|
|
|
|
পাঠ্যপুস্তকের দায়িত্বে পর্ষদই |
রাজ্যের নয়া ব্যবস্থায় আতান্তরে বইপাড়া |
সায়ন্তনী ভট্টাচার্য • কলকাতা |
অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে বইপাড়া। সেই সঙ্গে তাকে জড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের রুজি-রুটি।
এর মূলে রাজ্য সরকারের পাঠ্যপুস্তক সংক্রান্ত নতুন নিয়ম। যা অনুযায়ী, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্য সব ক’টি বই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আওতায় আসবে। ২০১৩ সালে এই নিয়ম চালু হচ্ছে। গত সোমবার প্রকাশকদের কাছে
এই মর্মে নির্দেশিকা পৌঁছে যাওয়ায় রীতিমতো আতান্তরে পড়ে গিয়েছেন বইপাড়ার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০টি বইয়ের মধ্যে এখন ১১টি পর্ষদের। বাকিগুলো ছাপেন বিভিন্ন প্রকাশক। নতুন নিয়মে পর্ষদ সব বইয়েরই দায়িত্ব নেবে। পর্ষদের তরফে একটা করে নমুনা বই শুধু ছাপার জন্য প্রকাশকদের দেওয়া হবে। পরে স্কুলগুলো সরাসরি প্রকাশকদের থেকে বই কিনে নেবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পর্ষদের এক শীর্ষ আধিকারিকের ব্যাখ্যা, “বাজারে একই বিষয়ের বিভিন্ন প্রকাশকের একাধিক বই রয়েছে। সরকার চাইছে প্রতি বিষয়ের একটা নির্দিষ্ট বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দিতে। এতে পাঁচ রকম বই ঘেঁটে পড়াশোনা করতে হবে না।”
কিন্তু এখানেই উঠছে নানা প্রশ্ন। প্রথমত, প্রকাশকদের শুধু ছাপার দায়িত্ব দিলে ‘প্রকাশক’ আর ‘প্রিন্টার’-এর মধ্যে তফাতটা রইল কোথায়? দ্বিতীয়ত, স্কুল বা পর্ষদ প্রকাশকদের থেকে সরাসরি বই কিনলে রাজ্যের প্রায় ৪৫ হাজার পাঠ্যপুস্তক-বিক্রেতার চলবে কী করে? তৃতীয়ত, বই বাঁধানো,
প্লেট তৈরি, ল্যামিনেশন, প্রুফ মেলানো, প্রত্যন্ত গ্রামে বই পৌঁছানোর মতো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বই-ব্যবসায় যুক্ত কয়েক লক্ষ মানুষেরই বা কী হবে?
রাজ্যের প্রকাশক ও পুস্তক-বিক্রেতাদের সংগঠন ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল’ এ বছরেই শতবর্ষে পা দিয়েছে। আর এ বছরেই সরকারের এ হেন সিদ্ধান্তে অশনি সঙ্কেত দেখছেন সংগঠনের কর্তারা। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক রায়ের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী-সহ বিভিন্ন সরকারি মহলে তাঁরা আশঙ্কার কথা চিঠি দিয়ে জানালেও কোনও আশ্বাস পাননি। বিষয়টি নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর মহাকরণে এক বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি চৈতালী দত্ত-সহ অনেকে। কিন্তু অশোকবাবুর অভিযোগ: তাঁদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বরং তাঁদের অনুপস্থিতি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসায় বৈঠক চলাকালীনই তাঁদের ফোন করে ‘আধ ঘণ্টার মধ্যে চলে আসতে’ বলা হয়। অশোকবাবুরা তখন যান। সেখানে কী স্থির হল?
অশোকবাবু বলেন, “জানানো হয়েছে, পর্ষদ কোন প্রকাশককে ছাপার দায়িত্ব দেবে, ই-টেন্ডারের মাধ্যমে সে সিদ্ধান্ত হবে।”
এখানেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন প্রকাশকেরা। ওঁদের আশঙ্কা, ই-টেন্ডার হলে দিল্লি-নয়ডা-চেন্নাই, এমনকী বিদেশেরও বড় বড় প্রকাশক ও প্রিন্টার সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। ওঁরা নিশ্চিত নন, স্বল্প পুঁজি নিয়ে এই ‘অসম’ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে কি না। এক প্রকাশকের প্রশ্ন, “খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছেন যিনি, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বা কী করে এই পথে হাঁটছেন?”
প্রকাশকদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সুরাহার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখনও তার ইঙ্গিত মেলেনি। |
|
|
|
|
|