অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
ডুয়ার্সে ত্রিশটি অবৈধ চোলাই মদের কারখানা চিহ্নিত করেছে জলপাইগুড়ি জেলা আবগারি দফতর। ১৫টি কারখানা ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করা হলেও হানা দেওয়ার মতো পরিকাঠামোই নেই বলে দফতর জানিয়েছে। অতীতে ভাটিগুলিতে হানা দিতে গেলে বাসিন্দাদের বাধায় পিছু হঠতে হয়। মগরাহাটের ঘটনার পরে জেলায় চোলাইয়ের বেআইনি কারখানাগুলিতে হানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আবগারি দফতর। শুক্রবার দফতরের সব আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে স্থির হয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়ে অভিযান হবে। জেলার আবগারি আধিকারিক দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “জেলা জুড়েই চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হচ্ছে।” অভিযোগ, একাংশ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আড়াল থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে চোলাই মদের ব্যবসা। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী চা বাগান এলাকায় চোলাই তৈরিতে টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন বলেও অভিযোগ। মাঝেমধ্যে অভিযান হলেও মূল পান্ডা প্রতিবারই অধরাই থেকে যান বলে অভিযোগ। সরকারি হিসেবে গত এক বছরে দেশি মদের চাহিদা অন্তত ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে। চোলাই ব্যবসার রমরমাতেই এই পরিস্থতি বলে অভিযোগ। বিধানসভা ভোটের আগে ফালাকাটা এলাকার তিনটে চা বাগান এলাকা থেকে একদিনে প্রায় ২৮ হাজার লিটার চোলাই বাজেয়াপ্ত করেছিল জেলা প্রশাসন। আবগারি দফতরের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে কালচিনি, জঁয়গার মতো সীমান্তবর্তী জনপদ যেগুলি আবগারি দফতরের মতে অবৈধ মদের ‘স্বর্গরাজ্য’ সেই কালচিনি সার্কেলে নজরদারি চালানোর জন্য আবগারি দফতরে মাত্র এক জন আধিকারিক রয়েছেন। কোথাও আবার পুলিশের সঙ্গে একশ্রেণির চোলাই মদের ব্যবসায়ীয়ের আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ডুয়ার্সেই অন্তত ৩০টি বড় মাপের চোলাই মদ তৈরির ভাটি রয়েছে। চোলাইয়ের রমরমা চলছে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ির মতো শহর লাগোয়া এলাকাগুলিতেও। ডেঙ্গুয়াঝাড় বা করলাভ্যালি চা বাগান লাগোয়া বাজারে চোলাই মদ তৈরির কারখানা রয়েছে। শহর লাগোয়া পাদ্রী কুটির, মুন্ডাবস্তি এলাকায় প্রকাশ্যেই চোলাই মদ তৈরি হয় বলে অভিযোগ। এমনকী জলপাইগুড়ি শহরের স্টেশন, দিনবাজার এলাকাতেও চোলাই মদের ভাটি রয়েছে। ডুয়ার্সের বীরপাড়া হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন বলেন, “মাঝেমধ্যেই চোলাই খেয়ে অসুস্থ হয়ে রোগীরা ভর্তি হন। রক্তচাপ কমে যাওয়া, বমি এবং শরীরে বিষক্রিয়ার লক্ষ্মণ দেখা যায় এই রোগীদের মধ্যে।” এক বামপন্থী চা শ্রমিক নেতা বলেন, “বড় বড ব্যবসায়ীরাও টাকা খাটাচ্ছে। পুলিশের কিছুই অজানা নেই। নজরদারির অভাবেই রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে।” |