|
|
|
|
|
উঠবেন তো কী, জমিয়ে বসবেন না? |
হোক না অস্থায়ী, আস্তানা তো বটে! অপছন্দের কাঠামোতেই
বরং
আনুন নতুনের গন্ধ। রইল সেই ভোলবদলের রেসিপি। পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়
|
বাড়ি কী ভাবে সাজানো হবে, অবশ্যই তা ব্যক্তিগত রুচির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সে তো নিজের বাড়ির ক্ষেত্রে। ভাড়া বাড়ি হলে? সাধ্য থাকলেও তখন আপনি অন্যের মর্জির অধীন। রংচটা দেওয়ালে কলি ফেরাতে চাইলে বাড়িওয়ালা রে রে করে ছুটে আসবে, বিবর্ণ মেঝে পাল্টাতে বললে স্রেফ হাত উল্টে দেবে, এমনকী, অনেক সময় দেওয়ালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেরেক লাগানোরও উপায় থাকে না। একখানা আস্ত ঝকমকে বাড়ি ভাড়ায় পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষেরই তা থাকে না। তা হলে? কী ভাবে সাজানো যায় এই স্বল্পকালীন আস্তানাকে? আসবাবপত্রই বা কী ভাবে বাছতে হবে?
ভাড়া বাড়ির একটা মূল সমস্যা থাকে রং করানো নিয়ে। তাই রঙের বদলে দেওয়ালে পছন্দ মতো ওয়ালপেপার আটকে নিতে পারেন। এগুলো বদলানোও সহজ, আবার কিছু দিন পর বাড়ি ছাড়ার প্রয়োজন হলে চট করে খুলে দেওয়ালকে আগের অবস্থায় ফিরিয়েও দেওয়া যায়। একটা সুন্দর ওয়ালপেপার দেওয়ালের অনেক খুঁত, ড্যাম্পের দাগ ঢেকে দিতে পারে। দাগ ঢাকতে পাশাপাশি দুটো বড় মুখোশও টাঙিয়ে দিতে পারেন। দেওয়ালে অনেক সময় একটা লম্বা রেখা বরাবর চিড় ধরার দাগ থাকে। এই অংশটায় একটা নাইলন বা পাটের দড়ি খাটিয়ে পর পর বেশ কিছু হাতে আঁকা ছবি, রংচঙে ফটোগ্রাফ, পোস্টার, কাট-আউট ক্লিপ আটকে ঝুলিয়ে দিন। পেরেকও আটকাতে হবে না, চিড়ও চোখে পড়বে না।
দেওয়ালের কোনও কোণে চটা উঠে গেলে, সেখানে একটা ইন্ডোর প্লান্টের টব রেখে দিতে পারেন। এতে যেমন রংচটা অংশটাকে আড়াল করা যাবে, ঠিক তেমনি চকচকে গাছের পাতা ঘরের পরিবেশে একটা সজীব ভাবও যোগ করবে। মেঝেতে পেতে দিন বাহারি কার্পেট বা দরি। বিবর্ণ মেঝে আপনাকে আর বিব্রত করবে না। এখন বাজারে বিভিন্ন আকারের পাপোশ পাওয়া যায়। পাপোশও চমৎকার ভাবে মলিন মেঝে ঢাকতে পারে।
আপহোলস্ট্রির ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিন। উজ্জ্বল রঙের পর্দা, সোফা আর কুশন কভার দিয়ে ঝলমলে করে তুলুন ঘরটাকে। শোওয়ার ঘরে আপনার ড্রেসিং ইউনিট-এর আয়নার সামনের চুড়ি স্ট্যান্ডটায় বেশ কয়েক গোছা রঙিন চুড়ি ঝুলিয়ে দিন। এর ফলে ওই অংশ কিছুটা হলেও রঙিন হয়ে উঠবে। এক তলায় থাকতে হলে বা ঘরে পর্যাপ্ত আলো না ঢুকলে হালকা, অথচ উজ্জ্বল রঙের পর্দা বাছবেন, যাতে ঘর অন্ধকার না লাগে। তবে উল্টো দিকের বাড়ির জানলা আর আপনার জানলা মুখোমুখি হলে দু’টি পর্দা লাগান। ছোট পর্দাটি হতে পারে ফিকে রঙের শিয়ার কার্টেন, আর বড়টি হবে সুতি আর পলিয়েস্টার মেশানো। এতে প্রয়োজনীয় আব্রুও থাকবে, আবার ঘরে আলোও খেলবে। এই ধরনের বাড়িতে অনেক সময়ই নিজের পছন্দ মতো জায়গায় খাট রাখা যায় না। যদি খাটের অবস্থান জানলা থেকে বেশ কিছুটা দূরে হয়, তা হলে ফিকে রঙের চাদর বেছে নিন। রংবেরঙের সুজনিও বিছিয়ে রাখতে পারেন।
এ বার আসি আসবাবের কথায়। ভাড়া বাড়িতে আসার সময় মাথায় রাখবেন, অল্প সময় পরেই বাড়ি ছেড়ে দিতে হতে পারে। তাই আসবাব এমন বাছবেন, যাতে চট করে সরিয়ে নিতে অসুবিধে না হয়। ভারী ভারী অ্যান্টিক ফার্নিচার নয়, হালকা ওজনের আসবাবে বাড়ি সাজান। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, যাতে আপনার আসবাবের মধ্যেই পর্যাপ্ত স্টোরেজ-এর ব্যবস্থা থাকে। এতে অতিরিক্ত স্টোরেজ-এর জন্য দেওয়াল খোঁড়াখুঁড়ি করে বাড়িওয়ালার বিরাগভাজন হতে হবে না। ড্রয়ার সহ লো-লাইং বেড কিনুন। ব্যাকরেস্ট না থাকাই ভাল। খুলে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেকটা জায়গা নেবে। ওয়ার্ডরোব হবে হালকা প্লাইয়ের তৈরি। ড্রেসিং ইউনিট আলাদা করাই ভাল। কারণ ড্রেসিং ইউনিট সহ বিশাল ওয়ার্ডরোব চট করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ঘরে অবশ্যই একটা ফোল্ডিং আলনা রাখবেন। এতে জামাকাপড় রাখা যাবে। আবার বয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ বলে রোদ পড়ছে এমন জায়গায় এটি রেখে ভিজে জামাকাপড় ঝুলিয়ে দিতে পারবেন। বাচ্চার ঘরে খেলনা রাখার আলাদা কোনও শো কেস না তৈরি করে কয়েকটি ফোল্ডিং লন্ড্রি ব্যাগে খেলনাগুলো পুরে রাখুন। বাড়ি পাল্টানোর সময় ঝামেলা কম হবে।
দেওয়ালে ওয়াল হ্যাঙ্গিং ঝোলানোর শখ অনেকেরই থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত পেরেক পোঁতার অনুমতি যদি না মেলে? এর জন্য কিছু স্টিক অন হুক কিনে নিতে পারেন। এতে ওয়াল হ্যাঙ্গিং দিব্যি ঝোলানো যাবে। রান্নাঘরে এই ধরনের হুক থেকে হাতা, খুন্তির মতো টুকটাক জিনিসও ঝোলানো যায়। লিভিং রুমের সোফা হবে ছোটখাট। বেতের হলে তো কথাই নেই। কাঠের ওপর কলমকারী কাজ করা সিঙ্গল সোফাও দুটো কিনতে পারেন। খুব ভাল হয় খানকতক স্টোরেজ কাম স্টুল কিনে রাখতে পারলে। জিনিসপত্র পুরেও রাখা যাবে, আবার প্রয়োজন মতো এ দিক ও দিক নাড়াচাড়াও করা যাবে। রান্নাঘরে অবশ্যই একটা মাল্টিপারপাস ট্রলির ব্যবস্থা রাখবেন। এতে অতিরিক্ত বাসনপত্র সহ খাবারদাবার সবই ধরে যাবে। একটা স্টোরেজ সহ বেসিন কিনে নিলে দেওয়ালে আর ক্যাবিনেট টাঙানোর ঝামেলা থাকে না। বই বা অন্য জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখতে চাইলে সুন্দর দেখতে ফোল্ডিং ল্যাডার কিনে নিন। ল্যাডারের ধাপগুলোকে তাক হিসেবে দিব্যি ব্যবহার করা যাবে। |
|
|
|
|
|