চার দিকে ঝুলছে বিদ্যুতের খোলা তার। অপারেশন থিয়েটারের পাশের ঘরটাও গুদাম। করিডরে শয্যা, কর্মীদের সাইকেল, মোটরবাইক। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গজ, ব্যান্ডেজ, তুলো, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ওষুধের বাক্স। দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রভূত।
গত বছরই হাসপাতালের অফিসঘরে আগুন লেগেছিল। কিন্তু এখনও অগ্নিনির্বাপণের কোনও সরঞ্জামের ব্যবস্থা হয়নি। শুক্রবার হিজলি গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে হতবাক হলেন পূর্ত-কর্তারা। শুধু তাই নয়, জিনিসপত্র একটু গুছিয়ে রাখার পরমার্শ দিয়ে হাসপাতাল-কর্মীর কাছ থেকে তাঁরা যা শুনলেন, তা-ও কম আশ্চর্যের নয়। ওই কর্মী পূর্ত-কর্তাদের মুখের উপরেই বলে দিলেন, “গুছিয়ে রাখার লোক নেই। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যা কাজ করতে হয়, তার পর আর গোছানো সম্ভব নয়!”
|
দন্ত-চিকিৎসা বিভাগে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। |
পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বিদ্যাসাগর ডিভিসন) তরুণ চক্রবর্তী অগত্যা বিএমওএইচ পম্পা রায়কেই ডেকে বলেন, “নিরাপত্তার জন্য তো সব কিছু নিয়ম মেনে করতে হবে। সেটা কী ভাবে করবেন আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে মনে রাখবেন, এটা করতেই হবে।” পম্পাদেবী বলেন, “যদিও হাসপাতালে কর্মী-সঙ্কট তীব্র, তারই মধ্যে আপনাদের পরামর্শ মানতে পদক্ষেপ করব।” ১৯৫২ সালে তৈরি হয়েছিল হিজলি হাসপাতাল। পরবর্তীকালে হাসপাতালটিকে ৬০ শয্যা-বিশিষ্ট গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু ‘উন্নত’ হয়েছে নামেই। পরিকাঠামোর সমস্যা রয়েই গিয়েছে। হয়েছে বলতে শুধু নতুন ভবন। আগের পুরনো ভবনে এখন আউটডোর, ল্যাবরেটরি। নতুন ভবনে অন্তর্বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, নার্সদের বসার জায়গা আর গুদাম। যে নতুন-ভবনে অপারেশন থিয়েটার, তার পাশেই স্টেরিলাইজেশন রুম ও প্রসূতি বিভাগ। প্রসূতি বিভাগ ও স্টেরিলাইজেশন রুমে ঢোকার মাত্র একটিই পথ। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকারও একটিই পথ। অন্য পথটি এখন বন্ধ। যে একটি মাত্র প্রবেশ-পথ, সেখানেই দাঁড় করানো কর্মীদের মোটরবাইক! নতুন ভবনের বারান্দাতেই জরুরি-বিভাগ। |
অবহেলায় পড়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার। |
খোলা জায়গায় মহিলাদের পরীক্ষা সম্ভব নয় বলে কর্তৃপক্ষ অপারেশন থিয়েটারের একটি প্রবেশ-পথ বন্ধ করে সেখানেই চেয়ার-টেবিল পেতে, কাপড়ের ঘেরাটোপে রোগী দেখার ব্যবস্থা করেছেন। আউটডোরেরও দু’টি প্রবেশ-পথের একটি বন্ধ। মহিলা ও শিশু বিভাগের দু’টি প্রবেশ-পথেরও একটি বন্ধ। শুক্রবার পরিদর্শক দল জানিয়ে দিয়েছেন, অঘটন এড়াতেই হাসপাতালে সব ক্ষেত্রেই দু’টি করে প্রবেশ পথ রাখা প্রয়োজন।
আরও মারাত্মক অবস্থা ফিউজ-বক্সের। বাক্সের দরজা খোলা। তারই পাশে ওষুধের বাক্স, পোলিও-টিকার ব্যাগ! এক জায়গায় ভাঙা জানলা-দরজা। হাসপাতালের অফিস-ঘরে গত বছর যে আগুন লেগেছিল, তা বিদ্যুতের তার থেকেই লেগেছিল বলে পরে জানা যায়। তার পর অফিস-ঘরে নতুন ওয়্যারিং হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের অন্যত্র সেই অস্থায়ী ওয়্যারিং। এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তরুণবাবুর মন্তব্য, “যা দেখলাম তাতে আগুন লাগলে মারাত্মক অবস্থা হবে। পরিদর্শনের পরে রিপোর্টও তৈরি করা হচ্ছে।” খড়্গপুর শহরে মহকুমা হাসপাতালের পাশাপাশি হিজলি গ্রামীণ হাসপাতালটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরিকাঠামো সঙ্গিন। কর্মী-সঙ্কট প্রবল। নেই কর্মী ও চিকিৎসকদের আবাসনও। আগের আবাসন ভেঙে পড়েছে। যে কয়েকটি ঘর রয়েছে, তা জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। বিএমওএইচ বলেন, “পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মহলে বার বার আবেদন করেও সুফল মেলেনি।” স্থানীয় বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপাল জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন অবহেলিত এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। |