এ যাত্রায় পাশ হওয়া অনিশ্চিত। তবু অণ্ণা হাজারেদের ফের অনশন আন্দোলনে নামার হুমকি ও মুলায়ম-লালুপ্রসাদদের প্রকাশ্য বিরোধিতার মধ্যেও সংসদে কাল লোকপাল বিল পেশ করতে চলেছে সরকার। বিলটি নিয়ে আলোচনা ও পরে তা পাশ করানোর জন্য সংসদের চলতি অধিবেশনের মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়ানোও হয়েছে। কৌশলগত ভাবেই সনিয়া-মনমোহন এই বার্তা দিতে তৎপর যে, একটি কঠোর লোকপাল আইন প্রনয়ণের জন্য সরকার যথাসাধ্য করেছে। কংগ্রেস ও সরকারের এ ব্যাপারে আন্তরিকতার খামতি নেই। কিন্তু এর পরেও বিরোধী দল ও অন্যদের বাধায়
যদি বিলটি পাশ না হয়, তার দায় তাদেরই। সরকার বা কংগ্রেসের নয়। যে কারণে কংগ্রেস নেতারা আজ রাতে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা বলেছেন। বিলটি পাশের ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছেন তাঁদের।
কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে সনিয়া গাঁধী আজ বলেন, “বুড়ারিতে দলের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে দুর্নীতি দমনের যে প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিয়েছিল, তা পালন করা হয়েছে। মজবুত লোকপাল গঠনে সরকার একটি বিলের খসড়াও তৈরি করেছে।
অণ্ণা হজারেদের উচিত এবার তা মেনে নেওয়া। সেই সঙ্গে বিরোধীদেরও উচিত সুবিধাবাদের রাজনীতি ছেড়ে বিলটি মেনে নেওয়া। ওই বৈঠকের পর সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধী আজ সংসদের সেন্ট্রাল হলে দীর্ঘ সময় কাটান। লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনা করেন কংগ্রেস ও অন্যান্য দলের সাংসদদের সঙ্গে। সেই আলাপচারিতায় দলের সাংসদদের সনিয়া বলেন, লোকপাল বিল পাশ করানোর জন্য কংগ্রেস লড়াই চালিয়ে যাবে। সেই বৃহত্তর চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার আগে দলীয় সাংসদদের আজ নৈশভোজে নিমন্ত্রণ জানান সনিয়া। পরে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, সরকার তার কাজ করেছে। লোকসভায় কাল লোকপাল বিল পেশ করা হবে। লোকসভায় তা নিয়ে আলোচনা হবে ২৭ ডিসেম্বর। বাকিটা পুরোপুরি সংসদের ওপর নির্ভর করছে।
সমস্যা সেখানেই। বিশেষ করে লালুপ্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিংহরা এই বিল পেশের প্রকাশ্য বিরোধিতা করার পরে অনেকেই এখন মহিলা বিল পর্বের মতোই অশনিসংকেত দেখছেন। সে ক্ষেত্রে এ যাত্রায় লোকপাল বিল পাশ না হলে বিজেপি-র লাভ বই ক্ষতি নেই বলে দলের অনেক নেতা মনে করছেন। কারণ, সে ক্ষেত্রে মূল চাপটা আসবে সরকারের উপরেই। তাদেরই সামাল দিতে হবে অণ্ণা হজারেদের বিক্ষোভ।
সরকারি বিলটির কিছু বিষয়আশয় নিয়ে বিজেপি-র আপত্তি থাকলেও প্রকাশ্যে তারা এমন কিছুই করতে রাজি নয় যাতে দেশবাসীর কাছে এই বার্তা যায় যে, তারা লোকপাল বিলটি পাশ করানোর পথে বাধা দিচ্ছেন। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, সিবিআই-কে লোকপালের আওতায় রাখা বা আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতায় রাখার জন্য বিজেপি কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব আনবে ও সেগুলি নিয়ে ভোটাভুটি চাইবে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বিলটির বিরোধিতা করবে না। তাতে দু’টি দিকই রক্ষা হবে। অণ্ণাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে এই বার্তা দেওয়া যাবে যে, তারাও সিবিআই বা আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতায় রাখতে চেষ্টা চালিয়েছে। আবার বিলটিও পাশ হবে। কংগ্রেসের এক নেতা জনিয়েছেন, আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকে লোকপালের আওতায় রাখার পথ এখনও খোলা রয়েছে। কারণ, এ ব্যাপারে দাবি জানিয়ে স্থায়ী কমিটিতে চিঠি দিয়েছিলেন কংগ্রেসের তিন সদস্য। ফলে সংসদের মনোভাব বুঝে সেই সংক্রান্ত সংশোধন মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রেও অসুবিধা নেই।
তবে এত কিছুর মধ্যে লোকপাল বিলের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, তা আগামিকাল আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। |