ইয়াস মারিনার অত্যাধুনিক ট্র্যাকে তাঁকে দেখলে প্রথমে একটু হোঁচট খেতে হয়। পুরুষদের দুনিয়ায় এই সোনালি চুলের সুন্দরী কী করছেন? কোনও এফ ওয়ান ড্রাইভারের গার্লফ্রেন্ড? সুপার সিরিজের কর্মকর্তাদের একজন?
এর কোনওটাই নয়। গতির দুনিয়ায় পুরুষের একচ্ছত্র সাম্রাজ্যে থাবা বসানোই লক্ষ্য এই ২৫ বছর বয়সি তরুণীর, বিশ্বের সেরা মহিলা রেসিং ড্রাইভারদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে। সুইস জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, ‘লে মঁ’-এর মতো ইউরোপের বিভিন্ন রেসে নিয়মিত প্রতিযোগী, ফমুর্লা থ্রি কাপে বিশ্বসেরাদের সঙ্গে লড়ে নবম হওয়ার শিরোপা পকেটে। চূড়ান্ত লক্ষ্য প্রথম মেয়ে হিসেবে ফর্মুলা ওয়ানের কোনও টিমে ড্রাইভার হওয়া। আপাতত সুপার সিরিজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সিন্ডি ইয়াস মারিনায় টেস্ট ড্রাইভে টাইমিংয়ে সমানে সমানে লড়লেন ফিসিকেলা, লুইজি, কখনও ফেরারির ফিসিকেলার কাছ থেকে টিপস, কখনও করুণ চন্দকের কাছে ভারত নিয়ে জানতে চাওয়া। সুইজারল্যান্ডের মেয়ে সিন্ডি আলেমান আবার রজার ফেডেরারেরও অন্ধ ভক্ত। তা হলে টেনিস ছেড়ে রেসিংয়ে কেন? “আসলে আমার বাবা কার্ট আলেমান সুইস কার্টিং চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। দাদা কেন-ও কার্টিং চ্যাম্পিয়ন। বাড়ির পরিবেশটাই আমাকে রেসিংয়ে এনে দেয়। আর টেনিস তো আমাদের দেশের সব মেয়েই খেলে। রজারের জন্য খেলে,” বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন সুইস তরুণী, “মার্টিনা হিঙ্গিসের ভক্ত ছিলাম ছোটবেলায়। একটু বড় হতে শুধুই রজার। ও আমার কাছে ভগবানের মতো। শুধু ওর জন্য জীবন দিতে পারি। সুইজারল্যান্ড মানে যে শুধু আল্পসের সৌন্দর্য বা গোপন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নয়, তা রজারই দেখিয়েছে। উইম্বলডনে যে ডিন ও রাফার কাছে হেরেছিল, আমি সারা রাত কেঁদেছিলাম।” |
রেসিংয়ের দুনিয়াটা যে পুরোপুরি ছেলেদের দুনিয়া, একেবারেই মানছেন না সিন্ডি। “মেয়ে বলে প্রথম প্রথম কেউ পাত্তা দিত না। মা বলত, ছেলেদের খেলায় যাস না। আমি শুনিনি। গতি ভীষণ ভাল লাগত। মনে হত, ছেলেরা পারলে আমি পারব না কেন? কিমি রাইকোননের ড্রাইভিং স্টাইল মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। অসম্ভব অ্যাগ্রেসিভ। শুমাখার গ্রেট, কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে রাইকোননের ফ্যান।”
ফর্মুলা ওয়ানের টিমে ড্রাইভার হওয়ার স্বপ্নটা কি আদৌ বাস্তব? সম্ভব? প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকালেন সিন্ডি, “এক দিন না এক দিন কোনও না কোনও মেয়ে তো পারবেই। তাই না? তা সেই প্রথম মেয়েটা হওয়ারই চেষ্টা করছি আমি। হলে হবে, না হলে নয়। কিন্তু আমি হাল ছাড়ার মেয়ে নই। সব কিছু ছেলেদের জন্য হবে কেন?” |