কুয়াশায় অস্পষ্ট পথ, থমকে যানবাহন
ভোরের দিকে দশ হাত দূরেই দৃষ্টি যাচ্ছে না। বেলা সাড়ে ন’টা নাগাদ কিছুটা পরিষ্কার হচ্ছে আশপাশ। তার আগে পর্যন্ত তাই যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে না জাতীয় সড়কে। ট্রেন চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। রাত বাড়তে আবার দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে। স্লথ হয়ে যাচ্ছে যানবাহনের গতি। দুই জেলার যাবতীয় যানবাহনের গতিই তাই থমকে দিয়েছে গত কয়েক দিনের বেনজির কুয়াশা। মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার তাপমাত্রা রাতের দিকে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসছে। ফলে কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে ভোর রাত্রে নেমে আসছে কুয়াশার চাদর। কোথাও কোথাও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ঘন কুয়াশাও ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। ফলে রাস্তাঘাটে পথচারীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে রাতারাতি। কুয়াশার জন্য দোকানপাটও খুলছে দেরি করে।

জাতীয় সড়কে লরির লাইন
তবে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ছে যানবাহনের উপরেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে সকালের দিকে লাইন দিয়ে কুয়াশার বাধায় দাঁড়িয়ে পড়ছে লরির সারি। ধুলিয়ানের ডাকবাংলো মোড়ে বুধবার সকাল থেকেই লরির বিশাল লাইন পড়ে যায়। লরি বোঝাই লোহার সামগ্রী নিয়ে শিলিগুড়ি যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গির শেখ। তিনি বলেন, “গত ৫ দিন থেকেই কুয়াশা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গে অবস্থা আরও খারাপ। তাই শেষ রাতের দিকে রাস্তাঘাট কুয়াশার জন্য সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। তাই ঝুঁকি নিচ্ছি না।
কোনও না কোনও জায়গা দেখে লরি দাঁড় করিয়ে কুয়াশা কাটলে তবে রওনা হচ্ছি।” ফরাক্কায় কুয়াশার জন্য আটকে পড়েন সুখবিন্দর সিংহ। যাবেন অসমে। বললেন, “একে তো ঠান্ডা পড়েছে। তার উপরে কুয়াশা। গভীর রাতের দিকে তাই আর লরি চালানোর ঝুঁকি নিচ্ছি না। গাড়ি ছাড়লেও গতি কম রাখতে হচ্ছে। তাই প্রতিদিন যতটা যাওয়ার কথা, ততটা করে যেতে পারছি না।” তাঁর কথায়, “প্রতিবারেই এমনটা ঘটে। তবে এ বারে শীতের শুরুতেই কুয়াশাটা যেন বেড়েছে।”

বাতিল করতে হচ্ছে বাস
লরি দাঁড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু বাস? গত কয়েক দিন থেকে সময় মতো বাস চালানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই জেলায়। সকালের দিকে বাসে যাত্রী কম থাকে। কিন্তু বাস তো ছাড়তে হয় ঠিক সময়েই। বহরমপুর-মালদহ রুটের বাস চালক সামশুল হকের কথায়, “সকালে প্রতিদিন ঘণ্টা চারেক কুয়াশার জন্য সমস্যা হচ্ছে। বারবার হর্ন দিচ্ছি। গতিও কম থাকছে। প্রচণ্ড সতর্ক থাকতে হচ্ছে। তাই এখনও কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি।” নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “কুয়াশার জন্য সকালের দিকে তো বাস চালানোই খুব ঝুঁকির হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বাস বাতিল পর্যন্ত করতে হচ্ছে।”
বেলা গড়ালেও কাটেনি ধোঁয়াশা। ছবি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।
যাত্রীরা তাই খুবই নাকাল হচ্ছেন। মালদহগামী এক্সপ্রেস বাস কৃষ্ণনগর থেকে ছাড়ার কথা ভোর পাঁচটায়। ছাড়ছে তার অনেক পরে। তাই সেই বাস সব জায়গাতে আরও দেরি করে পৌঁছচ্ছে। বিভিন্ন বাস কখন কোথায় পৌঁছবে, তার উপরে নির্ভর করে অন্য বাস বা ট্রেনের যোগাযোগ। সে সবই ভেস্তে দিচ্ছে কুয়াশা। অসীমবাবু বলেন, “করিমপুর, মালদহ, গোপালপুরের বাসও ওই একই কারণে বাতিল করতে হয়েছে।”

গতি কমিয়ে রাখার নির্দেশ
মুর্শিদাবাদের বাস মালিক সমিতির সম্পাদক মনিরুদ্দিন মণ্ডল বলেন, “কুয়াশার জন্য কোনও কোনও দিন দশ হাতের মধ্যেও কিছু দেখা যায় না। যে কোনও সময়ে বিপদ হতে পারে। তাই চালকদের বলে দেওয়া হয়েছে, বাসের গতি কোনও ভাবেই বাড়ানো যাবে না। সামনে কিছু দেখলে দেখলেই হর্ন বাজাতে হবে।” নদিয়াতে বাস মালিক সংগঠন ঠিক করেছে, বাসের গতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি’র মধ্যে রাখতে হবে। কুয়াশার জন্য ফগ লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হবে। ওয়াইপার চালাতে হবে চালকের সামনের কাচ থেকে কুয়াশা মুছে ফেলতে। অসীমবাবু বলেন, “তবে অনেক সময় উল্টো দিক থেকে ছোট গাড়ি ফগ লাইট ছাড়াই চলে আসে একেবারে সামনে। তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।” সেই সঙ্গে, রাস্তার উপরে উঠে আসা গরু ছাগলও এই সময় বড় বিপদ। কুয়াশার জন্য তারা যেমন দু’পাশে দেখতে পায় না, তেমনই তাদেরও দেখা যায় না একেবারে কাছে না পৌঁছনো পর্যন্ত। বাস কর্মচারী সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক আব্দুল খালেক বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছনোর বদলে যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়াটাই এখন প্রধান কর্তব্য। তাই গতি কম রেখেই বাস চলাতে বলা হয়েছে।’’

ধীরে চলছে ট্রেনও
রেলপথেও অবস্থা একই। কুয়াশার জন্য ট্রেনেরও গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হচ্ছে। মালদহের ডিআরএম হর্ষকুমার বলেন, “কুয়াশাতে ট্রেন চালাতে সমস্যা তো হচ্ছেই। তাই সব ট্রেনেরই গতি কম থাকছে। ফলে ট্রেন চলাচল বিলম্বিত হচ্ছে। কিন্তু কিছু করারও নেই। কুয়াশার জন্য সিগন্যাল ঠিক মতো দেখতে পাওয়া না গেলে ট্রেন চালানো মুস্কিল। চালকদের তাই গতি নিয়ন্ত্রণেই রাখতে বলা হয়েছে। যত দিন কুয়াশা থাকবে, তত দিন এই ব্যবস্থাই থাকবে।” স্টেশনে রেলকর্মীরাও পড়ছেন সমস্যায়। নিমতিতার স্টেশন ম্যানেজার অনুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই সময়ে বেশি করে টর্চ ও সার্চ লাইট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, যাতে চালকদের চোখে পড়ে।” কেবিনম্যান মুরারিমোহন বলেন, “রাতের চেয়েও বেশি সমস্যা ভোরে। তখন তো চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা। কাজ করব কী করে?” নবদ্বীপ ধাম স্টেশনের ম্যানেজার কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “সাধারণ লোকাল ট্রেন কখনও কখনও কুয়াশার জন্য বেশ দেরি করে চলছে। মেল এক্সপ্রেসেরও দেরি হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.