শীতের ট্র্যা-ভেলি-গুড়
আউলি
বাঙালি সাধারণত শীত এলে লেপ ছেড়ে কোথাও বেরোয় না (প্রাচীন প্রবাদ ও অভ্যাস)। আর যে সব ডেয়ারডেভিল না বেড়িয়ে থাকতে পারেন না, তাঁরা ম্যাক্সিমাম শিমলা অবধি। আমরা বলি, আর খানিকটা পা চালান, পৌঁছে যান আউলি। ভারতীয় ট্যুরিস্ট বাজারের নতুন রমরমা। বদ্রিনাথের রুট-এ পড়বে, দেহরাদুন-এর জলি গ্র্যান্ট বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ট্যাক্সি পাবেন। নীচের ছবি দেখেই বুঝতে পারছেন, আউলি এক্কেবারে হিমালয় কী গোদ মে। বরফের ঢালাও সংসার, যাকে বলে আর কী! এখানে আসার সেরা সময় বলে আলাদা করে কিছু নেই, যে কোনও মরশুমই বেস্ট টাইম। ডিসেম্বর-জানুয়ারি নাগাদ আসতে চাইলে, বলে রাখি, তাপমাত্রা কিন্তু মাইনাস ৪-ও ছুঁয়ে যায়। অতএব প্রস্তুত থাকবেন।
আজকাল এ তল্লাটে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন বিদেশিরা। এবং বিশ্বাস করবেন না, রিপোর্ট দিচ্ছেন, যে আউলি’র মতো জমজমাট স্কি-রিসর্ট সারা পৃথিবীতে খুব একটা নেই। ভাবতে পারছেন?
যাঁরা ভাবতে পারছেন না, তাঁদের জন্যে রয়েছে তিন দিকে খোলা হিমালয়। চুপচাপ সূর্যের পড়ন্ত আলোয় পাহাড়ের রূপবদল দেখুন, তার পর যা-ই দেখবেন, মনে হবে মধুবালা! ফাজলামি বাদ দিয়ে ঘুরে আসুন হনুমান মন্দির। সঞ্জীবনী আনতে গিয়ে এখানেই নাকি হনুমান মিনিট দুয়েক জিরিয়ে নিয়েছিলেন। অলকানন্দা নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও দেখতে বেশ লাগবে। এখানেই পাবেন একটা বিশাল কৃত্রিম জলাশয়। প্রায় ৩০০০ মিটার উচ্চতায় এমন একটি জলাশয় দেখে তাক লেগে যাবে, গ্যারান্টি। আপনার হাঁ আরও বড় হয়ে যাবে, যদি আপনি ৪ কিলোমিটার লম্বা রুট-এ কেব্ল কার চড়ে একটা চক্কর লাগান। ডিপ ফ্রিজ খুলে বরফ দেখে আর কদ্দিন, হ্যাঁ? অতএব...

ওয়াইথিরি
এই ঠান্ডায় একটু ভিজে স্যাঁতসেঁতে জঙ্গলে হলে কেমন হয়? দেখবেন চট করে দলে লোক পাবেন না। তবে যাঁরা হাত তুলছেন, তাঁরা চলুন ওয়াইথিরি। এটি কেরলের ওয়াইয়ানাড় জেলায় অবস্থিত। কোঝিকোড় থেকে ঘন্টা দুয়েকের রাস্তা। ওয়াইথিরি জুড়ে রয়েছে চা, কফি, এলাচ, গোলমরিচ আর রাবার প্ল্যান্টেশন। এই সব জায়গায় স্রেফ হেঁটে বেড়ালেই নিজেকে হাফ-ব্রিটিশ মনে হবে। আর তার পর এখানকার কাঠের বাংলোগুলোয় আগুন পোয়ানোর সময়, ‘হেই ইয়াং ফেলো, টুম ইধার কেয়া কারতা হায়...’ বলেও ফেলতে পারেন। মানে পুরনো ইংরেজ আমল এখনও নেমে আসে বাগানে।
আর নামে একাধিক ঝর্না, যেমন সুচিপারা, মেট্টুপাথি। জল এড়িয়ে রক ক্লাইম্বিংও করুন না। অবশ্য পাহাড়ে চড়তে হলে চেম্ব্রা পিক-এ উঠতে পারেন। ২১০০ মিটার উচ্চতা থেকে আশপাশকে চোখ মেলে দেখার অভিজ্ঞতা, স্বর্গীয়। পুকোট লেক-এ কিছু সময় কাটিয়ে চলে যান থোলপেট্টি বা মুথাঙ্গা জঙ্গলে। এই সময় গেলে হাতি, স্পটেড ডিয়ার, স্লথ বেয়ার, গৌর, নানা রকমের পাখি দেখতে পাবেনই। সঙ্গে থাকবে ঝিঁঝি’র শব্দ আর কখনওই বাড়ি না ফেরার মনকে ভুল প্রতিশ্রুতি।

হাফলং
আমরা ছোট থেকেই জানি যে, শৈলশহর বললেই মূলত উত্তর ভারতের দিকে আঙুল দেখাতে হয়। সেই ছোটবেলার নলেজ প্রায় ৯৫% পাল্টে গিয়েছে এখন, কিন্তু বাকি ৫ সেম টু সেম থেকে গিয়েছে বলেই, বাড়ির পাশে হাফলং জুতসই পাত্তা পেল না। অনেকে বলছেন, পাত্তা পেল না বলেই রক্ষে। তাই এখনও চকচকে ফুরফুরে রয়েছে।
হাফলং অসমে। শিলচর থেকে ৮৫ কি.মি দূর। গাড়ি করে শিলচর বা গুয়াহাটি থেকে তো আসাই যায়। তবে লামডিং জাংশন থেকে লোয়ার হাফলং অবধি ট্রেন চড়ে আসাটাও মন্দ প্ল্যান নয়। জানলার বাইরে তাকিয়ে থেকেই মন ভরে যাবে।
৬৮০ মিটার উচ্চতা থেকে এর পর তো তাকালেই শুধু নীল আর নীল। পাহাড়, জল, ফুল, সব মিলে একাকার। শোনা যায়, শুধু হাফলংয়েই নাকি ২ লক্ষ নানা রকমের ফুল আছে। আর শহরের মাঝখানে হাফলং লেক-এ বিকেলের আলোয় বোটিং, আহা, আহা! শীতকালটা পাখিদের ঝাঁক দেখার চমৎকার সময়।
ওদের উড়ান ধরে পৌঁছে যেতে পারেন কিছু দূরের জাটিঙ্গা গ্রামে। এখানেই তো সেই পাখিদের ঝাঁক এক সঙ্গে আত্মহত্যা করে থাকে, বিশেষ একটি সময়ে। আশা করব, ওয়াচটাওয়ার থেকে ওদের হাওয়ায় ক্রিসক্রসই দেখবেন, মর্মান্তিক কিছু না।
ফেরার আগে, মাইবং গ্রামটা ঘুরে আসবেন। এটি ডিমাসা কাছাড়ি রাজাদের রাজধানি ছিল। তারই কিছু স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে এখানে, নিয়ে আসবেন, সযত্নে।

একটু কান দিবেন প্লিজ! যাঁরা ভ ফর ভালবাসা বা অন্য কিছু না ভেবে ভ্রমণ ভাবেন,
তাঁরা এক ফাঁকে একটা কাগজ টেনে খসখস করে লিখে ফেলুন না নিজের অভিজ্ঞতা।
শিমলা-কুলু-হরিদ্বার-এর মতো চেনা জায়গা নিয়ে লেখা না পাঠানোই ভাল।
একটু অফ-বিট, নতুন, চমকপ্রদ ঠিকানা হলে মন্দ হয় না। লেখা পাঠাবেন:
উৎসব,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা - ৭০০০০১।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.