নো পার্কিং জোনে গাড়ি রাখা নিয়ে বিতর্কে আইন রক্ষাকারী নয়, আইন ভাঙা বিধায়ক রনি ভি লিংডোরই পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছিল মেঘালয় বিধানলভার অধিকার রক্ষা কমিটি। কর্তব্যপরায়ণ কনস্টেবল এস থাপা ও ডিএসপি (সিটি) চেরি সাডাপকে কাল বিধানসভার অধিকার কমিটির সামনে জবাবদিহি করতে ডাকা হয়েছিল। ওই কমিটির চেয়ারম্যান আবার স্বয়ং রনি। এর ফলাফল কী হবে আন্দাজ করে শুনানি শুরুর আগেই ওই বিধায়ক তথা কমিটির চেয়ারম্যান রনির বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিলেন খোদ এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) রাজীব মেহতা। সহকর্মীদের জবাবদিহি দেওয়ার বিড়ম্বনা
থেকে বাঁচাতেই এই পন্থা নেন এডিজি। কিন্তু এক বিধায়কের ‘অন্যায়’ জেদের কাছে পুলিশ এ ভাবে মাথা নোয়ানোয় রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শুধু বিরোধী দল বা সাধারণ
মানুষ নন, রনির নিজের দল কংগ্রেসও মনে করছে, সামান্য ব্যাপার নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি করেছেন তিনি।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশকর্তাদের নির্দেশে গত সপ্তাহে শিলংয়ের রাস্তায় বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছিল। আইন ভাঙার অপরাধে মন্ত্রী ও বিধায়কের গাড়িকেও রেয়াত করেনি পুলিশ। গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সালেং এ সাংমাকেও হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে গাড়ি ছাড়াতে হয়েছে। তবে এ নিয়ে তিনি কিন্তু কোনও হইচই করেননি। ব্যতিক্রম বিধায়ক রনি। পুলিশের সঙ্গে বিস্তর বাদানুবাদের পরে তখন পিছু হঠতে হয়েছিল রনিকেই। কিন্তু পরে ক্ষুব্ধ বিধায়ক রনি বিধানসভার অধিকার রক্ষা কমিটিতে পুলিশের নামে অভিযোগ জানান। অভিযোগপত্র যায় স্পিকারের কাছে। তারপর কনস্টেবল এস থাপা ও ডিএসপি (সিটি) চেরি সাডাপকে কাল অধিকার কমিটির সামনে হাজির হতে বলা হয়েছিল।
মালিয়েমের বিধায়ক রনির এই জেদ ধরে থাকার কড়া সমালোচনা হচ্ছে। বিরোধী দলনেতা কনরাড সাংমা বলেন, “কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। যাঁরা আইন প্রণয়ন করেন, তাঁরা নিজেরাই আইন না মানতে চাইলে কী করে চলবে? জেদাজেদি করে রনিই ভুল করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে অযথা বিতর্ক বাড়াচ্ছেন তিনি। ”
মাওপ্রেমের বিধায়ক মানস চৌধুরির কথায়, “আমরা সবাই এক আইন মেনে চলতে বাধ্য। যদি সাধারণ মানুষ ওখানে গাড়ি রাখতে না পারেন, রনি কেন অন্যায় আবদার করবেন? বিষয়টি বিধানসভার অধিকার কমিটি অবধি টেনে আনা অযৌক্তিক।”
শাসক দল ইউডিপির মন্ত্রী এ এল হেক ও বিধায়ক পল লিংডোও রনি লিংডোর অভিযোগ নিয়ে বিরূপ। লিংডোর মতে, “বিধানসভার অধিকার রক্ষা কমিটি কারও ব্যক্তিগত অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার ফোরাম নয়।” খাসি ছাত্র সংগঠনের সভাপতি স্যামুয়েল বি জিরওয়া বলেন, “ক্ষমতার অপব্যবহার করে রনি ভুল করছেন। মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। বরং, নিজের ভুল স্বীকার করে নিলে, রনি ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন।” মহিলা সংগঠন সিএসডব্লিউও-র সভাপতি অ্যাগনেস খারসিং ওই বিধায়কের ভূমিকার নিন্দা করে, পুলিশকে এমন নির্ভীকভাবেই কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
রনির নিজে কী বলছেন? তাঁর সাফাই, “আমি এমন কোনও জায়গায় গাড়ি রাখিনি যাতে অন্য গাড়ির অসুবিধা হয়। মাত্র ১০ মিনিটের জন্য গাড়ি রাখতে চেয়েছিলাম। সব ফাঁকা জায়গাই যদি ‘নো পাকির্ং জোন’ হয়, তবে গাড়ি রাখব কোথায়? কর্তব্যরত পুলিশকর্মী আমার সঙ্গে অভদ্র ব্যবহার করে। তাই আমি অভিযোগ জানাতে বাধ্য হয়েছিলাম।” |