|
|
|
|
অভিযোগে অনড় পার্থরা,
তবু ‘দরজা খোলা’ সূর্যদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও নয়াদিল্লি |
রাজ্য সরকার তথা শাসক দল বিষমদ কাণ্ডের দায় তাদের উপরে চাপালেও মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা সোমবারের সর্বদল বৈঠকে যাওয়ার রাস্তা খোলাই রাখছে সিপিএম। প্রয়োজনে তারা বৈঠকে গিয়েই পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অন্য তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যের ‘প্রতিবাদ’ জানাতে চায়। ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম বারবারই তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলের সর্বদল বৈঠকে অংশগ্রহণ না-করার প্রবণতাকে ‘হাতিয়ার’ করত। এখন তারা দেখাতে চায়, বিরোধী দল হিসাবে তারা অনেক ‘দায়িত্বশীল’। ‘পরিকল্পনামাফিক’ সিপিএমের নেতারাই মগরাহাটে চোলাই মদে রাসায়নিক মিশিয়ে বহু জীবনহানি ঘটিয়েছেন, এই অভিযোগ শুক্রবার আরও তীব্র ভাবে পেশ করেছেন সরকারের দুই বর্ষীয়ান মন্ত্রী পার্থবাবু এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তদন্ত চলাকালীন মন্ত্রীদের এমন মন্তব্য নিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বামফ্রন্টের পরিষদীয় নেতৃত্ব। বিধানসভার ভিতরে সরব হয়েছেন। কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বিষয়টি
তুলেছেন। এর পরেও তাঁরা সর্বদল বৈঠকে যাবেন? সূর্যবাবু বলেন, “সরকার কী করে, দেখা যাক। ওঁরা আরও কী বলেন, দেখি!”
প্রসঙ্গত, বিধানসভায় স্পিকারের ঘরে সর্বদল বৈঠকের দিনই প্রথমার্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর পর্ব। বৈঠকের আগে মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলেন কি না, সে দিকে নজর রাখছে বিরোধী শিবির। তার আগে আজ, শনিবার বামফ্রন্টের বৈঠকে বিষয়টি উঠতে পারে।
বস্তুত, শাসক দলের তরফে আপাতত চেষ্টা চলছে আমরি কাণ্ড মোকাবিলার ‘সাফল্য’ দিয়ে বিষমদ কাণ্ডকে ঢেকে দেওয়ার। তাই এক দিকে যেমন ‘আমরি-র ঘটনা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে সিপিএম-ই বিষমদ কাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে’ বলে তারা অভিযোগ করছে, তেমনই অন্য দিকে আমরি কাণ্ডে প্রশাসনের ‘সাফল্যে’র সমর্থনে এবং বিষমদ কাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘জনমত গড়ে তুলতে’ শনিবারই পথে নামছে তৃণমূল। রাজ্যের প্রতিটি ব্লক-সহ কলকাতার কলেজ স্কোয়ার ও হাজরা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত দু’টি মিছিল করবে তারা। আমরি কাণ্ডে জড়িতদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ ও সর্বত্র বিষমদের বিরোধিতা করা হবে সেখানে।
সিআইডি তদন্ত শেষের আগেই তৃণমূল এবং মন্ত্রীরা সিপিএমকেই দায়ী করায় সর্বদল বৈঠকে যাওয়ার অর্থ আছে কি না এ নিয়ে ফ্রন্টের অন্দরেও প্রশ্ন আছে। কিন্তু পরিষদীয় নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত সর্বদল ‘বয়কটের’ সিদ্ধান্ত নেননি। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের এক বর্ষীয়ান বিধায়কের কথায়, “দোষারোপ তো ওঁরা করেই চলেছেন! বৈঠকে গিয়ে সরকারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো এবং সরকার মানতে নারাজ হলে বেরিয়ে আসার রাস্তা
খোলা আছে।”
বিধানসভা চত্বরে পার্থবাবু, সুব্রতবাবু বা দিল্লিতে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একই সুরে তাঁদের দোষারোপ করলেও সিপিএম সেই অভিযোগকে গুরুত্ব না-দেওয়ার ‘কৌশল’ নিয়েছে। যেমন, সূর্যবাবু বলেছেন, “ওঁরা অতীতের বিরোধী ভূমিকা ভুলতে পারছেন না! তখনও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করতেন, এখনও তাই। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী বলেছিলেন, সিপিএম টালা ট্যাঙ্কে বিষ মেশাবে। সিপিএমের কর্মীরাও যে ওই জল খান, সেটা হয়তো মনে ছিল না! জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডেও একই জিনিস হয়েছিল।” বিরোধী দলনেতার আরও কটাক্ষ, “সব সময় সিপিএম-ভূত দেখছেন ওঁরা। তাই আমাদের বিধায়কেরা সরকারকে মাদুলি পরার পরামর্শ দিয়েছেন! যাতে সিপিএম-ভূত আর তাড়া করে না-বেড়ায়!”
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের জোটসঙ্গী কংগ্রেস ‘সতর্ক’ অবস্থান নিয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগের সমর্থনে এগিয়ে এসে কোনও মন্তব্য করেনি। কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের কথায়, “বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের তরফে এখনই কাউকে দোষী চিহ্নিত করার প্রশ্ন নেই।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, “তদন্ত না-করে তো কিছু বলা যাবে না। তবে অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানো উচিত।” তৃণমূলের ‘প্রাক্তন’ জোটসঙ্গী এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু অবশ্য পার্থবাবুদের মন্তব্য সম্পর্কে সরাসরিই বলেছেন, “আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। সর্বদলে ওই মন্তব্যের প্রভাব পড়তে পারে।”
দিল্লিতে বসেই এ দিন বিষমদ নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “মৃতের সংখ্যা বেড়ে কত হচ্ছে, সেই তথ্য ঘণ্টায় ঘণ্টায় জেনে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশও। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি, তাঁদের অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করা সম্ভব কি না, তা নিয়েও খোঁজখবর নিয়েছেন।” দলীয় সূত্রের খবর, মূল অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
বিধানসভা চত্বরে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু তাঁর অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সর্বদল বৈঠকের আগে এমন মন্তব্য কি আলোচনার ‘পরিবেশ’ নষ্ট করছে? পার্থবাবু বলেন, “আমরা কেউ রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে এখানে আসিনি! যা বলেছি, অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়েই বলেছি। সিপিএমের যত বড় নেতা বা ক্যাডারই হোক, তৃণমূলের সদস্য হিসেবে সরকারকে বলছি তাদের ধরতে। আমরি-র মালিকেরা সিপিএমের রাজনৈতিক বন্ধু। তাদের আড়াল করার জন্য এ কাজ করা হয়েছে। তদন্ত হলেই প্রমাণিত হবে, কারা কী ভাবে পরিকল্পনা করেছিল।” পার্থবাবুর পাশে বসে তাঁকে সমর্থন করে সুব্রতবাবু বলেন, “সরকারের শেষ দিকে সিপিএম কিছু করার জন্য পূর্ব মেদিনীপুরকে বাছত। এখন বেছে নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে (দু’টিতেই তৃণমূলের জেলা পরিষদ)! মগরাহাটে পুলিশের গুলি চালনার আগেই সিপিএম নেতারা পৌঁছে গিয়েছিলেন! এখন বিষমদ। এর পরে আরও কিছু ঘটলে আশ্চর্য হব না!” কিন্তু পুলিশি হেফাজতে থাকা আমরি-কর্তাদের সিপিএম ‘আড়াল’ করবে কী ভাবে? সুব্রতবাবুর জবাব, “আমরি-র পিছনে রাজনৈতিক মদত এখনও পুরোপুরি ধরা পড়েনি। খবর ভিতরের পাতায় চলে গিয়েছে। প্রচারও কমে গিয়েছে।” আমরি থেকে নজর ঘুরিয়ে সরকারকে ‘অস্বস্তি’তে ফেলার জন্যই সিপিএম বিষমদ কাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে বলে সুব্রতবাবুদের অভিযোগ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদীপবাবুও দিল্লিতে একই সুরে বলেছেন, “আমরি কাণ্ডে সিপিএমের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, শ্রবণ তোদি সিপিএমের সদস্য! বিব্রত সিপিএম নজর ঘোরাতেই এই ঘৃণ্য কাজ করেছে। মূল অভিযুক্ত বাদশা খোকন যে সিপিএমের লোক, তা-ও স্থানীয় মানুষ জানেন।” পার্থবাবুর মন্তব্য নিয়ে এ দিন বিধানসভার অধিবেশনে সূর্যবাবু ‘পয়েন্ট অফ অর্ডার’ তুলতে চাইলেও ওই মন্তব্য সভার বাইরের বলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা আনতে দেননি। তবে অধিবেশন চলাকালীন বিধানসভা ভবনের ভিতরে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে পার্থবাবু কী ভাবে কথা বললেন, সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন স্পিকার।
|
মৃত ১৬৮ |
• মৃত্যু ১৫ বছরের এক কিশোরেরও
• এখনও ভর্তি ২৬
• আশঙ্কাজনক ১০
• ধৃত ১৩
• সংগ্রামপুরে ভাটি ভাঙলেন বাসিন্দারা। গোচরণে ভাঙল পুলিশ।
• জেলায় জেলায় অভিযান। বর্ধমান ও পুরুলিয়ায় ধৃত ৬। |
|
|
|
|
|
|