|
|
|
|
একশো দিনের প্রকল্পে অগ্রিম মজুরির সমীক্ষা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
একশো দিনের কাজ প্রকল্পে শ্রমিকদের অগ্রিম টাকা দেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করল কেন্দ্রীয় সরকার। এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সমীক্ষাও শুরু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’তিনটি এলাকা বেছে নিয়ে পাইলট প্রকল্প হিসাবে এই পদ্ধতি মেনে কাজ করার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। অগ্রিম টাকা দিয়ে টানা তিন সপ্তাহ কাজ করার পর কী ফল পাওয়া গেল তা নিয়ে রিপোর্টও পাঠাতে বলা হয়েছে। তার পরেই সিদ্ধান্ত হবে, একশো দিনের প্রকল্পে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে কি না।
এত দিন কাজের পর শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করা হত। কোনও ক্ষেত্রে পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টেও টাকা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও শ্রমিকদের টাকা পেতে দেরি হয়। তা ছাড়া দুর্নীতিরও সুযোগ রয়েছে। যে সব কারণে শ্রমিকরা অনেকে এই প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে সরকারের অনুমান। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের সঙ্গেও বার বার আলোচনা করেছে কেন্দ্র। দ্রুত শ্রমিকদের অর্থ দেওয়ার ব্যাপারেও বার বার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু নিয়মের যাঁতাকলে কিছুতেই শ্রমিকদের পাওনা অর্থ দ্রুত মেটানো যায়নি। তাই অনেক চিন্তাভাবনা করে অগ্রিম টাকা দেওয়ার পথে এগোতে চাইছে কেন্দ্র।
কিন্তু এই পদ্ধতি কি আদৌ ফলপ্রসূ হবে? এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আশঙ্কার অন্যতম কারণ হল, অগ্রিম টাকা পেয়ে যাওয়ার পরে শ্রমিকরা যদি কাজে মন না দেন! তখন কী ভাবে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা ফেরৎ নেওয়া হবেসে নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকার অভাব রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কারণেই বিভিন্ন জেলায় দু’তিনটি এলাকায় পাইলট প্রকল্প হিসাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেই পরীক্ষার ফলের উপরেই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, এ ভাবে আগাম টাকা দেওয়া হবে কি না। পশ্চিম মেদিনীপুরে পাথরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এই পাইলট প্রকল্প পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তিন সপ্তাহ পর পরিষ্কার হবে, আগাম টাকা দেওয়ার বিষয়টি কত দূর ফলপ্রসূ।
কী ভাবে অগ্রিম টাকা দেওয়া হবে? কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকায় বলা রয়েছে, এক জন শ্রমিককে প্রথম সপ্তাহের পারিশ্রমিকের অর্ধেক টাকা দেওয়া হবে। তা দেওয়া হবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই। দিন পিছু এক জন শ্রমিক পান ১৩০ টাকা। অর্থাৎ অগ্রিম হিসাবে তাঁর অ্যাকাউন্টে ৪৫৫ টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। দেখা গেল, কেউ ৭ দিনই কাজ করলেন, কেউ আবার ৬ দিন কাজ করলেন। যিনি সাত দিনই কাজ করতে পারবেন তাঁকে বাকি ৪৫৫ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি পরের সপ্তাহের আরও অর্ধেক অগ্রিম অর্থাৎ ৪৫৫ টাকাও দিয়ে দেওয়া হবে। কেউ ৬ দিন কাজ করলে তাঁকে তাঁর পাওনা ৩২৫ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি পরের সপ্তাহের অগ্রিম হিসাবে অর্ধেক অর্থাৎ আরও ৪০০ টাকা দেওয়া হবে। এ ভাবেই তৃতীয় সপ্তাহেও কাজ করা হবে। তাতে কী ফল পাওয়া যাচ্ছে সে নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হবে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও জেলা থেকে আসা রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা যাবে কি না।
বর্তমানে মজুরির টাকা পেতে শ্রমিকদের অনেক দেরি হয়। কাজ করার পর কম পক্ষে এক মাস তো বটেই অনেক ক্ষেত্রে টাকা পেতে দু’মাসও পেরিয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহেই দেখে নিতে হয় কে কতটা কাজ করলেন। কিন্তু প্রতিবারই তা দেরিতে হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১৫ দিন বা এক মাসে তা করা হয়। তার পর মাস্টার রোল বানাতে হয়। মাস্টার-রোল খতিয়ে দেখার পরে সংশ্লিষ্ট দফতর, তা গ্রাম পঞ্চায়েতই হোক বা বিডিও, টাকার অনুমতি দেয়। এর পরেই ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে টাকা যায়। এই লম্বা পদ্ধতি ছেঁটে ফেলে কাজে দ্রুততা আনতেই অগ্রিম অর্থ-প্রদানের সিদ্ধান্ত। কিন্তু তা ঝুঁকির হবে নাকি সত্যিই শ্রমিকদের কাজে লাগবে তা দেখতেই সমীক্ষা শুরু করল কেন্দ্র। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই রিপোর্ট পাঠাতে হবে। সব রাজ্যেই এই পদ্ধতির পরীক্ষা যদি উত্রে যায়, তা হলে নতুন বছর থেকে হয়তো একশ দিনের প্রকল্পে শ্রমিকদের অগ্রিম মজুরি দেওয়ার রীতি চালু হয়ে যাবে। |
|
|
|
|
|