পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের নাম দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু ট্রেন থেকে বা বাস থেকে নেমে গন্তব্যে যেতে হলে যাত্রীদের কাছ থেকে খেয়াল খুশি মতো রিকশাভাড়া নেন চালকেরা। শুধু তাই নয়, রাস্তার যেখানে সেখানে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ায় যানজটও হয়। এর ফলে দু’দিক থেকে ভুগতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দা থেকে পর্যটক সকলকেই। তাঁদের দাবি, শহরের মোড়ে মোড়ে দেওয়া হোক রিকশা ভাড়ার তালিকা। তৈরি করা হোক সুনির্দিষ্ট রিকশা স্ট্যান্ড।
যাত্রীদের আশঙ্কা, কয়েক ঘণ্টা বাদে শুরু হবে পৌষ মেলা। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে যানজট যেমন হবে, তেমনি রিকশা ভাড়াও তিনগুণ বাড়িয়ে দেবেন চালকেরা।
সরকারি ভাবে কাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পৌষ মেলা। এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব চলবে চারদিন। শুক্রবার থেকে উৎসব শুরু হলেও তার অনেক আগে থেকে বোলপুর-শান্তিনিকেতনে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা। |
রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশা। যানজটে আটকে দমকল। |
বিভিন্ন রকম জিনিসের পশরা নিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। পর্যটকদের এই আনন্দের মধ্যে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে রিকশা ভাড়া ও যেখানে সেখানে রিকশা দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ মুখোপাধ্যায়, মোনালিসা চক্রবর্তী, পর্যটক শঙ্কর দেবনাথ, বিপদতারণ দে’র দাবি, “রাজ্যের অন্য কোনও জায়গায় রিকশাওয়ালাদের দাপট নেই। সে যতই পর্যটনের জায়গা হোক না কেন?” তাঁদের ক্ষোভ, “বোলপুর স্টেশন থেকে শান্তিনিকেতনের দূরত্ব কমবেশি সাত কিলোমিটার হবে। সুনির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা না থাকায় কেউ ৭০ টাকা, কেউ ৮০ টাকা দাবি করেন। সাধারণত ভাড়া ৩০ টাকা। উৎসবের সময় তো কথা নেই। ওই ‘রেট’ ১০০-১৫০টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বচসাও বেধে যায়। আবার অনেক রিকশাচালক আছেন যাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘এই রেটে যেতে হয় তো চলুন, না হলে যেতে হবে না।’ উপায় না থাকলে বাধ্য ওই রেটে যেতে হয়। তাঁরা এক প্রকার জুলুমবাজি করেন।”
বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায় প্রায় ৫ হাজারের কিছু বেশি রিকশা চলে। রিকশা স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তার উপরে রিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। পথচারীরা যে ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করবেন তারও উপায় নেই। কারণ ফুটপাত দখল করে থাকে ছোটখাটো দোকান। এর ফলে যানজটে নাজেহাল হতে হয় পথচারী, যাত্রী থেকে গাড়ি চালকদের। যদিও ভূবনডাঙা এলাকার রিকশাচালক রমেন হাজরা বলেন, “সব রিকশাচালকেরা জোরজুলুম করে ভাড়া দাবি করে এমনটা নয়। কিছু কিছু আছেন ভুলভাল ভাড়া নেন।” চৌরাস্তার রিকশাচালক ভ্রমর ঘোষের দাবি, “কোনও উৎসব, অনুষ্ঠানের সময়ে একটু বেশি জনসমাগম হয়। |
ভাড়া নিয়ে বচসা চালক-যাত্রীর। |
তাই ভাড়া বেশি বলা হয়। যানজটের জেরে ১০ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে ঘণ্টা দু’য়েক লাগে। কিন্তু জোরজুলুমের অভিযোগ ঠিক নয়। হয়তো কেউ কেউ করে থাকতে পারেন।” সব রিকশা চালকের দাবি, “পুরসভা যদি নির্দিষ্ট জায়গায় রিকশা স্ট্যান্ড করে দেয় তা হলে আমরা ওই জায়গায় গিয়ে দাঁড়াব।”
সিপিআইয়ের নেতা তথা বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান কৃষ্ণপদ সিংহরায়ের দাবি, “আমি পুরপ্রধান থাকাকালীন বোলপুর শহরের স্টেশনে ও চৌরাস্তায় রিকশাভাড়ার তালিকা দেওয়া হয়েছিল। রিকশা দাঁড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গাও ছিল। বর্তমানে পুরসভায় তৃণমূল আছে। পুরকর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হলে হেনস্থা হতে হবে না জনসাধারণকে।” আইএনটিইউসির জেলা সভাপতি তথা বোলপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তপন সাহা বলেন, “আমরা রিকশা ভাড়ার তালিকা করেছিলাম। নজরদারি করতে কর্মী ছিল না বলে দিতে পারিনি। তবে এখন উদ্যোগী হওয়ার সময় এসেছে।”
সিপিএমের বোলপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক মানব রায় অবশ্য বলেন, “কোনও কোনও রিকশাচালক এমনটা করছে বলে শুনেছি। তবে সুনির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা করুক পুরকর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি রিকশা দাঁড়ানোর উপযুক্ত জায়গার ব্যবস্থা করা হোক। তা হলেই যানজট যেমন এড়ানো যাবে, তেমনি ভাড়া নিয়ে পর্যটকদের অভিযোগ থাকবে না।” অন্য দিকে, বোলপুর স্টেশনে রিকশা স্ট্যান্ডের নেতা তৃণমূলের অশোক সাহানি বলেন, “জুলুমবাজির অভিযোগ ঠিক নয়। হতে পারে কেউ ১০ টাকা, ২০ টাকা বেশি বলেছেন। তবে বর্তমানে জিনিসপত্রের যা দাম, তাই বাসিন্দা বা পর্যটকেরা বিবেচনা করলে ভাল হয়। ভাড়া তালিকা থাকলে ভাল হয়।”
ভাড়া ও যানজটের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুরপ্রধান, তৃণমূলের সুশান্ত ভকত বলেন, “বিভিন্ন স্তরের মানুষদের সঙ্গে ভাড়া তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শহরে যানজট এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |