|
|
|
|
সম্পত্তি বিক্রির বিতর্ক বিধানসভায় |
কেন্দ্রের শর্তেই বস্তিতে ২৫% পুর অর্থ দিতে বিল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পুর বাজেটের ন্যূনতম ২৫ শতাংশ অর্থ গরিব ও বস্তিবাসীদের জন্য খরচ করতেই হবে।
জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন বা জেএনএনইউআরএমের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের এই শর্তটি মেনে নিয়ে পুর আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শুক্রবার বিধানসভায় সংশোধনী বিলটি অনুমোদিত হয়। শহুরে গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট এই অর্থ যাতে অন্য খাতে খরচ করা না-যায়, তারও সংস্থান রাখা হয়েছে পুর আইনে। এমনকী কোনও পুরসভা যদি কোনও কারণে সেই বছরের জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দ খরচ করতে না-পারে, তা হলে পরবর্তী বছরগুলিতে যাতে সেটা খরচ করা যায়, তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছে কেন্দ্র। এবং তা মেনে নিয়েই সংশোধনীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এ রাজ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুর বরাদ্দের ২৫ শতাংশ তো বটেই, কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি অর্থ গরিবদের জন্য খরচ করা হয়ে থাকে। কিন্তু কেন্দ্র যে-হেতু এই ‘মডেল’ আইনটি প্রতিটি রাজ্যের জেএনএনইউআরএমে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক ‘শর্ত’ হিসেবে পেশ করেছে, সেই কারণে পুর আইনেও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি ছিল।
এ দিন অবশ্য বিলটি পেশ করার পরেই একটি বিষয়ে আপত্তি তোলেন বিরোধী বিধায়কেরা। ‘পুর সম্পদ বিক্রয়জাত অর্থ’ প্রসঙ্গে আপত্তি তুলে বিরোধী পক্ষ থেকে বলা হয়, পুরসভার জমি বিক্রি করার কোনও অধিকার নেই। কিন্তু এই বিলের পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভার জমি বিক্রির সুযোগ থাকছে। তাঁরা দাবি করেন, বিলে ‘মিউনিসিপ্যাল অ্যাসেটস’ বা পুর সম্পদের কথাটির জায়গায় ‘মুভেব্ল মিউনিসিপ্যাল অ্যাসেটস’ বা অস্থাবর পুর সম্পদ কথাটি ঢোকানো হোক। সংশোধনী বিলটির উপরে এই মর্মে একটি সংশোধনীও আনে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম।
বিরোধীদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিরোধীদের সংশোধনীটি খারিজ করে দিয়ে বিলটি সংখ্যাধিক্যের ভোটে অনুমোদিত হয়। পরে বিধানসভার বাইরে পুরমন্ত্রী জানান, পুরসভা যে তাদের হাতে থাকা জমি বা জমি-সহ বাড়ি বিক্রি করতে পারবে না, পুর আইনে সেটা স্পষ্ট করেই বলা আছে। সেই ধারায় কোনও সংশোধনীও আনা হয়নি। পুরমন্ত্রী বলেন, “আমরা ‘মুভেব্ল’ শব্দটি বিলে ঢোকাইনি একটাই কারণে। পুরসভা এমনিতে পুরনো চেয়ার-টেবিল, পুরনো রোলার, জঞ্জালবাহী লরি ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে। কিন্তু ধরা যাক, পুরসভার একটি ফ্ল্যাট আছে এবং সেটি কোনও কাজে আসছে না। বর্তমান পুর আইনে আমরা তা বিক্রি করতে পারি। কিন্তু এখানে অস্থাবর শব্দটি ঢোকালে সেই ফ্ল্যাট বিক্রির টাকার ২৫ শতাংশ এই তহবিলে দিতে পারব না।”
সরকারি সূত্রে বলা হয়, এই বিল আনার পিছনে মূলত কাজ করেছে জে এন এন ইউ আর এমের শর্তের বিষয়টিই। ওই মিশনের অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল, ‘শহরে জমির ঊর্ধ্বসীমা’ তুলে দিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে বামপন্থী পূর্বসূরিদের পথেই চলেছে। এই শর্ত যে তারা মানবে না, তা কেন্দ্রকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র শহরে জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত আইনটি সংসদে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে অন্য সব রাজ্যই তা মেনে নিয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার বক্তব্য, আমাদের রাজ্যের বৃহত্তর অংশের মানুষের স্বার্থে যে-সব শর্ত মানা সম্ভব, সেগুলি আমরা মানব। যা আমাদের বৃহত্তর স্বার্থকে কোনও ভাবে ক্ষুণ্ণ করবে, তা মানব না।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দোহাই দিয়ে যে-কোনও প্রকল্পে কেন্দ্রের তরফে এই ধরনের শর্ত আরোপের তীব্র বিরোধিতাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ২০১২ সালের মার্চে জেএনএনইউআরএমের প্রথম পর্বের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ১ এপ্রিল শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। তার আগেই দিল্লিতে দ্বিতীয় পর্বের রাজ্য-ভিত্তিক বরাদ্দ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হবে। মিশনের আরোপিত শর্ত না-মানলে পরবর্তী ক্ষেত্রে বরাদ্দ না-পাওয়া কিংবা কম টাকা পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কার্যত সে-দিকে নজর রেখেই তড়িঘড়ি পুর আইন সংশোধনের শর্তটি মেনে নিয়ে বিধানসভায় বিল পাশ করানো হল। পুরসভার মোট বাজেট বলতে কোন কোন খাত থেকে পাওয়া অর্থকে বোঝানো হচ্ছে, নয়া বিলে তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পুরসভার নিজের রাজস্ব, বরাদ্দ রাজস্ব, কেন্দ্রীয় বা রাজ্য অর্থ কমিশনের বরাদ্দ অর্থকে যেমন এ ক্ষেত্রে ‘পুর বাজেট’ হিসেবে ধরা হবে, তেমনই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ, কেন্দ্র-রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা ইত্যাদি সরাসরি যাবে এই তহবিলে। এ ছাড়া পুরসভার কোনও সম্পদ যদি বিক্রি করা হয়, তা থেকে প্রাপ্ত অর্থের অন্তত ২৫ শতাংশ এই তহবিলে রাখতে হবে। এক বছরের খরচ না-হওয়া টাকা যাতে পরের বা তার পরের বছরগুলিতে বস্তি উন্নয়ন ও গরিবি নির্মূলের লক্ষ্যে ব্যবহার করা যায়, সেই জন্য সংশোধনীতে এই বিশেষ তহবিলকে ‘নন-ল্যাপসেব্ল’ বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|