দু’বছর ধরে টাকা এসে পড়ে রয়েছে। তবু মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেডিওথেরাপি বিভাগ খোলা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, নতুন বিভাগ খোলার জন্য নতুন ভবনের প্রয়োজন। সেই ভবনরে নকশা তৈরি করতে দেওয়া হয়েছিল পূর্ত দফতরকে। বছর ঘুরে গেলেও পূর্ত দফতর নকশা বা আনুমানিক ব্যয় নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে পারেনি। ফলে রেডিওথেরাপি বিভাগও খোলা যাচ্ছে না।
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার মাইতি বলেন, “পরিকাঠামো খাতে দু’বছর আগেই টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। নতুন ভবনের জন্য এর অতিরিক্ত আরও কত টাকা লাগবে সে জন্য পূর্ত দফতরকে নকশা তৈরি করে প্রকল্প-রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পূর্ত দফতরের কাছ থেকে এখনও কোনও রিপোর্টই আসেনি। ফলে কাজও শুরু করা যায়নি।” পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল প্রতিহারের অবশ্য দাবি, “এক দফা প্রকল্প-রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টার তা বাতিল করে দেয়। সে কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। ফের রিপোর্ট তৈরি করে দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যেই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তার পরেই তা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
মেডিক্যাল কলেজে রেডিওথেরাপি বিভাগ থাকবে নাএটা একেবারেই অভাবিত। কিন্তু মেদিনীপুর মেডিক্যালে সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটিই নেই। দু’বছর আগে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে সরকার ৩ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে মেদিনীপুর মেডিক্যালের জন্য। যে টাকায় ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাওয়ারই কথা। অথচ কাজ শুরু হয়নি। বাড়তি টাকা লাগবে কি না, প্রকল্প-রিপোর্ট না আসায় তারও হিসাব কষা যাচ্ছে না। বাড়তি টাকাও চাওয়া যাচ্ছে না সরকারের কাছে। পুরো প্রকল্পটি নিয়েই তাই সংশয় তৈরি হয়েছে। অধ্যক্ষের বক্তব্য, “পূর্ত দফতরের রিপোর্ট পেলে তার পর হিসাব কষে বাড়তি টাকা লাগবে কত সেটা দেখতে হবে। সরকারকেও জানাতে হবে। তার পর শুরু হবে কাজ। কিন্তু পূর্ত দফতরের সেই রিপোর্ট না পাওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটিই পিছিয়ে যাচ্ছে।” রেডিওথেরাপি বিভাগ না খোলায় সমস্যায় পড়ছেন সেই আম-জনতাই। পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুরের একটা অংশের মানুষ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপরেই নির্ভর করেন। ক্যানসার-আক্রান্ত রোগীদের সাধারণ চিকিৎসাটুকুই বড়জোর করা যাচ্ছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। অতি-প্রয়োজনীয় রেডিওথেরাপি-র সুযোগ থাকছে না। রোগীদের অবধারিত সেই কলকাতায় ‘রেফার’ করতে হচ্ছে। ক্যানসার রোগীর বার বার কলকাতায় যাতায়াতও সমস্যার। খরচসাপেক্ষও। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রেডিওথেরাপি বিভাগ খোলা হলে এক জায়গাতেই থাকবে নানা সরঞ্জাম। ‘রে’ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। থাকবেন সর্বক্ষণের চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে এই বিভাগের জন্য এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। সম্প্রতি এই বিভাগের জন্য আরও এক জন চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসক থাকলেই বা কী করবেন? এখনও বিভাগই যে চালু হয়নি! ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ছে। |