|
|
|
|
শিকেয় অগ্নি-সুরক্ষা |
রেলশহরে যত্রতত্র বাড়ি, অভিযুক্ত পুর-প্রশাসনই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
কোথাও আট ফুট চওড়া রাস্তা। তার মধ্যেই গড়ে উঠেছে বসতি। ছোট গাড়িও ঢুকতে পারে না, দমকলের গাড়ি আর ঢুকবে কী ভাবে! ঘিঞ্জি এলাকাতেই গড়ে উঠেছে একের পর এক বহুতল। গোটা খড়্গপুর শহরটাই যেন ‘জতুগৃহ’। শহরবাসীর অভিযোগ, পুরসভার উদাসীনতাতেই এই হাল। যেখানে-সেখানে বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। গড়ে উঠছে বহুতল, দোকান-বাজার। অনেক সময়ে নির্মাণকাজ হচ্ছে কোনও রকম অনুমতির তোয়াক্কা না করেই। নজরদারিতেও বিপুল ঢিলেমির অভিযোগ পুর-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
পুরাতন বাজার, কৌশল্যা থেকে খরিদা, মালঞ্চ রেলশহরের সর্বত্রই এক অবস্থা। ঘিঞ্জি এলাকায় আগুন লাগলে তা দ্রুত আয়ত্তে আনা যে অসম্ভব, তা খোলাখুলি বলছে দমকলও। দফতরের খড়্গপুর বিভাগের ওসি রবীন্দ্রনাথ সর্দারের কথায়, “শহরের একাংশে বসতি-এলাকায় গলি এত সরু যে দমকলের গাড়ি ঢুকতেই পারবে না। অনেক জায়গায় তৈরি হয়েছে বহুতল। অথচ কাছাকাছি পুকুর বা কুয়ো নেই। পর্যাপ্ত জলের জোগানও তাই অনিশ্চিত।” শহরের একাংশে ‘বেআইনি’ নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করতে পারছেন না খড়্গপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান জহরলাল পালও। |
|
খড়্গপুর পুরসভার বহু জায়গায় রয়েছে এমনই সরু গলি। |
তবে তাঁর বক্তব্য গতে বাঁধা: “বেআইনি বাড়িগুলির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জনকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, “নতুন বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়ার আগে সব দিক খতিয়ে দেখাও হচ্ছে। পুর-আধিকারিকেরা এলাকা পরিদর্শনেও যাচ্ছেন নিয়মিত।” যদিও এই দাবির সঙ্গে একমত হতে পারছেন না পুর-নাগরিকদের অনেকেই। তাঁরা দেখছেন, ঘিঞ্জি এলাকায় দেদার নির্মাণকাজ চলছে। অনেক সময়েই পুর-আধিকারিক, প্রভাবশালী নেতা ধরে ‘বেআইনি’কে ‘আইনি’ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর যত এ রকম হচ্ছে, ততই অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে রেলশহরে।
খড়গপুর শহরে বহু ভাষাভাষি মানুষের বাস। রেলে চাকরির সূত্রে ভিন্ রাজ্যের বহু মানুষ এ শহরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। অনেকে আদি বাড়ি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে এখানেই বসবাস শুরু করেছেন। ফলে, শহরের বিবেকানন্দপল্লি, সারদাপল্লি, বিদ্যাসাগরপুর-সহ নানা জায়গায় নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। বাড়ছে জনসংখ্যা। পুরসভা সূত্রে খবর, এখন রেলশহরের জনসংখ্যা ২ লক্ষ ৩০ হাজার। শহরের মাঝখানে রেলের এলাকা। নকশা দেখলে মনে হবে যেন রেলের জায়গাকে চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে পুর-এলাকা। আগে রেলের এলাকা পুর-পরিষেবার আওতাভুক্তও ছিল না। গত বছরের গোড়ায় ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের পরে রেল-এলাকা পুরসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে শহরের ওয়ার্ড সংখ্যা এখন ৩৫। ছোট-বড় মিলিয়ে ২৬টি বস্তি রয়েছে। বস্তিগুলি গড়ে উঠেছে মূলত গোলবাজার, ওল্ড সেটেলমেন্ট, নিউ সেটেলমেন্ট, ট্রাফিক, মথুরাকাটি, নিমপুরা এলাকায়। অনেকে ঘিঞ্জি এলাকাতেও বাড়ি তৈরির অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে ‘দাদা’ ধরে। অনেকে আবার নিয়ম মেনে বাড়ি করতে গিয়েও বাধা পাচ্ছে! নতুন বসতি এলাকাগুলিতেই রাস্তা-নিকাশি নালার হাল সবচেয়ে করুণ।
শহরের চৈতন্য আশ্রম কলোনিতে বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে সম্প্রতি সমস্যায় পড়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এক রেলকর্মী। পুরসভা নির্মাণের অনুমতি দিলে কী হবেএলাকায় নিকাশি নালাই নেই। রাস্তাও বেজায় সংকীর্ণ। এখন বাড়ির পাঁচিল তোলা নিয়ে পুরসভার সঙ্গেই বিরোধ বেধেছে প্রবীণ মানুষটির। এক পুরবাসীর বক্তব্য, “পুরসভারই তো উচিত, রাস্তা-নিকাশি নালার জায়গা নির্দিষ্ট করে তবেই বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া। তা হচ্ছে না। ফলে জমি কিনে কিছু লোক ফাঁপরে পড়ছেন। আবার কিছু লোক কোনও কিছুর তোয়াক্কাই না করে আরও ঘিঞ্জি, আরও দমবন্ধ করছে শহরটাকে।” ঘুরেফিরে দোষারোপ সেই পুরসভাকেই।
|
|
|
|
|
|