যন্ত্র আটকে রাখলেন গ্রামবাসীরা
খোলামুখ খনির জমি নিয়ে জট কাটল না
দুবরাজপুরের লোবা অঞ্চলে প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনির জন্য জমি নেওয়াকে ঘিরে তৈরি হওয়া জট কাটল না। ওই কয়লাখনি গড়তে আসা ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ বা পিপিপি ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ডিভিসি-এমটা কোল মাইনস লিমিটেডের মাটি কাটার যন্ত্র বুধবারও দিনভর আটকে রাখলেন গ্রামবাসীদের একাংশ এবং স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যেরা।
বস্তুত, ওই সংস্থার জমি কেনার ‘পদ্ধতি’-কে ঘিরে স্থানীয় মানুষ ও কৃষিজীবীদের একটা বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমেই দানা বাঁধছে। জমি কেনা সংক্রান্ত একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেই সোমবার বিকেল থেকে ওই সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র কৃষিজমি রক্ষা কমিটির ব্যানারে আটকে রেখেছেন কিছু বাসিন্দা। মঙ্গলবার রাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যন্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এলাকার মানুষ শিল্পের বিরোধী নন। কিন্তু তাঁদের আপত্তি জমি কেনার ‘পদ্ধতি’ নিয়ে। সব মিলিয়ে, গত পাঁচ বছর ধরে যে প্রস্তাবিত কয়লাখনির কথা শোনা যাচ্ছে, তার ভবিষ্যৎ কী, কী ভাবেই বা জমি-জট কাটবে, জানা নেই কোনও মহলের।
খানিকটা দিশাহারা বীরভূম জেলা প্রশাসনও। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা শুধু বলেছেন, “মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সমাধানসূত্র বের করতে।” বৈঠকে কি আদৌ কাজ হবে? এখন প্রশ্ন সেটাই। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশই বলছেন, জমি-জট যে ভাবে ঘোরালো হচ্ছে, তাতে দ্রুত এর মীমাংসা হওয়া কঠিন। দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়।
আটকে রাখা হয়েছে মাটি কাটার যন্ত্র। নিজস্ব চিত্র
জট কীসের?
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, ওই খোলামুখ কয়লা খনি গড়ে তুলতে লোবা পঞ্চায়েত এলাকার লোবা-সহ ১০টি মৌজার মোট ৩,৩৫৩ একর জমি কেনার কথা ছিল ডিভিসি-এমটার। এর মধ্যে ২২৩২ একর জমি শুধুমাত্র খনির জন্য। বাকিটা পুনর্বাসন-সহ অন্য কাজে ব্যবহারের জন্য রাখার কথা। গোটা প্রকল্পের উদ্দেশ্য, ডিভিসি পরিচালিত দুর্গাপুর ও মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা সরবরাহ করা। সে জন্য বছরখানেক আগে থেকে এলাকার জমির মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কেনাও শুরু করেছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
এই জমি কেনা নিয়েই বিবাদের সূত্রপাত। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির অভিযোগ, সংস্থার ‘প্রতিশ্রুতি’ অনুযায়ী একলপ্তে এলাকার সব জমি কেনার কথা থাকলেও বাস্তবে ওই সংস্থা দু’-চারটি মৌজায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জমি কিনে কয়লাখনির জন্য খননকাজ শুরু করতে দিতে চাইছে। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ কৃষিজীবী, দিনমজুর, খেতমজুর, বর্গাদার বা পাট্টাদার-সহ এলাকার অধিকাংশ মানুষকে ‘অন্ধকারে’ রেখে কিছু মধ্যস্থতাকারী মারফত জমি কেনা চলছে। জমিহারা ক্ষুদ্র চাষি, অনথিভুক্ত জমির মালিক, বর্গাদার, পাট্টাদার বা খেতমজুরদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তার কোনও স্পষ্ট রূপরেখা স্থির না করেই জমি কেনা চলছে বলেও কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যদের দাবি। মূলত এই সব অভিযোগেই সংস্থাটির মাটি কাটার যন্ত্র আটকে রাখা হয়েছে। এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, লোবা ও পলাশডাঙা গ্রামের মাঝামাঝি একটি জায়গায় মাটি কাটার যন্ত্রটিকে আটকে রাখা হয়েছে। পাশেই কৃষিজমি রক্ষা কমিটির ব্যানার ও ছাউনি। যন্ত্রের গায়ে ও এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গ্রামবাসী তথা কমিটির ১৮ দফা দাবি সংবলিত পোস্টার সাঁটানো। কমিটির পক্ষে শেখ মতিন, ভবসিন্ধু মণ্ডল, ফেলারাম মণ্ডল, মোহিত ঘোষদের দাবি, “আমরা শিল্পের বিপক্ষে নই। কিন্তু একসঙ্গে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ দিয়ে জমি কিনলে অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত শিল্পনীতি মেনে জমি নিলে আমাদের আপত্তি নেই। পাশাপাশি প্রান্তিক চাষি ও খেটে খাওয়া মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানও সুনিশ্চিত করতে হবে।” লোবা পঞ্চায়েতের সিপিআই প্রধান শেখ সফিকেরও অভিযোগ, “পঞ্চায়েতকে অন্ধকারে রেখে জমি কিনছে ওই সংস্থা। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”
কৃষিজমি রক্ষা কমিটি বা পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগ মানতে নারাজ নির্মাণকারী সংস্থার জয়দেব-খাগড়া প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল। দুবরাজপুরের অফিসে বসে তিনি বললেন, “আমরা মোট পাঁচটি মৌজার ৭০০ একর জমি ইতিমধ্যেই কিনেছি এবং জমির দাম ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করেই তা করা হয়েছে। কোনও দালাল মারফত নয়, আমরা সরাসরি জমির মালিকের কাছ থেকে জমি কিনেছি। এ ভাবেই বাকি জমিও কেনা হবে।” তাঁর আরও দাবি, গত বছর তৎকালীন জেলাশাসক, সংস্থার আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, এলাকাবাসী এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের উপস্থিতিতেই জমির দাম ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছিল। সে-সব মেনেই জমি কেনা হয়েছে। এখানে অস্বচ্ছতা বা সাধারণ মানুষকে অন্ধকারে রাখার প্রশ্নই নেই।
পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, “আজ প্রধান যা বলছেন, সেটা ওই বৈঠকে বলেননি কেন? কেন সে দিন প্রতিবাদ করেননি?” তাঁর অভিযোগ, “মুষ্টিমেয় কিছু লোক এলাকাবাসীকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের অন্যায্য দাবি মানানোর চেষ্টা করছেন জোর করে। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নামে যাঁরা যন্ত্র আটকে রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে আগেই আমাদের জমি বিক্রি করেছেন। তা হলে এই আন্দোলনের যুক্তি কী? এ ব্যাপারে প্রশাসনই যা করার করবে।”
কৃষিজমি রক্ষা কমিটির পক্ষে জয়দীপ মজুমদারের পাল্টা দাবি, “প্রায় সাড়ে ৩ হাজার একর জমি যেখানে ওই সংস্থার প্রয়োজন, সেখানে তারা মাত্র ৬০০-৭০০ একর জমি কিনে কী ভাবে আমাদের মুষ্টিমেয় বলে দাবি করছে? সিংহভাগ জমিই তো এখনও কেনা বাকি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.