ছাদে ফল্স সিলিং। ভিতরে প্লাই বা স্টিলের কাঠামোয় বড় ঘরকে কয়েকটি প্রকোষ্ঠে ভাগ করা। কোথাও একাধিক এসি মেশিন। কোনও বাড়ি কেন্দ্রীয় ভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। বসতবাড়ির মানানসই সিঁড়ি দিয়েই একতলা থেকে দোতলা-তিনতলায় ওঠানামা। জরুরি ভিত্তির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। নিয়মরক্ষা বলতে কয়েকটি অগ্নি-নির্বাপক। বসতবাড়ির পরিকাঠামো নিয়ে এ ভাবেই চলছে ব্যাঙ্ক, এটিএম, ম্যানেজমেন্ট স্কুল, রেস্তোরাঁর মতো বাণিজ্যিক কাজ। ‘জতুগৃহ’ সল্টলেকের অগুনতি বাড়ি।
এমন বহু বাড়ির নকশা নগরোন্নয়ন দফতরের অনুমোদন পেয়েছে আবাসিক বাড়ি হিসেবে। অভিযোগ, অতিরিক্ত আয়ের জন্য মালিকেরা বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন বাণিজ্যিক সংস্থাকে। অন্দর সেজেছে দাহ্য পদার্থে। কোথাও বাড়ির নকশাও বদলেছে। বহু বাড়িতেই প্রতিদিন প্রায় একশোরও বেশি জনসমাগম হয়। অথচ জরুরি অগ্নিনির্বাপণ পরিকাঠামো নেই। নতুন করে পরিকাঠামো তৈরির জায়গাও নেই অনেক ক্ষেত্রে। দমকল সূত্রে খবর, ন্যূনতম আগুনের সঙ্গে লড়ার জন্যও আলাদা জলাধারে জল রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় ভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত জায়গায় স্প্রিঙ্কলার থাকা জরুরি। দরকার আগুন লাগলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বেরোনোর পথও। তবে তার কোনওটাই নেই এই বাড়িগুলিতে।
অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে এবি-এসি বাজার এলাকার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভাইস প্রিন্সিপাল চন্দন দে বলেন, ‘‘ভাড়া বাড়িতে কাজ চালাই। আছে ফায়ার এক্সটিংগুইশার। আমরির ঘটনায় আমরাও চিন্তায়। তাই প্রচুর ছাত্রছাত্রীকে একটি ক্লাসে না এনে সময় ভাগ করে দিয়েছি।” বাড়ির মালিক রাণু কুণ্ডু বলেন, “আমরাও এ নিয়ে ভাবছি।”
পিএনবি এলাকায় বেশ কিছু আবাসিক বাড়িতে চলছে বাণিজ্যিক কাজ। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সাফাই, “আমার ওয়ার্ডে ওই ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিকে কথা বলতে ডেকেছিলাম। কেউ এগিয়ে আসেননি।”
আমরি-কাণ্ডের পরে শহরের স্কুল, হাসপাতাল, বহুতলের অগ্নি-নিরাপত্তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকে এ ভাবে মজুত জতুগৃহের রসদ। স্কুল বা বহুতলে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র মজুত রাখার নির্দেশ জারি করলেও এই বাড়িগুলির ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা এখনও জানায়নি বিধাননগর পুরসভা। চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “বাসিন্দাদের থেকেও অভিযোগ এসেছে। যে সব বসতবাড়িতে বাণিজ্যিক কাজ চলছে, সেখানে অগ্নিবিধি মানা হচ্ছে কি না সব তথ্য জেনে কাউন্সিলরদের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |