|
|
|
|
আগুন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছেই শিল্পশহরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
কলকাতার ঢাকুরিয়ায় বেসরকারি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড এবং তাতে প্রায় একশো মানুষের মৃত্যু জেলার শহরগুলির মানুষজনকেও আতঙ্কিত করে তুলেছে। শিল্পশহর হলদিয়ার শপিংমল, নার্সিংহোম, হোটেল-রেস্তোঁরা, বহুতলের অগ্নি-নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না অনেকেই।
হলদিয়ার সাউথ এশিয়ান পেট্রোকেমিক্যালসে এ বছরেরই ১৪ মার্চ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গিয়েছে। দমকল বিভাগকে কঠিন লড়াই লড়তে হয়েছিল সে দফায়। সেই স্মৃতিও ফিরে আসছে। শিল্পশহরে তার পরেও তেমন উন্নতি হয়নি অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষ আগের মতোই উদাসীন। বহুতল আবাসন, শপিংমল, নার্সিংহোম, হোটেলের অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ তাই বাড়ছে।
হলদিয়া শহরের মঞ্জুশ্রী মোড়ে বহুতল শপিংমল, সুপার মার্কেট, মোহনা মার্কেট-সহ বেশির ভাগ মার্কেট কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। শপিংমলে নিত্য যাতায়াতকারী অমিত অধিকারীর কথায়, “বহু দোকানে এসি মেসিন। অথচ বদ্ধ-ঘরে কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।” মঞ্জুশ্রী মোড়ের মার্কেট কমপ্লেক্সের সম্পাদক দীপঙ্কর পাত্রও জানাচ্ছেন, তাঁদের তরফেও বহু বার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ উদাসীন। প্রসঙ্গত, ছ’মাস আগেও এই মার্কেট কমপ্লেক্সের একটি ফলের রসের দোকানে আগুন লেগেছিল।
একই অবস্থা অধিকাংশ মার্কেট কমপ্লেক্সে। টাউনশিপে হলদিয়া পুরসভা পরিচালিত মোহনা মার্কেটে রয়েছে বহু দোকান। সেখানেও চোখে পড়ে না অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা। এই মার্কেটের এক ব্যবসায়ী অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, “আগুন লাগলে ধারেকাছে একটাও পুকুর নেই। অধিকাংশ দোকানেই সে ভাবে অগ্নি-রোধক ব্যবস্থাও নেই। কলকাতার ঘটনার পরে তাই আশঙ্কা বেড়েছে।”
আবার প্রশ্ন উঠেছে দমকল বিভাগের ভূমিকা নিয়েও। অভিযোগ যখন কিছু হল তখন কড়াকড়ি, তার পর ফের যে-কে-সেই। নিয়মিত ‘ফায়ার সেফ্টি’ পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই। হলদিয়া বিগবাজারের ম্যানেজার সৌভিক পালের কথায়, “আমরা যথেষ্ট সচেতন এ সব বিষয়ে। তবে দমকলের তেমন তৎপরতা নেই।” দমকলের ওসি কার্তিকচন্দ্র মণ্ডলের জবাব, “আমরা মাঝেমধ্যে পরিদর্শন করি। তবে কর্মী কম হওয়ায় সমস্যা যে রয়েছে তা অস্বীকার করতে পারব না।”
এই মুহূর্তে হলদিয়া দমকল বিভাগে রয়েছে ৫টি ইঞ্জিন ও ৪টি ল্যাডার। তবে শিল্পশহর হওয়ায় ‘হাল ফ্যাসানে’র বহুতল হয়েছে বেশ কিছু। বিশেষ করে টাউনশিপ সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠছে এই সব বহুতল। কিন্তু তাদের একটিতেও নেই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা। একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা শিবপ্রসাদ দত্তের কথায়, “দেখুন কলকাতার ঘটনার পর আমরা যথেষ্ট শঙ্কিত। কারণ আমাদের ফ্ল্যাট-সহ এখানকার অধিকাংশ ফ্ল্যাটে কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সর্বত্র জলাধারও নেই। আমরা খুব তাড়াতাড়ি এই বিষয়ে একটি বৈঠক করব। দমকলের কাছে যে সব ল্যাডার রয়েছে তা নিত্যনতুন এই বহুতলের পক্ষে যথেষ্টও নয়।”
কার্তিকচন্দ্রবাবু কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন, “আমাদের ল্যাডারগুলি খুব বেশি উঁচু যদিও নয় তবে আপাতত কাজ চলে যাচ্ছে।” তবে কলকাতার ঘটনার পরে দমকলের তৎপরতা একটু বেড়েছে। আবার দমকল বিভাগের অভিযোগ, শিল্পতালুকের কোনও নার্সিংহোমে ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেই ‘ফায়ার এক্সটিংগুইশার’। হলদিয়ার খুদিরাম স্কোয়ার সংলগ্ন বেশ কিছু নার্সিংহোমে এই অবব্যস্থা নজরে পড়েছে দমকলের। হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের অবস্থাও তথৈবচ। সেখানেও অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ন্যূনতম স্মোক-অ্যালার্মেরও ব্যবস্থা নেই। শিল্পশহরে তাই উদ্বেগ বাড়ছেই।
|
|
|
 |
|
|