে বসে আছেন সমীরবাবু। ‘উদ্ধারের’ পর নিজের বাড়িতে বসে সমীরবাবু বলেন, ‘‘একটা গাড়ি থেকে নেমে সঞ্জু সটান আমার কাছে এসে জামার কলার ধরে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। আমি উঠে দাঁড়াতেই পিঠে পিস্তল ঠেকায়। তারপর ঠেলে গাড়ির মধ্যে তুলে দেয়। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই গানি চলতে থাকে।” তবে দূরে কোথাও নয়। সঞ্জুর দলবল তাঁকে নিয়ে গিয়ে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দা ভরত বিশ্বাসের বাড়িতে। সেখানেই সমীরবাবুর কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করে সে। সমীরবাবু জানান টাকার জন্য চাপাচাপি করতে থাকায় তিনি উঠে পালানোর চেষ্টা করতেই গুলি চালায় সঞ্জু। তিনি বলেন, “আমি চট করে সরে যাওয়ায় গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।’’
গুলির শব্দ, সমীরবাবুর চিৎকার সব মিলিয়ে গোটা পাড়া ছুটে আসে। ধীরে ধীরে ওই বাড়ি ঘিরে লোক জমতে থাকে। এই সময়ে তার দলের অন্যান্যরা কোনওক্রমে পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যায় সঞ্জু। শুরু হয় গণপিটুনি। স্থানীয় বাসিন্দা চৈতন্য অধিকারী বলেন, ‘‘এ ভাবে প্রকাশ্যে অপহরণ করার চেষ্টা দেখে পাড়ার লোক প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। তারপরে সবাই রুখে দাঁড়ান। বিপদ বুঝে ওরা পিছু হটতে থাকে।’’ পাড়ার অন্য এক বাসিন্দার কথায়, “ভর বিকেলে এ বাবে পাড়ার মধ্যে মস্তানি, গুলি, মেনে নিলে ওরা আরও পেয়ে বসত। তাই আমরা ঝুঁকি নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম।” পুলিশ সুপারও অঞ্জনপাড়ার বাসিন্দাদের সাহস দেকে অবাক। বলছেন, “এটাই তো চাই। দারুন কাজ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।” আর, সমীরবাবু বলছেন, “পাড়ার লোক রুখে না দাঁড়ালে আজ হয়ত খুনই হয়ে যেতাম!” |
|
|
|
|
|