আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে অসহায় রোগীদের মৃত্যুর পরেও টনক নড়েনি বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এমনটাই অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরেও তেমন দৃশ্যই দেখা গিয়েছে।
দোতলার এই হাসপাতালে দৈনিক প্রায় ৩০০ জন করে রোগী থাকেন। প্রতিটি তলায় একটি করে আগুন নেভানোর কার্বন ডাই অক্সাইডের সিলিন্ডার রয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কে আরও একটি সিলিন্ডার রয়েছে। দমকলের মতে, প্রয়োজনের তুলনায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা খুবই নগন্য। কিন্তু তার থেকেও আশ্চর্যের, এখানকার কর্মীদের আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণও নেই। আমরি কাণ্ডের পরে হাসপাতালের সুপার অবশ্য বলেছেন, “শীঘ্রই সব কর্মীকে আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আরও অন্তত ১৫টি অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার নিয়ে আসা হবে।” কিন্তু কবে হবে, তা তিনি স্পষ্ট করে জানাননি।
|
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে যা দেখা গেল তা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। পুরুষ ও মহিলাদের শল্য বিভাগ থেকে প্রসূতি ও মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখা গেল বিদ্যুতের তার দেওয়াল থেকে খুলে ঝুলছে। স্যুইচ বোর্ডের ঢাকনাও খোলা। যে কোনও সময় শটর্সার্কিট ঘটলে বড় বিপদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩৪ নম্বর শয্যার রোগী মতু মল্লিকের মাথার উপরে স্যুইচ বোর্ড থেকে তার ঝুলছে দেখিয়ে বলেন, “ওইখান থেকে যদি আগুন লেগে যায় সেই ভয়ে রাতে মশারি টাঙাতে পারি না।” শল্য বিভাগের ১০ নম্বর শয্যার উপরে বিদ্যুতের তার ঝুলছে। ওই শয্যায় থাকা রোগী শিবদাস পাল বলেন, “ভয় পেয়ে কী করব! কপালে যা আছে ঘটবে।” ওই ওয়ার্ডের আরও কয়েকটি জায়গাতেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। হাসপাতালের বেসমেন্টে পড়ে ছিল গজ-ব্যান্ডেজের বান্ডিল। পাশে বস্তা ভর্তি ‘বেডশিট’। নীচের করিডরে ডাঁই করে রাখা অক্সিজেনের সিলিন্ডার। সেখানে অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নজরে আসেনি। প্রতিটি ওয়ার্ডে দেওয়ালের উপরে ময়লা আবর্জনা জমে রয়েছে। সেখানে কাগজপত্র ডাঁই করে রাখা আছে। দেওয়ালে সাঁটা রয়েছে ধূমপানের নিষেধাজ্ঞা লেখা বোর্ড। তা দেখেও সেখানে দাঁড়িয়েই কেউ কেউ ধূমপান করেন। আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে যে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে- সেই সচেতনতা নেই।
উপরের শিশু বিভাগের মূল দরজার ডান দিকে ‘ডাস্টবিন’। বাঁ দিকে অক্সিজেনের সিলিন্ডার। রোগীর আত্মীয়দের ক্ষোভ, এই সব দাহ্য জিনিস যত্রতত্র ছড়িয়ে রাখা হয় উচিত নয়। স্বাস্থ্য কর্মীরা এ ক্ষেত্রে উদাসীন। নীচের ব্লাডব্যাঙ্কেও বিদ্যুৎবাহী তার ঝুলতে দেখা গিয়েছে। সুপারের সেই একই বক্তব্য, “বিদ্যুতের খুলে পড়া তার মেরামত করা হবে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা বলেন, “বিদ্যুতের খুলে পড়া তার লাগানোর জন্য পূর্ত দফতরকে জানিয়েছি।” তিনি নিজেও স্বীকার করেন, “বিষ্ণুপুর হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। সুপারকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” দমকলের বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের ওসি শ্রীকান্ত বেজ বলেন, “হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি শীঘ্রই পরিদর্শনে যাব। তার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |