ইউপিএ সরকারের ‘মুশকিল আসান’ হিসাবে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এমনিতেই তাঁর পরিচিতি রয়েছে। আজ সেই পরিচয়কে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। করুণাকরন ফাউন্ডেশনের তরফে ‘দেশের সেরা প্রশাসক’-এর সম্মান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ইউপিএ-র সুষ্ঠু পরিচালনার নেপথ্যে মূলত দু’জনের ভূমিকা রয়েছে। সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্ব আর প্রণবজি-র মুশকিল আসানের দক্ষতা।”
কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকেও এ দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করেন সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের ভোট ইস্তেহারে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি পালন, কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ ‘দাপটের’ সঙ্গে খারিজ করে দেওয়া এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়ে প্রণববাবুকে বাহবা দেন তিনি। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতি পদে প্রণববাবুর সম্ভাবনা প্রশ্নে মৃদু জল্পনার মধ্যে শীর্ষ নেতৃত্বের এই উচ্ছ্বাস নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে একটা চর্চাও শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রণববাবু অর্থমন্ত্রী থাকার সময়ে যিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ছিলেন, সেই মনমোহন সিংহ দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রীর পদে। সরকারের ‘নাম্বার-টু’ হলেও তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রীও হননি। অথচ প্রায় সব সংকটে তাঁর দিকেই তাকাতে হয় সরকারকে। সেই বাঙালিকে কি শুধু এই ভাবেই পুরস্কৃত করতে চাইলেন শীর্ষ নেতৃত্ব?
কেরলের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী করুণাকরনের নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব ও তাঁর পুত্র মুরলীধরন। এবং প্রতিষ্ঠানটির ‘সেরা প্রশাসক’ সম্মানের প্রথম প্রাপক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। আগে স্থির হয়েছিল, মনমোহন-প্রণব দু’জনেই এ জন্য কেরলে যাবেন। কিন্তু সময়ের অভাবে তা হয়নি। এ দিন অনুষ্ঠানটি হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেই। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে মনমোহন বলেন, “আমার শিক্ষক তথা বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ নিকোলাস কালডোর প্রায়শই বলতেন, অর্থনীতির মডেল যাই হোক না কেন, বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তার সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে যিনি তা রূপায়ণ করছেন, তাঁর যোগ্যতার উপরে। দেশ সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে। এই অবস্থায় দেশ পরিচালনার জন্য প্রণববাবু ও করুণাকরণের মতো দূরদৃষ্টি ও জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের সব থেকে বেশি প্রয়োজন।”
আর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দুই মঞ্চে প্রকাশ্যে তাঁর এমন প্রশংসা শুনে শুধু মুচকি হেসেছেন। তবে সে হাসি চওড়া হয়েছে যখন মনমোহন বলেন, “প্রণববাবুকে সকলেই চেনেন তাঁর জ্ঞানের বিশাল পরিধি, প্রখর স্মৃতিশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের জন্য। কিন্তু বাঙালি মিষ্টির প্রতি তাঁর দুর্বলতা হয়তো অনেকেই জানেন না।” |