গত বছরের প্রচুর আলু এখনও হিমঘরে মজুত রয়েছে। বাজারে আলুর তেমন দামও নেই। এই পরিস্থিতিতে এ বার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আলু চাষ কম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, বীজের দাম এ বার তুলনায় কম। সেক্ষেত্রে চাষিরা আলু চাষে উৎসাহ পাবেন বলেই মত জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকদের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তপন ভুঁইয়া স্বাভাবিক হারে আলু চাষ হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন।
ইতিমধ্যেই আলু চাষ শুরু হয়েছে জেলায়। কোথাও গাছও হয়ে গিয়েছে। জেলার একাংশে সময়ের আগেই চাষ শুরু হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্ধারিত সময়ের আগেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় আলু তুলে ফেলেন চাষিরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে গড়ে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। কৃষি দফতরের এক সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত জেলায় আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে। |
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ২০০৭-০৮ সালে এ জেলায় আলু চাষ হয়েছিল ৭৮ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে। পরের বছর ৭২ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে। ২০০৯-১০ সালে ‘রেকর্ড’ পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হয়েছিল৮২ হাজার ৮৪০ হেক্টর। গত বছর অবশ্য ৭০ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।
এ বছর সত্তর হাজার হেক্টরের চেয়েও কম জমিতে আলু চাষ হবে বলে মনে করছে কৃষি দফতরের একাংশ। কৃষি দফতরের এক সূত্রে খবর, জেলায় যেখানে গড়ে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়, সেখানে এ বার ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হতে পারে বলে দফতরের এক পরিকল্পনা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে মেদিনীপুরে (সদর) ৪১ হাজার ১০০ হেক্টর, খড়্গপুরে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর, ঝাড়গ্রামে ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর ও ঘাটালে ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি রয়েছে। মেদিনীপুর মহকুমায় সব থেকে বেশি আলু চাষ হয় গড়বেতা এলাকায়। গড়বেতা-১ ব্লকেই প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “শুরুটা দেখে মনে হচ্ছে, এ বার কিছুটা কম জমিতেই চাষ হবে। তবে, বীজের দাম কম। আশার আলো বলতে এটাই। এক বিঘা জমিতে ৪ বস্তা বীজ লাগে। এক সময় বীজের দাম অত্যন্ত বেশি ছিল। এখন ৪০০-৫০০ টাকাতেও বীজ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে, চাষ শুরু করতে অসুবিধা নেই।”
বেশি ফলন হলে স্বাভাবিক ভাবেই বাজারে দাম পড়ে যায়। তখন সংশ্লিষ্ট চাষিদের হতাশ হতে হয়। অনেকে ক্ষতির মুখে পড়েন। গড়বেতার এক চাষির কথায়, “আলুর ক্ষেত্রে কোন বছর দাম ঠিক থাকবে, কোন বছর দাম কমে যাবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। কখনও বেশি লাভ হয়। আবার, কখনও ফসল বিক্রি করে চাষের খরচও ওঠে না।” চাষের খরচ আগের থেকে বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে ক্ষতির ঝুঁকি নিতে চান না চাষিরা। শালবনির দহতে বাড়ি সমিত সাউয়ের। এ বার ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, “সারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত বছরের আলুই স্টোরে মজুত রয়েছে। তাই, এ বার বেশি জমিতে চাষ করার ঝুঁকি নিইনি।” একই বক্তব্য গড়বেতার তরুণ ঘোষ, অসিত ঘোষদের। তরুণ বলেন,“ এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতেই ১০ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়। অথচ, একই পরিমাণ জমির ফসল বেচে এই অর্থ আসে না। কখনও ৬ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কখনও ৮ হাজার টাকা।” অসিতের কথায়, “এক সঙ্গে বেশি জমিতে চাষ করলেই লাভের মুখ দেখা সম্ভব। অবশ্য ঠিকঠাক দাম পেলে তবেই। বাজার পড়ে যাওয়ার ভয়েই বেশি চাষ করতে পারছি না।” |