নথিভুক্ত হাসপাতালের সংখ্যা নিয়েই বিভ্রান্তি
নিয়ম মানতে হাসপাতালগুলিকে বাধ্য করা দূর অস্ত্, কলকাতায় ঠিক ক’টি নথিভুক্ত হাসপাতাল আছে, তা নিয়েই বিভ্রান্ত স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা!
আমরি-কাণ্ডের পরে বিভিন্ন হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কি না, তা দেখতে একাধিক কমিটি গড়া হয়েছে। হাসপাতালে হাসপাতালে তদন্ত চালাচ্ছেন দমকল, পুরকর্তা ও স্বাস্থ্যকর্তারা। আর তখনই কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে গলদ রয়েছে গোড়াতেই।
স্বাস্থ্য দফতর ও কলকাতা পুরসভার নথিতে হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের সংখ্যায় বিস্তর তফাৎ! স্বাস্থ্যকর্তা ও পুর-স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারাও মানছেন, এর ফলে ঠিক ক’টি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম লাইসেন্সহীন বা লাইসেন্স নবীকরণ ছাড়া রয়েছে, কতগুলিতে অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা বা পরিকাঠামো ঠিক নেই, তা খুঁজতে সমস্যা হচ্ছে। অভিযান হবে কীসের ভিত্তিতে? তালিকার বাইরেই তো অনেক হাসপাতাল, নার্সিংহোম আছে। কোন হাসপাতালে নতুন সংক্রামক রোগ পাওয়া গেল, কোথায় রোগীদের মধ্যে কোনও ব্যাধি ছড়াল, কোন রোগে কোন হাসপাতালে কার মৃত্যু হল সেই সব তথ্যেও প্রচুর ফাঁক।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় গত বুধবারই জানান, পুরসভায় নথিভুক্ত হাসপাতালের সংখ্যা ৩৭। তার মধ্যে ১৬টির লাইসেন্স নবীকরণ হয়নি। অথচ, বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া হিসেবে নথিভুক্ত হাসপাতালের সংখ্যা ১১৭! এর মধ্যে ১৯টি সময়মতো লাইসেন্স নবীকরণ করেনি। অন্য দিকে মেয়র জানিয়েছিলেন, পুরসভার নথিভুক্ত নার্সিংহোম ২৮৯টি, তার মধ্যে ২১৮টির লাইসেন্স নবীকরণ হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে আবার তাদের লাইসেন্স পেয়েছে ২০৮টি নার্সিংহোম, যার মধ্যে ৪৪টি লাইসেন্স নবীকরণ না-করেই চলছে।
নিয়মানুযায়ী, পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স দেখেই স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতাল বা নার্সিংহোমকে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট লাইসেন্স দেয়। এত দিন স্বাস্থ্য দফতর ট্রেড লাইসেন্স থাকলেই ধরে নিত ফায়ার লাইসেন্স আছে। সে ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতালের সংখ্যা যেহেতু ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতালের থেকে কম, তা হলে ধরে নিতে হয় ট্রেড লাইসেন্স না-দেখেই বহু হাসপাতালকে লাইসেন্স দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তাদের ফায়ার লাইসেন্স, বিল্ডিং প্ল্যান দেখাই হয়নি। আবার পুর-লাইসেন্সপ্রাপ্ত নার্সিংহোমের সংখ্যা যখন স্বাস্থ্য দফতরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত নার্সিংহোমের চেয়ে বেশি, তা হলে কলকাতার বহু নার্সিংহোম ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট লাইসেন্স ছাড়াই চলছে বলা যায়।
পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যে এত ফারাক কেন? মেয়র বলেন, “ওদের আর আমাদের হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের সংজ্ঞায় অনেক পার্থক্য।” তা হলে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মের কোনটা কার ক্ষেত্রে মানা হয়? মেয়র বলেন, “ওদের তালিকা এই প্রথম পেলাম। এ বার নিজেরা আলোচনা করে সব ঠিক করে নেব।” স্বাস্থ্যকর্তারাও জানান, কোনটা হাসপাতাল আর কোনটা নার্সিংহোম, তার সংজ্ঞা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে তাদের মতপার্থক্যেই তথ্যের ফারাক হচ্ছে।
কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের নথি অনুযায়ীও তো বেশ কিছু হাসপাতাল ও নার্সিংহোম লাইসেন্স নবীকরণ ছাড়া চলছে। সেগুলির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা হচ্ছে না? স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, শহরে ১০৫৭টি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের ২০১টি এ ভাবেই চলছে। দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) হিমাদ্রী সান্যাল বলেন, “আমাদের নজরদারির লোকের অভাব। কার কখন নবীকরণ দরকার বা কে কত দিন লাইসেন্স নবীকরণ ছাড়া চালাচ্ছে, নজরে রাখা যায় না। অনেক সময়ে নবীকরণ করতে আমাদেরও দেরি হয়। ওই ভাবেই হাসপাতাল চলতে থাকে।” তা হলে ওই সময়ে হাসপাতাল বা নার্সিংহোম যে কোনও অনিয়ম করছে না বা অগ্নিবিধি ভাঙছে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? স্বাস্থ্যকর্তারা বা পুরকর্তাদের কেউই তার জবাব দিতে পারেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.