আর যেখানেই হার হোক, শিলিগুড়িতে জিতবইদলের নেতা-কর্মীদের এই ‘আত্মতুষ্টি’ শিলিগুড়িতে অশোক ভট্টাচার্যের হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে দার্জিলিং জেলা সিপিএম।
দলীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার শিলিগুড়িতে দলের দার্জিলিং জেলা সম্মেলনের প্রতিনিধিদের আলোচনায় ওই বিষয়ে অভিমত পেশ করার সময়ে একাধিক প্রবীণ নেতা বলেন, জেলার অন্য কিছু আসনে অনিশ্চয়তা থাকলেও প্রাক্তন পুরমন্ত্রীকে কেউ হারাতে পারবেন না, এমন একটা ধারণা পার্টিতে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রাক-ভোট মিটিং-মিছিলে প্রচুর লোকের জমায়েত দেখে নেতা-কর্মীদের একাংশের আত্মতুষ্টি চরমে পৌঁছয়। দলের জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনও লেখা হয়েছে, ‘ব্যাপক উন্নয়ন ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী সত্ত্বেও শিলিগুড়িতে পরাজয়ের সরলীকৃত ব্যাখ্যা ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ বলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। বিরোধী শক্তি একজোট হওয়া, সাংগঠনিক দুর্বলতা, ত্রুটি এবং আত্মতুষ্টিই বিপর্যয়ের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করেছে।’
বস্তুত, বাম জমানার সাড়ে তিন দশকে দার্জিলিং জেলায় ভোটে এমন পর্যদুস্ত আগে হয়নি সিপিএম। এ বার বিধানসভা ভোটে দার্জিলিং জেলায় একটি আসনও সিপিএম পায়নি। অথচ শিলিগুড়িতে ২০০৬ সালের ভোটে অশোকবাবু রাজ্যে রেকর্ড ব্যবধানে জেতেন। দীর্ঘদিন (২০ বছর) পুরমন্ত্রী থাকার সুবাদে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজকর্মও করেছেন তিনি। সে কথা উল্লেখ করে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “উন্নয়ন হয়েছে বলেই জয় নিশ্চিত, এটা ভাবাটা যে ঠিক নয়, তা এ বার স্পষ্ট হয়েছে। সাংগঠনিক ত্রুটি, দলের অন্দরের গোলমাল তো আছেই, মূলত ‘জিতে গিয়েছি’ গোছের মনোভাবই শিলিগুড়িতে আমাদের হারের অন্যতম কারণ। সেটা নিয়ে সকলেই খোলামেলা আলোচনা করে আগামী দিনে ত্রুটির ব্যাপারে সতর্ক থাকার ব্যাপারে দায়বদ্ধ হয়েছেন।”
পাশাপাশি, শিলিগুড়িতে যে তৃণমূলই এখন প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, সে কথাও দলের সম্মেলনের আলোচনায় উঠেছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। দলের এক জেলা কমিটির সদস্য বলেন, “এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই চালানো ছাড়া উপায় নেই। হাওয়ায় সব কিছু হয় না।”
পাহাড়ের পৃথক জাতিসত্তার বিষয়টি নিয়ে আলাদা দলিল তৈরি করে তা সম্মেলনের দলীয় প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় পাহাড়কে আনার বিষয়টি প্রায় ১০ বছর ঝুলিয়ে রাখার জন্য রাজ্য সরকারের সমালোচনাও করা হয়েছে। ঘটনা হল, ওই পর্যায়ে বেশির ভাগ সময়েই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যিনি দলের তরফে দার্জিলিং জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। এ বার জেলা সম্মেলনে বুদ্ধদেববাবু শারীরিক অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হননি বলে দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তবে ষষ্ঠ তফসিলের বিষয়টি যে কেন্দ্রের তৎকালীন কংগ্রেস জোট সরকার ও বিজেপি-র ‘বাধা’য় হয়নি, তা ভাল করে প্রচার করতে না পারাটাও দল থেকে পাহাড়ের মানুষের মুখ ফেরানোর অন্যতম প্রধান কারণ বলে জেলা সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন। |