আরামবাগ কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচারাল রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে সুদ-ভর্তুকি-সহ বিভিন্ন ঋণদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল দীর্ঘ দিনের। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে এ নিয়ে বহু বার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর মহকুমাশাসক, জেলাশাসক এবং হুগলি কো-অপারেটিভ সোসাইটির ডেপুটি রেজিস্টারের দফতরেও গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ দেন কৃষকেরা। মঙ্গলবার এ বিষয়ে আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁইকে তদন্তের নির্দেশ দিলেন মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী। মহকুমাশাসক জানান, তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই তদন্তের কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গোটা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেননি ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান দুলাল আদক কিংবা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সঞ্জীবকুমার নন্দী।
দুর্নীতির অভিযোগ প্রথমে নজরে আসে ব্যাঙ্ক পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যদের একাংশের। ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে ২০১০ সালের ৩১ মার্চ এবং ৩০ জুন পরিচালকমণ্ডলীর সিদ্ধান্ত ছাড়াই ১৩ লক্ষ টাকার সুদ-ভর্তুকি বিলি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, যে সমস্ত কৃষক সময় মতো কৃষিঋণ শোধ করেছেন, তাঁরাই সুদ-ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু অভিযোগ, যাঁরা অ-কৃষি ঋণ নিয়েছেন, তাঁদেরকেও ওই ভর্তুকি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, একই ব্যক্তিকে একাধিক বার এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। এ ছাড়া, মাটির বাড়ি এবং ভাঙা বাড়ি ‘দেখিয়ে’ ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গুদাম না থাকা সত্ত্বেও সে বাবদ ভর্তুকি মঞ্জুরের নজিরও আছে বলে দাবি অভিযোগকারীদের। এ ধরনের অজস্র ‘দুর্নীতি’র তালিকা প্রশাসনের কর্মীদের জানানো হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
সুদ-ভর্তুকির টাকা ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ঠিকঠাকই বিলি হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন ব্যাঙ্কের পরিচালকমণ্ডলীর একাংশ। কমিটির ডিরেক্টর (কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি হিসাবে) শক্তিশঙ্কর পালুইয়ের অভিযোগ, ১৯৯০ সালের পর বিভিন্ন দফায় সুদ-ভর্তুকি বাবদ ব্যাঙ্কে ৩৯ লক্ষ টাকা এসেছে। এ নিয়ে পরিচালন কমিটিকে ‘অন্ধকার’-এ রাখা হয় বলে অভিযোগ। ২০১০ সালে বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিচালকমণ্ডলীর এক সদস্য রবিকিঙ্কর চক্রবর্তী ওই বছরের ৬ নভেম্বর তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করেন ব্যাঙ্কের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সঞ্জীবকুমার নন্দীর কাছে। দেড় বছর ধরে সেই তথ্য না জানানোয় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বোর্ড মিটিংয়ে হাতাহাতিও হয়। অবশেষে, কারা সুদ-ভর্তুকি পেলেন, সেই তালিকা দেন সঞ্জীববাবুরা। দেখা যায়, ৬৯৯ জন কৃষক সুদ-ভর্তুকি পেয়েছেন। অভিযোগ, যাঁরা তা পেয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে, অনেকেই কৃষিঋণই নেননি। ইতিমধ্যেই এ ভাবে ‘বিলি’ হয়েছে ১৩ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা এখনও বিলি হয়নি। তা কৃষকদের না দিয়ে বেআইনি ভাবে অন্য ব্যাঙ্কে সুদে খাটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।
|