শুধু মনের জোর। আর প্রশিক্ষকের উৎসাহ। এই দুইয়ের জোরে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে সোনা জিতে তাক লাগিয়ে গিয়েছেন প্রতিবন্ধী অর্চনা হেমব্রম। ৯ থেকে ১২ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে ‘ন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক সুইমিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ আয়োজিত ১১তম সাঁতার প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলেন নলহাটির কুসুমজলির বাসিন্দা বছর একুশের অর্চনা। ব্যক্তিগত ৪টি ইভেন্ট-সহ আরও ১টি ইভেন্টে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
রাজ্যের ৫২ জন পুরুষ-মহিলা প্রতিবন্ধী প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে ২টিতে প্রথম হয়ে সোনা পদক ও বাকি
|
নিজস্ব চিত্র। |
তিনটিতে দ্বিতীয় হয়ে রূপো পদক পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ১১ বছর ধরে চলা ওই প্রতিযোগিতায় এই প্রথম কোনও আদিবাসী প্রতিবন্ধী মেয়ের যোগদান এবং সাফল্য সত্যিই প্রসংশনীয়। অচর্নার এই সাফল্য রেকর্ড গড়েছে। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন আগে অর্চনা বাবাকে হারিয়েছেন। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরনো হাল। যৎসামান্য জমি চাষ করে সংসার চলে মা ও মেয়ের। আট ভাইবোনের পরিবারে পড়াশোনা দূরের কথা, খেলাধুলোর অবকাশ জোটে না। ছোট থেকে পাথর খাদানে কিংবা পাথর ভাঙা যন্ত্রে কাজ করতে হয় পেটের তাগিদে। এসবকে দূরে সরিয়ে অর্চনা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলায়ও সমান আগ্রহ ছিল তাঁর। এ বার নলহাটির বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন অর্চনা। ছোট থেকেই তাঁর ডান হাত ও বাঁ পা পোলিও আক্রান্ত। মাত্র বছর খানেকের প্রশিক্ষণে এই সাফল্য এসেছে। রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনির জেলা সম্পাদক বদরুদ্দোজা শেখের কাছ থেকে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। এই সাফল্যে তিনি কোচকে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি। তাঁর কথায়, “বদর কাকুর উৎসাহে প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে এই সাফল্য পেয়েছি। আরও দূরে গিয়ে কাকুর পরিশ্রম সার্থক করার পাশাপাশি দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।” তাঁর প্রিয় বদর কাকু বলেন, “সুইমিং পুল নেই, উপযুক্ত সরঞ্জামও নেই। পুকুরেই ওদের প্রশিক্ষণ দিই। ওদের সাফল্য আমার সব থেকে বড় পাওনা।” তাঁর আক্ষেপ, “এই রাজ্যে এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নদের পুরস্কার দেওয়ার চল নেই। তা পেলে প্রতিবন্ধীরা যেমন উৎসাহ পেত, পাশাপাশি আরও এগিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পেত।” |