|
|
|
|
সীমান্তে ফসল চুরি চলছেই, ‘কথা রাখেনি’ ওপারের মানুষ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • করিমপুর |
কথা রাখলেন না ওঁরা।
গত শীতে সীমান্ত পার হয়ে চলে আসে বাংলাদেশের প্রায় শতাধিক গবাদি পশুকে আটক করে রেখেছিলেন কাছারিপাড়া সীমান্তের বাসিন্দারা। ভারতীয় সীমান্তে ফসলি জমিতে নেমে গিয়েছিল সেই সব গরু-ছাগলের দঙ্গল। তবে তাদের ধরে তিন দিন ধরে খাওয়ানো, ঘেরা মাঠে রেখে সাঁজালের ব্যবস্থা করা, যাবতীয় ‘আতিথেয়তা’র দায় সামলেছিলেন গ্রামের মানুষ আর স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা। বিএসএফ ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয়, সীমান্তের ওপারে ফিরিয়ে দেওয়া হবে তাদের। তবে শর্ত ছিল, এ বার থেকে যেন সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশের গ্রামে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের ফসল কেটে নেওয়ার দৌরাত্ম্য রুখতে সতর্ক থাকবে বর্ডার গার্ডস। তখনকার মতো সে প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলেও বাংলাদেশের সীমান্ত প্রহরীরা যে বৈঠকের পরে সে ব্যাপারে তেমন সতর্ক হননি, সীমান্ত উজিয়ে গবাদি পশুর হানা কিংবা দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য চলতে থাকা তাই প্রমাণ করে।
বছর ঘুরতেই ভারতীয় চরের জমিতে ফের শুরু হয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা গবাদি পশুর অত্যাচার। গ্রামের মানুষের তাই অভিযোগ, কথা দিয়েও ওরা কথা রাখল না বর্ডার গার্ডস। সেই সঙ্গে চরের জমি থেকে ফসলও কেটে নেওয়ার ঘটনাও প্রায় নিয়মিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে সীমান্তের গ্রামগুলিতে ক্রমেই ক্ষোভ দানা বাঁধছে।
মধুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পদ্মার চরে ভারতীয় কৃষকদের প্রায় পাঁচ হাজার বিঘারও বেশি জমি রয়েছে। পদ্মার ভাঙনে সব হারানো মানুষের ভরসা বলতে চরের ওই জমিতে প্রতি বছর ধার দেনা করে ফসল বোনেন চাষিরা। কিন্তু তা আর ঘরে তোলা হয় না। স্থানীয় চরের বাসিন্দা আশরাফুল বলেন, “ফসল তুলব কী করে। যে দিন কাটব ভাবছি সেই রাতেই সব সাবাড় করে দিচ্ছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। বর্ডার গার্ডস নির্বিকার। বিএসএফ-ই বা কী করেছে?”
চরের জমিতে এখন রয়েছে সর্ষে, গম, মসুরি, মটর, বাদাম। চরের মাঠে প্রায় বিঘা দশেক জমি রয়েছে কাছারিপাড়ার নীরেন সরকারের। তিনি বলেন, ‘‘সর্ষেতে ফুল ধরেছে। আগামী মাঘের শেষ কিংবা ফাল্গুনের প্রথম দিকেই মসুরি ঘরে ওঠার কথা। কিন্তু আদৌ সেই ফসল ঘরে উঠবে কিনা জানিনা। আর চাষ করব কিনা জানিনা।’’ওই এলাকায় বিএসএফের আউট-পোস্ট নেই। ফলে রীতিমত তাণ্ডব চালাচ্ছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা।
কাছারিপাড়ার বাসিন্দা তথা করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘গত বছর গ্রামের মানুষ বাংলাদেশিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গবাদি পশুগুলো ধরে রেখেছিলেন। তবে তাদের যত্নের কোনও ত্রুটি হয়নি। ক্লাবের ছেলেরা পরে সেই পশুগুলো ফিরিয়েও দিয়ে এসেছিলেন। সেই সময়ে কথা হয়েছিল, এ ঘটনা আর হবে না। তা কথা রাখলে তো!” গত কয়েক দিন ধরে চুরি ববেনেছে এলাকায়। অগভীর নলকূপের পাইপ চুরি, নির্বিচারে ফসল কেটে নিয়ে যাওয়া, চরের জমিতে এখন রোজনামচা, বলছেন শঙ্করবাবু। গ্রামের অন্য এক বাসিন্দা সনাতন দাস বলেন, ‘‘পদ্মা অনেক এগিয়ে এসেছে। স্বাভাবিকভাবে চরের জমির পরিমাণও আগের থেকে অনেক বেড়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হল পদ্মার ওপারে চরের জমিতে বিএসএফের ক্যাম্প নেই। ফলে সেখানে নজরদারি চালানোও হয় না। এই সুযোগটাই কাজে লাগায় বাংলাদেশের দুষ্কৃতিরা।” তিনি জানান, এ ব্যাপারে বহুবার বিএসএফ ও প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। বিএসএফের ৮৫ ব্যাটেলিয়ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘‘এই সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আমরা ফ্ল্যাগ মিটিং করা হয়েছে। চরের মাঠে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।’’ করিমপুর-১ ব্লকের বিডিও সুমন্ত রায় বলেন, ‘‘বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের অত্যাচারে ভারতীয় চাষিরা কোনবারই ঠিকমত ফসল ঘরে তুলতে পারেন না। সীমান্তে বিএসএফ থাকা সত্ত্বেও চরের জমিতে কাজ করতে যাওয়া কৃষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দিন কয়েক আগে এ ব্যাপারে বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। একটা ক্যাম্প করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। আশা করি ক্যাম্প হলে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টাবে।’’ |
|
|
|
|
|