সরকারি বরাদ্দ খরচ করে সদ্য নির্মিত দুটি ক্লাস ঘর উদ্বোধনের আগেই ভেঙে অন্য প্রকল্পের টাকা দিয়ে ফের নির্মাণ কাজ শুরুর উদ্যোগের ঘটনায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তুফানগঞ্জ শহর লাগোয়া কালীবাড়ির কাছে অন্দরান ফুলবাড়ি-১ আর আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা তো বটেই স্কুলের ভিলেজ এডুকেশন কমিটির সদস্যদের একাংশও সরব হয়েছেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফেও ওই তুঘলকি কাণ্ডের প্রতিবাদে তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পৌঁছেছে স্কুল শিক্ষা ও সর্বশিক্ষা দফতরের কাছেও। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ওই ব্যাপারে বিডিওকে রিপোর্ট দিতে বলব।’’ কোচবিহারের ডিপিও আমিনুল আহসান সাফ বলেছেন, “একেবারে ব্যবহার অযোগ্য না হলে কোনও ঘর ভাঙা যায় না। সেজন্য অনুমতিও নিতে হয়। তা ছাড়া ঘর ভেঙে ঘর তৈরির জন্যও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’’ |
স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মাল্টি সেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান বা এমএসডিপি থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করে টিন শেডের দুটি ক্লাস ঘর তৈরি করা হয়। সদ্য তৈরি ক্লাস ঘর দুটির উদ্বোধনও হয়নি। তার মধ্যেই ডিপিইপি থেকে চাইল্ড উইথ স্পেশাল নিড বা সিডব্লিউএসএন প্রকল্পে ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ওই টাকা দিয়ে নতুন ক্লাস ঘর তৈরির জন্যই সদ্য নির্মিত ঘর দুটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সাফাই, এমএসডিপি প্রকল্পে নির্মিত ক্লাস ঘর দুটির মাঝে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সিডব্লিউএসএন প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে সেখানে ঘর হলে সুবিধা হত। ওই কাজের প্রয়োজনেই ভিইসি’র বৈঠকে সিদ্ধান্তের পরেই উদ্বোধন না-হওয়া দুটি ক্লাস ঘর বিক্ষিপ্ত ভাবে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কালীপদ কর্মকার বলেন, “ভিইসির মিটিংয়ে সকলে মিলেই ওই সিদ্ধান্ত নেন।’’ যদিও তা মানতে চাননি এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দা জুরান সাহা বলেন, “ওই স্কুলের মাঠে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা ছিল। অনায়াসেই সেখানে নয়া ঘর করা যেত। কোনও যুক্তিতেই এতটুকুও ভাঙচুর সমর্থন করা যায় না। এতে সরকারি বরাদ্দ যেমন অপচয় হচ্ছে, তেমনই নতুন তৈরি ঘর দুটিও বিপজ্জনক হতে পারে।’’ স্কুল ভিইসি কমিটির সদস্যদের একাংশও শিক্ষকদের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ভিইসি কমিটির সদস্যা জ্যোৎস্না দাস, চারুবালা বর্মনদের অভিযোগ, “একটি নয়া ঘর তৈরির জন্য দুটি নতুন ঘর ভাঙা হচ্ছে দেখে চমকে গিয়েছি। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত যে মিটিংয়ে হয়েছে সেখানেও যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া এলাকার বহু স্কুলে নানা সমস্যা রয়েছে। ফলে তৈরি ক্লাসঘর ভাঙাটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ তৃণমূলের অন্দরান ফুলবাড়ি-২ অঞ্চল সভাপতি সুধীর দাস গোটা ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। ওই বিষয়ে বিডিওকে লিখিত আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বিডিও তাপস সিংহরায় বলেন, “কোনও ভাবেই ঘর ভেঙে ঘর তৈরির কাজ বরদাস্ত করা যায় না। এই নিয়ে তদন্ত হবে।” |