যুবভারতীতে বল গড়ানোর চব্বিশ ঘণ্টা আগেই করিম বেঞ্চারিফা বনাম সুব্রত ভট্টাচার্যের লড়াই শুরু হয়ে গেছে!
বৃহস্পতিবার ফল যা-ই হোক, বুধবার সকালের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে কিন্তু জিতলেন মোহনবাগান টিডি-ই। আর নিজের চাল ভেস্তে যাওয়ার পর ক্ষোভে ফেটে পড়া মরোক্কান কোচ বলে দিলেন, “মাঠের ভেতর এগারো বনাম এগারো খেলবে। মাঠের বাইরে সমস্যা তৈরি করে কিছু হবে না।”
সবুজ-মেরুন থেকে বাতিল হওয়ার পর গত দু’বছর ধরেই করিম বাগানের মুখোমুখি হলেই টেনশন। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলবার স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন সালগাওকর কোচ। মোহনবাগানের বাধায় সফল হননি। বদলে এ দিন মোহনবাগান মাঠে চিডি-সুয়েকাদের অনুশীলনের সময় নির্ধারিত ছিল সকাল সাড়ে দশটায়। মোহন-কর্তাদের দাবি, ম্যানেজার্স মিটিং-এ এ রকমই বলে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক ছিল, ক্লাবের দু’জন কর্মী হোটেলে গিয়ে সালগাওকর দলকে মাঠে নিয়ে আসবেন। কিন্তু নিজে থেকে ফোন করে বাসের চালককে আনিয়ে সকাল সাড়ে আটটাতেই মোহনবাগান মাঠে দলবল নিয়ে চলে আসেন করিম। বসে পড়েন গ্যালারিতে। |
ওডাফা-ব্যারেটো-নবিরা তখন সবে আড়মোড়া ভেঙে মূল অনুশীলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেট পিস অনুশীলন শুরু করার মুখে সুব্রত দেখতে পান, কোচ-সহ সালগাওকর টিম শ্যেনদৃষ্টি নিয়ে তাঁদের দিকে তাকিয়ে। সঙ্গে সঙ্গেই মোহন-টিডি ডেকে পাঠান এক ক্লাব কর্মীকে। মাঠ থেকে বের করে দিতে বলেন সালগাওকর টিমকে। কর্মীটি ফোন করেন ক্লাব কর্তাদের। দ্রুত এসে পড়েন ফুটবল সচিব উত্তম সাহা। করিমের দলের ম্যানেজারকে ডেকে পাঠিয়ে পুরো সালগাওকর টিমকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। বেরোনোর সময় গ্যালারিতে দাঁড়িয়েই চিৎকার করতে থাকেন করিম। বলেন, “সকাল ন’টায় আমাদের মাঠ দেওয়া হবে বলা হয়েছিল, এখন বেরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। কলকাতায় এই এক ঝামেলা। নানা ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে সমস্যায় ফেলা হয়। আরে, আমার ব্যাগে এ বছর এখনই একটা সর্বভারতীয় ট্রফি (ফেড কাপ) আছে, অনেকের তো তাও নেই।” ইঙ্গিতটা যে তাঁর প্রাক্তন ক্লাবের দিকে বোঝাই যাচ্ছিল। গ্যালারি থেকে নেমে প্রায় এক ঘণ্টা ক্লাব লনে বসে থাকেন চিডি-তোম্বা-জুনিয়ররা। ফের সালগাওকর মাঠে ঢোকে সকাল দশটা নাগাদ। এবং সঙ্গে সঙ্গে অনুশীলন থামিয়ে দেন সুব্রত। বলেন, “এত চোট-আঘাত। নানা সমস্যা। অনেক ভাবনা চিন্তা করতে হচ্ছে। না হলে......।” করিমের উপর পুরনো রাগ বেরিয়ে পড়ে সুব্রতর।
কিন্তু মাঠে ‘রাগ’ উগরে দেওয়ার মতো কতটা রসদ আছে সুব্রতর দলের? জনা পাঁচেক সৈন্যই তো যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ছিটকে গিয়েছেন চোট বা কার্ডের জন্য। সুনীল, কিংশুক, প্রদীপ, লিমা, জেলেনি। হয়তো ব্যারেটোও! বুধবার রাত পর্যন্ত সুব্রত-প্রশান্ত ঠিক করতে পারেননি ব্যারেটোকে খেলানো হবে কি না? “কাল সকালে ব্যারেটো খেলতে চাইলে খেলাব। না চাইলে নামাব না। লিগের প্রথম পর্বে ২৬-২৭ পয়েন্ট দরকার। সেটা মাথায় রাখতে হচ্ছে,” বললেন সুব্রত। ব্যারেটো না খেললে ওডাফা-অসীম জুটি শুরু করবে ফরোয়ার্ডে। আর ব্যারেটো খেললে অসীম নেমে আসবেন মাঝমাঠে নবি, মণীশ, স্নেহাশিসদের সঙ্গে।
ইদানীং করিমের গাঁট মোহনবাগান। গত বছর ট্রফিহীন সবুজ-মেরুনও হাফ ডজন গোল দিয়েছিল সালগাওকরকে। তার উপর ফেড কাপ জেতার পর থেকে গোয়ার ক্লাবটির গ্রাফ নিম্নমুখী। মরসুমের প্রথম সাক্ষাতে অবশ্য দুটো সুবিধা পাবেন করিম।
এক) প্রায় পুরো টিম পাচ্ছেন।
দুই) চিডি-সহ মোহনবাগানের জনা ছয়েক প্রাক্তন তাঁর দলে।
পরিস্থিতি দেখে খুশি গত বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচ বললেন, “চ্যাম্পিয়নশিপ এখনও ওপেন। তিন পয়েন্টই লক্ষ্য আমাদের।”
বুনো ওল করিম বনাম বাঘা তেঁতুল সুব্রত শেষ পর্যন্ত জিতবে কে, তা সময় বলবে। তবে এটা লিখে দেওয়া যায়, মোহনবাগান যদি জিতে যায় তা হলে ‘বাবলুর কপাল’ নাম দিয়ে বই লেখার প্রস্তুতি নিতেই পারেন কোনও লেখক। যেহেতু অর্ধেক অস্ত্রই এই ম্যাচে হাতে নেই বাবলুবাবুর!
|
বৃহস্পতিবারে আই লিগ ফুটবল:
মোহনবাগান: সালগাওকর (যুবভারতী ২-০০)। |