|
|
|
|
|
ফ্যাশনেরও কিন্তু মাথামুণ্ডু হয় |
চুল শৌখিন জীব, এতটুকু সাজালেই রূপের আলো বাড়ে দ্বিগুণ-চতুর্গুণ। আর সে সব অলঙ্কারের
হরেক দেশ গেলেই, বিচিত্র বেশ। মানে? ধরুন, ব্যারেট ক্লিপ বা অ্যালিস ব্যান্ডে পুতুল পুতুল চেহারা,
জলদস্যু বান্দানায় রহস্যসাজ, আবার জিপসি টায়রায় রানি ক্লিয়োপাত্রা। চিরশ্রী মজুমদার |
অ্যাকসসেরি কিনতে গেলেই সবার আগে খোঁজ পড়ে ব্যাগ, বেল্ট, সানগ্লাস ইত্যাদি টুকরোদের। ও দিকে ক্লিপ, হেয়ারব্যান্ড, বান্দানারা মুখ ঢাকে অবহেলায়। তখন ‘ও তো খুকুদের সাজ-সামগ্রী’ বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। টনক নড়ে কোথাও বেরোবার সময়, হুড়োতাড়ার লগ্নে। বেশ একটা সুন্দর রঙিন পোশাকের সঙ্গে, মানিয়ে একটি ব্যাগ নিলেন, আর তখনই আয়না দেখে মন খুঁতখুঁত হল, ওহো, কী যেন বাদ পড়েছে। পার্লার-যত্নে সুরক্ষিত এক ঢাল রেশম রেশম চুল এ দিক-ও দিক ঝাপটাচ্ছে, একটি ফুলছাপ ব্যান্ড বেঁধে নিলে ষোল কলা পূর্ণ হত না কি? মুকুটটি মাথায় না পরা পর্যন্ত কি ইন্দুমতীকে রাজকন্যা বলে মনে হয়? না, অত দূর চলে যেতে বলছি না, তবে ঝলমল চুলকে যদি কিছু দেশি-বিদেশি, নতুন-পুরনো অলঙ্কারে সাজিয়ে নেওয়া যায়, তা হলে সৌন্দর্য বাড়বে আরও অনেকখানি।
|
ব্যারেট ক্লিপ |
গত কয়েক বছরে লেয়ারিং, রেজর, মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ ইত্যাদি হেয়ার স্টাইলের বাড়-বাড়ন্ত লক্ষ্যণীয়। এ ধার ওধার কুচো কুচো চুলের গোছা, স্টাইলিশ লকস। পার্লার থেকে বের হওয়ার সময় বেশ পরিপাটিই ছিল, কিন্তু ক’দিন যেতেই এ দিক সে দিক উড়ে, উলটে পালটে ভয়ানক দশা। সাধের স্টাইলটি ফেরত পেতে ক্লিপ আটকালেই হয়। এক পাশে সিঁথি করলে, যে চুল মুখের ওপর এসে বিরক্ত করে, তাকে এই ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখুন। আপনা-আপনি চুল সেটও হয়ে যাবে। সব থেকে বেশি রয়েছে নানা রঙের জেমস ক্লিপ-এর মতো তেকোনা দেখতে ক্লিপ ব্যারেট বা ববি পিন। খুঁজলে একই ক্লিপে প্রচুর রং, থ্রি-ডি ইত্যাদি নকশাও পাবেন। নব্বই দশকে এটিকে মাধুরী ক্লিপ ডাকতে শুনেছি, ইদানীং নাম হয়েছে জেনেলিয়া ক্লিপ, আবার দিদিমা দেখলে বলেন, ‘এ তো নন্দা-সাধনাকেও পরতে দেখেছি।’ যুগ যুগ ধরে দেশ-বিদেশি নায়িকারা পরেই চলেছেন, এই ফ্যাশনের ক্ষয় তো নেই-ই, ইন-আউট ইত্যাদিও নেই। এক আঙুল, এক ইঞ্চি, আধ ইঞ্চি নানা সাইজের পাবেন। কোথায় যাচ্ছেন, কোন পোশাকের সঙ্গে পরবেন ভেবে-চিন্তে কিনে নিন।
ওই রকম লার্জ, মিডিয়াম ও মিনি সাইজেই আরও অনেক নকশার ফ্যান্সি ক্লিপ রয়েছে। তাতে রঙিন বো, আকাশের তারা, জলের লাল-নীল মাছ। কোনওটা পরলে ডিজাইন মুন্সিয়ানায় মনে হবে, মাথায় গোলাপ ফুল আটকানো বা প্রজাপতি এসে বসেছে। কোনওটায় ক্রিস্টাল বা সোয়ারোভস্কি পাথর বসানো। দোকানি বলে ভিনটেজ ক্লিপ। আদ্যিকালের সেই কালো লম্বা খাঁজকাটা ক্লিপের ওপরও পাথর বসিয়ে নকশা করে, তাকে ফ্যাশন-উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে।
|
বানস্টিক, বানস্লাইড |
খোঁপা বললে সেকেলে বলবেন, আর একই বস্তুকে ‘বান’ বললেই হেয়ারস্টাইল হয়ে যায়। এই হেয়ারবানকে ঠিকঠাক আটকে রাখতে, আরও আকর্ষক দেখাতে চাই চুলের কাঁটা, থুড়ি বানস্টিকস। এই কেশবিন্যাস রীতিটি চিন দেশের। চৈনিক নারী-পুরুষ ঘাড়ের কাছে চুল গুটিয়ে তাতে পশুর ছোট্ট হাড় গুঁজে রাখত। পরের দিকে গুঁজত কাঠের তৈরি চপস্টিকস। এখন চপস্টিক পাওয়া যায় প্লাস্টিক, পালিশ করা কাঠ বা হাতির দাঁতের। কাঠির এক প্রান্তে ঝোলে শিকলি বা ঘণ্টা সদৃশ কিছু নকশা। সেই নকশাগুলিতে পাহাড়ি লোকজীবনের স্পষ্ট প্রভাব।
এ ছাড়া রয়েছে বান স্লাইড। পাতলা কাঠের অর্ধগোলাকৃতি বস্তু, দু’দিকে ফুটো করা। এ বার ওটি খোঁপার ওপর সুবিধামতো বসিয়ে ফুটো দু’টি বরাবর একটি কাঠি গেঁথে দিলেই হল।
বাঙালি জমিদারঘরের মেয়ে-বউরা চুলে হাত খোঁপা করে, তার ওপরে একটি ছোট্ট হাতির দাঁতের চিরুনি গুঁজত। তারও আধুনিক সংস্করণ পাবেন। টিয়ারা কোম্ব নামে, কনেসাজের জন্য ভারী উপযুক্ত। খোঁপায় গোঁজার কুচি কুচি রত্ন পাথর বা জুয়েল স্টাডও রয়েছে।
|
ক্ল, ক্ল্যাম্প, অ্যালিগেটর ক্লিপ |
চুল এখন খুলে রাখাটাই দস্তুর। না সামলানো গেলে রয়েছে কুমীর বা অন্য সরীসৃপের লম্বাটে চোয়াল বা ধারালো দাঁতের মতো দেখতে কেশবন্ধনী ক্ল, অ্যালিগেটর ক্লিপ। পথচলতি নাম ক্লাচ ক্লিপ। এই ধরনের ব্যাক-ক্লিপ চুলের গোছাকে কামড়ে থাকে, তাই বেশি ক্ষণ ব্যবহার না করাই ভাল। যে ক্লিপগুলির দাঁতের অংশটি বাহারে রেশম কাপড় দিয়ে ঢাকা, ওপরে ফুল-পাতা-পাথুরে শৌখিন নকশা-কাটা, সেগুলি অনুষ্ঠান-পার্বণেরও উপযুক্ত। পোশাকি নাম ভিক্টোরিয়ান ক্ল।
এরই ছোটগুলির নাম পনি-ক্লিপ। পনিটেল বাঁধতে কাজে লাগবে। চলতি মোটা রাবার-ব্যান্ডের বদলে রয়েছে নরম রঙিন গেঞ্জি কাপড়ে মোড়া পনি-হোল্ডার। স্ট্রাইপড, ক্রুশ কাপড়ে বোনা, মিক্সড কটনের। চুলকে আলগা ধরে রাখে, ছেঁড়ে না বা ক্ষতি করে না।
|
বান্দানা, হেড ব্যান্ড, সোয়েট ব্যান্ড |
বহু প্রাচীন যুগে ইউরোপের মেয়েরা গেরস্থালি কাজের সময় মাথায় টুকরো কাপড় জড়িয়ে রাখত। কালক্রমে, ওই কাপড়টা ছোট হতে হতে এক ফালিতে পরিণত হয়, মাথার সামনের অংশে পরা হতে থাকে। এ ভাবেই আজকের গণ্যমান্য ফ্যাশন অ্যাকসেসরি হেড-ব্যান্ড বা হেয়ার ব্যান্ডের উৎপত্তি। আদতে এটি সিল্ক বা জর্জেট কাপড়ের হয়। ঘোড়ার খুরের আকৃতির, একটু শক্ত প্রকৃতির হেয়ার ব্যান্ডগুলির নাম অ্যালিস ব্যান্ড (‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ গল্পে অ্যালিসকে এটি পরতে দেখা গিয়েছিল)। সরু-মোটা রংবেরঙের, বো-ফুল-টুপি আঁটা অ্যালিস ব্যান্ড ছোট-বড় সবার জন্যই প্রচুর প্রচুর রয়েছে। কোনওটাকে আবার বিনুনির মতো দেখতে। তবে হেয়ার ব্যান্ড এখন শুধুই মেয়েদের একচেটিয়া নয়। ডেভিড বেকহ্যাম, সিদ্ধার্থ মাল্যের দেখাদেখি ছেলেরাও প্রচুর ধাতব হেয়ার ব্যান্ড ব্যবহার করছেন।
শুধু সাজের উদ্দেশ্যে, তেকোনা বা চৌকো আকৃতির রঙিন কারচিফ (COUVRE CHEF যা দিয়ে মাথা ঢাকা হয়) কায়দা করে বাঁধলেই তাকে বান্দানা বা হেডস্কার্ফ বলে। খেলোয়াড় বা রকস্টাররা কপালের ওপর অংশে টেরিক্লথের সোয়েট ব্যান্ড আটকান। এই ফ্যাশনেবল ব্যান্ড ঝাঁকড়া চুল সামলায়, কপালের ঘাম শুষে নেয়। ফলে খেলা বা স্টেজ পারফর্মেন্সের সময় সুবিধে হয়। টিন-এজাররা প্রিয় তারকার অনুকরণে এই ফ্যাশন করতেই পারে।
মেয়েরা যদি নজর কাড়তে চান, তা হলে পরুন ‘বানজারা বা জিপসি সার্কলেট’। মিশরের রানি ক্লিয়োপাত্রা যেমনটা পরতেন। কপালের ওপর, হারের মতো দেখতে সুদৃশ্য অলঙ্কার, মুকুটের বদলি। আশির দশকে খুব দেখা যেত। বৎসরান্তের উৎসব-ঋতু উপলক্ষ্যে ফিরে এসেছে, মিলবে বিদেশি অ্যাকসেসরি ব্র্যান্ডের বিপণিতে। |
|
|
|
|
|